চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত এলাকার মাঠে রাসেল ভাইপার
\ চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি \
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরের ভারত সীমান্তবর্তী মেদেনীপুর গ্রামের মাঠে একটি রাসেল ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ মেরেছে মাঠে কৃষিকাজ করা এক কৃষক। বুধবার (২৬ জুন) সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে মেদেনীপুর মাঠে সাপটি মারা হয়। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় বেশ কয়েকদিন ধরে উপজেলার সীমান্ত ইউনিয়নের মেদিনীপুর এলাকায় বসবাস করা মানুষেরা রাসেল ভাইপার সাপ আতঙ্কে রয়েছে। স্থানীয়দের দাবী এই এলাকায় প্রচুর রাসেল ভাইপার সাপ আছে। ক্ষেত খামারে বসতবাড়িতে অহরহ এই সাপ দেখা যাচ্ছে। জনৈক এক কৃষক বলেন সকালে মাঠে কাজ করতে গিয়ে দেখতে পাই একটি খেজুর গাছের গোড়ায় বেশ বড় একটি সাপ গেড় (গোল) হয়ে আছে। সাপটি দেখে আমি সরে আসি। পরে বাঁশের কাবারি নিয়ে গিয়ে সাপটি পিটিয়ে মেরে গ্রামের দিকে নিয়ে আসি। স্থানীয় যুবক প্লাবন বলেন ফেসবুকে রাসেল ভাইপার সাপ দেখেছি, এখন বাস্তবে দেখলাম। এত বড় সাপ আমাদের এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়ায় গোটা এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রান্তীক কৃষক আতিয়ার রহমান বলেন যে মাঠ থেকে এই সাপটি উদ্ধার হয়েছে, সেই মাঠে ধান, পাটসহ বিভিন্ন ফসলের চাষ হচ্ছে। এখন সাপের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় কেউ মাঠে যেতে চাচ্ছে না। এবার চাষ নিয়ে মহাবিপাকে পড়তে হবে আমাদের। জীবননগর উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ কাজল হোসেন বলেন, ‘মেদিনীপুর গ্রামের মাঠ থেকে যে সাপটি উদ্ধার করা হয়েছে, এটি আসলে রাসেল ভাইপার সাপ কি না তা নিশ্চিত করে জানা যায়নি। বন বিভাগের লোকজন সেখানে পৌঁছানোর পূর্বেই গ্রামবাসী সাপটি পুড়িয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলে। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটাই রাসেল ভাইপার সাপ। শিক্ষক ও পরিবেশকর্মী মো. বখতিয়ার হামিদ জানান, এই সাপ সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক, মানুষকে তেড়ে কামড়াতে আসে, এর কোনো প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম নেই ইত্যাদি বিষয়গুলো সঠিক নয়। আক্রমণের দিক থেকে এই সাপ গোখরো সাপেরও নিচে অবস্থান। তেড়ে কামড়াতে আসে ধারণাটিও ভুল। বরং রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া ইঁদুর ধরার জন্য এক স্থানে ঘাপটি মেরে থাকে এবং খুব ধীরে চলাফেরা করে। সাপ সাধারণত মানুষের উপস্থিতি টের পেলে সরে পড়ে। মাঠে কৃষিকাজ ও চলাফেরার সময় অসাবধানতাবশত এর শরীরের ওপর পা উঠে গেলে অথবা আঘাত পেলে আত্মরক্ষার্থে সাপ কামড় দেয়। অনেকে রাসেল’স ভাইপার বা চন্দ্রবোড়াকে অজগর বলে ধরতে যেয়েও কামড় খেয়েছে। একটু সতর্কতার সাথে চলাফেরা করলে সাপে কামড়ানোর ঝুঁকি কিছুটা হলেও কমানো যায়। কৃষিজমিতে সার বা কীটনাশক ছিটানোর সময় গামবুট ব্যবহার করা যায়। জমির আইল ধরে হাঁটার সময় লাঠি দিয়ে শব্দ করে চললে সাপ সরে যায়। প্রকৃতি থেকে ঈগল, বাজ, পেঁচা, বেজি, গুঁইসাপ, শিয়াল, বন বিড়াল, খাটাশ, মেছোবিড়াল নির্বিচারে মারার ফলে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি ও বিস্তৃতি ঘটছে। অথচ এসব পাখি ও বন্যপ্রাণী সাপ, সাপের ডিম ও বাঁচ্চা খেয়ে এদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতো।