চুয়াডাঙ্গায় করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন আরও ৯ জন : নতুন শনাক্ত ১০৬
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধিঃ
করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে ও ভাইরাস আক্রান্তের উপসর্গ নিয়ে চুয়াডাঙ্গায়
আরও ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে যে ৮জন গতকাল শনিবার
মারা গেছেন তাদের সকলেই উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি ছিলেন।
বাকি দু’জনের মধ্যে একজন আলমডাঙ্গা উপজেলার বাড়িতে ও অপরজন জীবননগর
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আইসোলেশনে থাকা অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢুলে
পড়েন। এ নিয়ে জেলায় মৃতের সংখ্যা ১শ পার। তবে স্বাস্থ্য বিভাগের হিসেবে
করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৮৫ জন। চুয়াডাঙ্গার বাইরে মারা গেছেন আরও
১০ জন। এদিকে শনিবার চুয়াডাঙ্গার আরও ১০৬ জন করোনা ভাইরাস সংক্রমিত রোগী
শনাক্ত হয়েছে। মৃত্যু এবং শনাক্তের হার ক্রমশনই ভয়ানক পরিস্থিতির দিকে
এগিয়ে যাচ্ছে। শতভাগ স্বাস্থ্য বিধি মেনে না চললে অবস্থা বেশামাল হওয়ার
আশঙ্কা করছেন অনেকে। চুয়াডাঙ্গা স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ৭৫ জন ইতোমধ্যেই
আক্রান্ত হয়েছেন বলে সিভিল সার্জন জানিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের সুমিরদিয়ার সাইফুদ্দিনের ছেলে ওদুপান ২৫ জুন
শুক্রবার সর্দি কাশি জ¦র ও শ^াসকষ্ট নিয়ে সদর হাসপাতালে আসেন। তাকে হলুদ
জোনে ভর্তি করা হয়। নেয়া হয় নমুনা। একদিন পর গতকাল শনিবার সকাল পৌনে ৮টার
দিকে মারা যান ৬০ বছর বয়সী ওদুপান। জেলা শহরের গুলশানপাড়ার আব্দুল বারীর
ছেলে ওসমান গণি সর্দি কাশি জ¦র নিয়ে শনিবার সকাল ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা
সদর হাসপাতালে যান। দুপুর ১২টার দিকে মারা যান তিনি। ৬০ বছর বয়সী ওসামন
গনি বেশ কিছুদিন ধরেই সর্দি জ¦র কাশি ও শ^াসকষ্টে ভুগছিলেন। তিনি সাবেক
ব্যাংকার। তারও নমুনা নেয়া হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকা তালতলার সৃষ্টি
কর্মকারের ছেলে বাসুদেব কর্মকার গত শুক্রবার বিকেলে সর্দি কাশি জ¦র নিয়ে
সদর হাসপাতালে আসেন। হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। ৬১ বছর বয়সী বাসুদেব
কর্মকার শনিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মারা যান তিনি। বাসুদেবেরও নমুনা
নেয়া হয়েছে। দর্শনা বাসস্ট্যান্ডপাড়ার মৃত আব্দুর রশীদের স্ত্রী রেনু
বেগম বেশ কিছুদিন ধরে সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন।
শনিবার শ্বাস কষ্ট বাড়ে। গতরাত সোয়া ৯টার দিকে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর
হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত ১০টার দিকে মারা যান ৭০ বছর বয়সী বৃদ্ধা রেনু
বেগম। দামুড়হুদার গোপিনাথপুরের আব্দুল হাসেমের স্ত্রী লাকী বেগমকে গত
বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়।
সর্দি জ¦র কাশি শ^াসকস্টে ভুগে গতকাল শনিবার সকাল সোয়া ৮টার দিকে মারা
যান ৪০ বছর বয়সী লাকী বেগম। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ডিহি কেষ্টপুরের
আনারুল ইসলামের স্ত্রী আয়েশা বেগমকে শনিবার দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর
হাসপাতালে নেয়া হয়। সার্দি কাশি জ¦র ও শ^াসকষ্টে ভুগছিলেন তিনি। তাকে
হাসপাতালের হলুদ জোনে ভর্তি করা হয়। নেয়া হয় নমুনা। রাত পৌনে ৯টার দিকে
মারা যান ৪০ বছর বয়সী আয়েশা বেগম। দামুড়হুদা জয়রামপুর গ্রামের শামীম
হোসেনের স্ত্রী মরিয়ম বেগমকে শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর
হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সর্দি কাশি জ¦রে ভুগছিলেন। শ^াসকষ্ট বেড়ে গেলে
পরিবারের সদস্যরা তাকে হাসপাতালে নেয়। শনিবার সোয়া ৪টার দিকে মারা যান ৪০
বছর বয়সী মরিয়ম বেগম।
অপরদিকে, আমাদের জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, জীবননগরে করোনা আক্রান্ত হয়ে
দুধবারী (৭৫) নামে এক বৃদ্ধ’র মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে ৫
টার দিকে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার
মৃত্যু হয়। মৃত দুধবারী ধান্যখোলা গ্রামের শিক্ষক আব্দুল মমিনের পিতা।
আব্দুল মমিন জানান, তার পিতা দুধবারী ৪-৫ দিন ধরে সর্দি-কাশি-জ্বরে
ভুগছিলেন। গতকাল শনিবার দুপুর ১ টার দিকে হঠাৎ করেই তার তীব্র শ্বাসকষ্ট
শুরু হয়। এরপর তার পিতাকে বেলা ২ টার সময় জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করানো হয়। জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. হেদায়েত বিন সেতু জানান, দুধবারীকে
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করার পর অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় ফলাফল করোনা
পজিটিভ আসে। এ সময় দুধবারীর শরীরে অক্সিজেন লেবেল একেবারে কম ছিলো। বিকেল
সাড়ে ৫ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুধবারীর মৃত্যু হয়।