জাতিসংঘ শান্তি কমিশনের সভাপতি হলো বাংলাদেশ
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা সর্বসম্মতিক্রমে ২০২২ সালের জন্য জাতিসংঘ শান্তিবিনির্মাণ কমিশনের (পিবিসি) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদরদপ্তরে পিবিসির চেয়ার ও ভাইস-চেয়ারদের এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। রাষ্ট্রদূত ফাতিমা হলেন পিবিসির প্রথম নারী সভাপতি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে, বাংলাদেশ বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। বিশেষ করে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অবদান রাখা এবং বিশ্বব্যাপী ‘নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডা’কে চ্যাম্পিয়ন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক বিশ্বস্ত নাম। এই নির্বাচন বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা ও বিশ্বাসেরই বহিঃপ্রকাশ, কারণ বিশ্বের অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কিছু অঞ্চলে শান্তিরক্ষা ও শান্তিবিনির্মাণে বাংলাদেশ দীর্ঘ সময়ব্যাপী তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
যখন কোভিড-১৯ অতিমারি শান্তি বিনির্মাণ ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে ঠিক তেমনই এক চ্যালেঞ্জিং সময়ে পিবিসি পরিচালনার জন্য সদস্যরাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশের প্রতি যে আস্থা ও বিশ্বাস রেখে বাংলাদেশকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করেছে, সেজন্য তাদেরকে ধন্যবাদ জানান রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন ও শান্তি বিনির্মাণের ক্ষেত্রে কোভিড অতিমারি যে প্রভাব ফেলেছে তা প্রশমিত করতে আমরা বৈশ্বিক সংহতি এগিয়ে নিতে বিশেষ মনোযোগ দেব’।
সংঘাতপূর্ণ দেশ বা অঞ্চলে শান্তিবিনির্মাণ সক্ষমতাসমূহের উন্নয়নে শান্তিরক্ষীগণ যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এবং শান্তিবিনির্মাণ কাজে যুক্ত অন্যান্য অংশীজনকে সংঘাতের মূল কারণগুলো মোকাবেলায় যেভাবে সহায়তা করছে তা স্মরণ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। এ প্রেক্ষিতে তিনি শান্তিরক্ষা এবং শান্তি বিনির্মাণ কার্যক্রমের আন্তঃসম্পর্ককে শক্তিশালী করার উপর জোর দেন।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, শান্তিরক্ষীগণ যে সকল দেশে নিয়োজিত সেই দেশসমূহের উন্নয়নে তারা যে অবদান রেখে চলেছে, শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ সবসময়ই তা গুরুত্বের সাথে মূল্যায়ন করে।
বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি শান্তিবিনির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত ও টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন এবং এক্ষেত্রে পিবিসি সদস্য ও অন্যান্য অংশীজনের সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। জাতীয় পর্যায়ে শান্তি বিনির্মাণ ও টেকসই উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে সহায়তা করতে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক/আঞ্চলিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অংশীদারিত্বের গুরুত্ব তুলে ধরেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ‘সাউথ-সাঊথ ও ট্রায়েঙ্গুলার কো-অপারেশন থেকে অনেক কিছুই অর্জন করা যেতে পারে, যেমন গুরুত্বপূর্ণ সম্পদসমূহের সঞ্চালন এবং উত্তম অনুশীলন ও উত্তম ধারণাসমূহ ভাগাভাগি করে নেওয়ার একটি প্লাটফর্ম তৈরি করা’।
শান্তি বিনির্মাণে নারী ও যুবকদের পূর্ণ, সমান এবং অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ‘নারী শান্তি ও নিরাপত্তা’ (ডব্লিউপিএস) এবং ‘যুব শান্তি ও নিরাপত্তা (ওয়াইপিএস) এজেন্ডাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহের কথা তুলে ধরেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।
সাধারণ পরিষদ, নিরাপত্তা পরিষদ, ও ইকোসককে সংযুক্ত করা এবং জাতিসংঘের গোটা ব্যবস্থাপনার সমন্বয় ও তা সক্রিয় রাখার ক্ষেত্রে সমন্বয়কারী ও মতামত প্রদানকারী হিসেবে পিবিসি’র ভূমিকা আরও সুসংহত করার উপর জোর দেন তিনি।