ঝিনাইদহের হাট বাজারে ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরুর গোস্ত বিক্রির অভিযোগ

Share Now..


আসিফ কাজল, ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় গরুর প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ ‘লাম্পি স্কিন ডিজিজ’ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে গরুর খামারীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। প্রাপ্ত তথ্য মতে সারা জেলায় দশ হাজারেও বেশি গরু এই রোগে আক্রন্ত হয়েছে। এর মধ্যে শতাধীক গরুর মৃত্যু হয়েছে। যদিও সরকারী ভাবে ৫০টি গরুর মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে অনেক বেশি গরুর মৃত্যু হয়েছে। অনেক খামারী ও গৃহস্থ ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরু বিক্রি করছেন কম দামে। এদিকে ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরুর গোস্ত বিভিন্ন হাটে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

‘লাম্পি স্কিন’ রোগ সারতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয় বলে গরু প্রতিপালকরা গোপনে কসাইদের কাছে কম দামে গরু বিক্রি করে দিচ্ছে। আর এই রোগাক্রান্ত গরুর গোস্ত গ্রামের বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি হচ্ছে এমন অভিযোগ উঠেছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের লিখন হোসেন বুধবার জানান, তার গোয়ালের মোট ৪টি গরুর পা ফুলে গায়ে ফোসকা বের হয়েছে। তার একটি বড় গরুর অবস্থা খুবই খারাপ। গায়ের গোস্ত পচে গর্ত হয়ে গেছে। পাঁচ হাজার টাকা খরচ করেও গরু সুস্থ হয়নি। কোটচাঁদপুর উপজেলার তালিয়ান গ্রামের কৃষক নারায়ণ বিশ্বাস জানান, তার হাল চাষের তিনটি বড় বলদের অবস্থা বেশ খারাপ। স্থানীয় চিকিৎসক দেখিয়ে ওষুধ খাওয়ানো হলেও সুস্থ হচ্ছে না। কালীগঞ্জ উপজেলার পারখালকুলা গ্রামের কৃষাণী মোমেনা বেগম জানান, তার একটি গাভী আট মাস আগে এই রোগে আক্রান্ত হলেও ভালো হওয়ার লক্ষণ নেই। শৈলকুপা উপজেলার যাদপপুর গ্রামের সাহেব আলীর দুটি গুরু ভুগছে লাম্পি স্কিন ডিজিজে। গরুগুলো সুস্থ করতে এক মাস তার চোখে ঘুম নেই। একই গ্রামের হাসনা বানু এনজিও থেকে ঋন নিয়ে তিনটি গরু কিনেছিলেন। লাম্পি স্কিন ডিজিজে সংক্রমিত হয়েছে একটি গরু। ঝিনাইদহের খামারি জাহানারা বেগম, ছবেদা বেগম, ওয়ারেশ আলী ও মখলেস শেখ জানান, এই রোগ খুবই ভয়াবহ। দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা দিতে হয় বলে অনেকেই গরু পানির দরে বিক্রি করে দিচ্ছেন। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা মনোজিৎ কুমার মন্ডল মুঠোফোনে জানান, এই রোগের ফলে গরু খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গায়ে গুটি গুটি ফোড়ার মতো হয়ে পেকে পুঁজ বের হয়। একটি গরু প্রায় এক বছর লাগে সুস্থ হতে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা মনোজিৎ কুমার সরকার বলেন, অসুস্থ গরুটিকে প্রথমেই আলাদা করতে হবে। মশারি টানিয়ে রাখতে হবে, যাতে মশা বা মাছি তার শরীরে না বসে। কেননা মশা বা মাছি অসুস্থ গরুটিকে কামড় দিয়ে যদি সুস্থ কোনো গরুকে কামড়ায় তবে সেটিও অসুস্থ হয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, জেলার ছয় উপজেলার মধ্যে ঝিনাইদহ সদর, শৈলকুপা আর হরিণাকুন্ড উপজেলায় এ রোগ বেশী ছড়িয়েছে। তবে আস্তে আস্তে সারা জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা ভ্যাকসিনেশন শুরু করেছি। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মো. মাহবুব আলম বলেন, মূলত মশা ও মাছির মাধ্যমে ভাইরাসজনিত রোগটি সারা দেশে সম্প্রসারিত হচ্ছে। আগে এ ধরনের রোগ দেশে ছিল না। লাম্পি স্কিন ডিজিজের চিকিৎসায় গোট পক্সের ভ্যাকসিন প্রাথমিকভাবে কাজে লাগতে পারে। দ্রুত রোগটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে দেশের প্রাণিসম্পদ খাত।

One thought on “ঝিনাইদহের হাট বাজারে ‘লাম্পি স্কিন’ রোগে আক্রান্ত গরুর গোস্ত বিক্রির অভিযোগ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *