ছুটিতে উড়ে বেড়াচ্ছেন সানজিদারা

Share Now..

জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা ছুটি কাটাচ্ছেন। ক্যাম্প থেকে ১৫ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ৯ দিন কাটিয়েছেন। আরও সময় আছে। ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছুটি। এত লম্বা ছুটিতে খেলোয়াড়রা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন। এমন সময় গেছেন যখন পুরো শীত। গ্রুপে আরও বেশি শীত অনুভব করছেন খেলোয়াড়রা। যোগাযোগ করা হলে তারা পালটা প্রশ্ন করে ঢাকায় এখন শীত কেমন। বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। নানা ঢংয়ে, নানা পোশাকে ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দিচ্ছেন। বেড়াতে যাচ্ছেন ছবি দিচ্ছেন।

ময়মনসিংহের কলসিন্ধুরে থাকেন জাতীয় দলের রাইট উইঙ্গার সানজিদা আক্তার। বাসায় ফিরে মায়ের ছায়াতলে রয়েছেন। বললেন, ‘পাঁচ মাস পর লম্ব ছুটি পেয়েছি। টানা পাঁচ মাস ফুটবল ক্যাম্পে ছিলাম। এশিয়ান গেমসের আগে ছুটি হয়েছিল। কিন্তু স্বল্প সময়ের জন্য। আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল। ম্যাচ না থাকলেও অনুশীলন তো আর মিস নেই। টানা ক্যাম্প চলে। এবার সিংগাপুরের বিপক্ষে দুই ম্যাচ খেলার পর পনেরো দিন ছুটি দিয়েছে।’

সানজিদা গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার পর প্রচুর দাওয়াত পান, খেতে যেতে হবে। আত্মীয়ের বাড়িতে দাওয়াত থাকে। কিন্তু সেখানে যাচ্ছেন না। কেন? ‘খাওয়া-দাওয়ায় ভালো লাগছে না। একটু বাইরে ঘোরাঘুরি করছি। সেদিন স্কুলে গিয়েছিলাম। কলসিন্ধুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠে। এখানেই স্কুল এবং কলেজে পাঠ শেষ করেছি আমি। স্কুলের সামনে একটা ছবি তুললাম—বললেন সানজিদা।’ এখন কোথায় পড়ছেন? সানজিদা বলেন, ‘এআইউবিতে পড়ছি। ইকোনমিকসে, সেকেন্ড ইয়ার।’ বাসায় কেমন লাগছে? ‘খুব কমই বের হই। ভালো লাগে না। ঘরের ভেতর মায়ের সঙ্গে আছি। মা সময় দেয় কম। কারণ ধান উঠেছে। সেগুলো গোছানো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।’ 

সানজিদার মা জ্যোত্স্না খান, বাবা লিয়াকত আলী, এখন অবসরই কাটান। জমিজমা-খেতখামারি যা কিছু আছে, সেগুলোর জন্য লোক রাখা আছে, তারা দেখাশোনা করেন। চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে সানজিদা তৃতীয়। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। সানজিদা বাসায় ফেরায় বড় বোনরা ডাকছে কিন্তু যেতে রাজি না, কেন? সানজিদা বললেন, ‘ভালো লাগে না। কোথাও যাই না। বোনরা ডাকে, বাসায় আয়। আত্মীয়স্বজন দাওয়াত করে, ঘরেই থাকি।’জানালেন, ‘মায়ের হাতের রান্না করা হাঁসের মাংস খাওয়ার অপেক্ষায় আছি। আমার খুব প্রিয়। ফুটবল ক্যাম্পে ফেরার আগে হাঁসের মাংস রান্না হবে বাসায়।’ 

রিতুপর্না চাকমা, মাসুরা পারভিন, গোলরক্ষক রূপনা চাকমা, অধিনায়ক সাবিনা খাতুনরা নিজ নিজ এলাকায় প্রজাপতির মতোই ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ঢাকা থেকে যাওয়ার সময়েই সাবিনা হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘সাতক্ষীরা যাব। ছুটি কাটাব। ফোন দিয়েন না। ব্যস্ত থাকব।’ জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক রূপনা চাকমা রাঙ্গামাটিতে রয়েছেন। গতকাল বিকালে বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকে ফোনে কথা বলেন, ‘ভাই খুব ব্যস্ত, পরে কথা বলব। খাওয়া-দাওয়া করছি। ঘুরতে বেরিয়েছি।’ গত বছর সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। সেই দলের গোলরক্ষক রূপনা চাকমা সাফের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পেয়েছেন। 

সাফের সেরা গোলরক্ষক মানে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষক। রূপনা চাকমা জানালেন তিনি যখন সাফের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার পান, তখন তিনি স্কুলের শিক্ষার্থী। এই বড় সম্মান, এলাকায় সবার চোখের মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন এসএসসি পরীক্ষার্থী রূপনা চাকমা। বলছিলেন, ‘একবার খেলার কারণে পরীক্ষা দিতে পারিনি। আগামীকাল এসএসসি পরীক্ষা দেবো। এখন ছুটি কাটাচ্ছি।’ খুব ছোট বয়সে বাবা হারিয়েছেন রূপনা চাকমা। বাসায় আছেন মা, নাম কালোসোনা চাকমা। আর আছেন ছোট ভাই। সানজিদার মতো মাংস পছন্দ করেন না রূপনা চাকমা। বললেন, ‘আমি ছোট মাছ, শাকসবজি খাই। আর কাঁঠালের তৈরি তরকারি। এটা আমাদের ধর্মের লোকেরা জানে। কীভাবে কাঁঠাল দিয়ে তরকারি করতে হয়। আপনি বুঝবেন না।’ এই সময় কাঁঠাল কোথায় পাওয়া যাবে? রূপনা চাকমা বলেন, ‘আমার খালাতো বোনকে দিয়ে আনিয়েছি। দুইশ থেকে তিনশ টাকা দিয়ে কাঁঠাল কিনে আনি।’  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *