ঝিনাইদহের দুর্নীতিবাজরা অধরা !

Share Now..


আসিফ কাজল, ঝিনাইদহঃ
আয়ের সঙ্গে ব্যায়ের সঙ্গতি নেই, আবার নামে বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ এমন মানুষের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছি ঝিনাইদহে। যে ভাবে পারছে মানুষ টাকা লুটে নিচ্ছে। এর মধ্যে এলএমএল কোম্পানী, ই-কমার্স, অনলাইন বিজনেস ও বিট কোয়েন ব্যাবসায় অনেকে ফতুর হলেও কারো কারো গরীবের টাকায় গড়ে উঠেছে সম্পদের পাহাড়। সরকারী চাকরীজীবী, ঠিকাদার, বেসরকারী স্কুল কলেজের সভাাপতি, জনপ্রতিনিধি বা রাজনীতি ও রাজনীতি পরিবারের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবৈধ সম্পদ হু হু করে বৃদ্ধি পেলেও দুর্নীতি বিরোধী তদন্তকারী কোন সংস্থার মাথা ব্যাথা নেই। দুর্নীতি দমন কমিশন কারো কারো বিরুদ্ধে তদন্ত করে অবৈধ সম্পদের তথ্য পেলেও শাস্তি পেয়েছে এমন নজীর সৃষ্টি হয়নি। অবশ্য দুর্নীতি মামলায় বিএনপির দুই সাবেক সংসদ সদস্য মোঃ মসিউর রহমান, আব্দুল ওহাব ও শেলকুপার সাবেক পৌর মেয়র খলিলুর রহমানের জেল হয়েছে। তারা এখন উচ্চ আদালত থেকে জামিনে আছেন। তবে হাল আমলে এ অবস্থা বেশ ভয়াবহ। ছাত্র নেতরা পর্যন্ত এখন প্রাইভেট কার হাকিয়ে বেড়াচ্ছেন বলে শোনা যায়। তথ্যানুসন্ধান করে জানা গেছে, ঝিনাইদহের বেশির ভাগ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সংসদ সদস্য পর্যন্ত সবারই কম বেশি সম্পদ বেড়েছে। ভবঘুরে থেকে কতিপয় ব্যক্তি জনপ্রতিনিধি হয়ে শহর বা গ্রামে করেছেন কোটি টাকার বাড়ি। মাঠে মাঠে সম্পদ। এসব জনপ্রতিনিদের আয়ের তেমন উৎস্য না থাকলেও বিভিন্ন সময় টিআর, কাবিটা, কাবিখা, এলজিএসপি ও কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা নয় ছয় করে বিত্তশালী হয়েছেন বলে কথিত আছে। স্কুল কলেজের সভাপতি হয়ে কেও কেও রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। অন্যদিকে তৃতীয় শ্রেনীর পদমর্যাদার এমপির কতিপয় পিএসরাও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক, ব্যাংকে অঢেল টাকা ও ঢাকায় স্ত্রী সন্তানদের রেখে আলীশান জীবন কাটাচ্ছেন। অনেক এমপির ২/৩ জন করে পিএস। তরা এক একজন বিভিন্ন দপ্তর সামলাচ্ছেন। টাকা উপার্জনে পৌর মেয়ররাও থেমে নেই। পৌরসভাগুলোতে দৃশ্যমান পত্রিকায় কোন টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ছাপানো হয় না। ঢাকার আন্ডারগ্রাউন্ডস পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ছেপে যেমন নিজেরে টেন্ডার বাগিয়ে নেন। করেন নিম্নমানের কাজ। নিয়োগ বাজিন্য করতেও তারা ছাড়েন না। এ ভাবে অনেক পৌরসভার মেয়র টাকা পয়সা কামিয়ে শত শত বিঘা জমি ও তেল পাম্প করেছেন। তাদের জ্ঞাত আয় বর্হিভুত সম্পদের হিসাব দিতে হয় না। ঢাকায় উচ্চ পদে চাকরী করেন এমন অনেক ঝিনাইদহের নাগরিক জেলার বিভিন্ন মাঠে একের পর এক জমি কিনে চলেছেন। ঘুষের টাকায় এ সব জমি কিনতে তারা উচ্চ দর হাকিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতা চালাচ্ছেন। সম্প্রতি ঝিনাইদহ গনপুর্ত অধিদপ্তরের এক নির্বাহী প্রকৌশলীর ১০ কোটি টাকা লোপাটের খবর পত্রিকায় প্রকাশিত হলে দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্তে আসেন। একই ভাবে কালীগঞ্জ নিমতলা সড়কের নিম্নমানের কাজ তদন্ত করেন দুদক যশোর অফিস। ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের এক নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুদক আয়োজিত গনশুনানিতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ঠিকাদারী কাজ ও কেনাকাটার নথী তলব করে দুদক। কালীগঞ্জের এক দলীল লেখকের জ্ঞাত আয় বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের তথ্য পেয়েছে দুদক। দুই পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের তালিকা করেছে দুদক। তাদের নামে কয়টি দলিল আছে তাও অনুসন্ধান করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে প্রাথমিক অনুসন্ধান ও তথ্য নেওয়ার বাইরে তেমন আইনী পদক্ষেপ চোখে পড়ে না দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কমিশন যশোর অফিসের ডিডি নাজমুস সায়াদাত জানান, স্বপ্রণোদিত হয়ে আমাদের ব্যবস্থা গ্রহনের স্কোপ নেই। যদি কারো বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ও পত্রিকার কাটিং আসে তাহলে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করি। তিনি বলেন আমরা ঝিনাইদহের বেশ কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়ে রিপোর্ট দিয়েছি, কারো কারো বিরুদ্ধে মামলাও করেছি। দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির ঝিনাইদহ শাখার সহসভাপতি মানবাধিকার কর্মী আমিনুর রহমান টুকু বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সরকার জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল গ্রহন করেছেন। এটার চর্চা হলে ভবিষ্যতে দুর্নীতি কমতে পারে। তিনি বলেন অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রতিযোগিতা সারা দেশেই চলছে। ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতা কেও করেন না। তিনি এটাকে শয়তানী প্রতিযোগিতা উল্লেখ করে বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রে চরিত্র গঠন ছাড়া শিক্ষা, ত্যাগ ছাড়া ধর্ম, নৈতিকতাহীন রাজনীতি ও শ্রম ছাড়াই সম্পদ অর্জনের কারণে আজ বেপরোয়া ভাবে দুর্নীতি চলছে। সুশাসন ও সচ্ছ রাজনীতি এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় বলে তিনি মনে করেন। সনাক ঝিনাইদহের সভাপতি অধ্যক্ষ সায়েদুল আলম বলেন, সামাজিক অবক্ষয়ের অনেকগুলো কারণ আছে তার মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় অন্যতম। এই অধপতনের কারণে আমাদের মধ্যে সম্পদ অর্জনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা চলছে। অস্থায়ী সম্পদ নিয়ে আজ আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। কে কত বেশি উপরে উঠতে পারে সেই প্রতিযোগিতা চলছে। তিনি বলেন দুর্নীতি প্রতিরোধে যারা কাজ করেন তাদের আরো কঠোর হতে হবে। তা না হলে দেশ সমাজ ও রাষ্ট্র অধপতনে ডুবে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *