ঝিনাইদহে কৃষকের ১৬৩ শতক জমির পান গাছ উপড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা
\ ঝিনাইদহ অফিস \
ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলার কাপাশাটিয়া ইউনিয়নের কেসমত ঘোড়াগাছা গ্রামে ৩ কৃষকের ১৬৩ শতক জমির পান বরজ উপড়ে দিয়েছে দুর্বত্তরা। গতকাল মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) রাতে জেলার হরিণাকুন্ডু উপজেলার কেসমত ঘোড়াগাছা গ্রামের মাঠে এ ঘটনা ঘটে। কৃষকদের দাবী দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে পান, কলা, পটলসহ বিভিন্ন ধরনের ফসলের ক্ষতি করে আসছে দুর্বৃত্তকারীরা। ওই মাঠে গত এক মাসেই ১শত ৬৩ শতক জমির পানগাছ উপড়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
সরেজমিনে হরিণাকুন্ডু উপজেলার কেসমত ঘোড়াগাছা গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সবুজে ঘেরা ফসলের মাঠ, সারি সারি পান ক্ষেত। তার ও শোলা দিয়ে ঘিরে রাখা পান ক্ষেতের ভিতরে দেখা যায়, খন্ড খন্ড পান ক্ষেতের পানগাছের গোড়া থেকে সব গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। কৃষকেরা উপড়ে ফেলা পান গাছগুলো মেরামত করার চেষ্টা করছে। কিছুকিছু পান গাছ মরে শুকায়ে গেছে। আবার নতুন করে উপড়ে ফেলা গাছগুলো থেকে পান নষ্ট হবার আগ থেকেই কিছু পান সংগ্রহ করা হচ্ছে। পান চাষিদের যে ক্ষতি হয়েছে দই-এক বছরের মধ্যে সেই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। সব মিলায়ে ওই মাঠে ১৬৩ শতক পান ক্ষেত নষ্ট হয়েছে যা টাকার পরিমানে ৪০ থেকে ৫০ লক্ষ টাকা।
হরিণাকুন্ডু উপজেলার কৃষি অফিস থেকে জানা যায়, হরিণাকুন্ডুতে ১ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে পান চাষ করেন কৃষকেরা। এই উপজেলার পান খুবই সু-দ্বাদু। যার কারনে সারা দেশে এই পানের চাহিদা অনেক। আবার কিছু বাছাই কৃত পান দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশও রপ্তানি হয়। উপজেলার কাপাশাটিয়া ইউনিয়নর কেসমত ঘোড়াগাছা গ্রামের মাঠে বেশকিছুদিন ধরে দুর্বৃত্তরা কৃষকের পান বরজের ক্ষতি করে আসছে। এতে করে পান চাষিরা আর্থিক ভাবে লক্ষ লক্ষ টাকার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্থ পান চাষী লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১১ সাল থেকে পান চাষ করি। এর আগে কখনো আমার পান বরজে কোন ক্ষতি হয়নি। আমাদের মাঠে কলা, পান, পটল ও বেগুন ক্ষেত কেটে দিতো দুর্বৃত্তরা। এবার আমাদের পান গাছ উপড়ে দিয়েছে। গত ১ মাস ধরে আমারসহ ৬জন পান চাষীর ৮ বিঘার জমির উপর পান গাছ উপড়ে দিয়েছে। আমার নিজের প্রথমে ৩৬শতক জমির পান গাছ উপড়ে দেয়, ১ সপ্তাহ পর ২০ শতক জমির পান উপড়ে দিয়েছে। আজ আবার আমার ছোট ভাইয়ের ১৮শতক এবং আমার ১৯ শতক জমির পান গাছ উপড়ে দিয়েছে। কেবা কারা এই পান গাছ উপড়ে দেয়, আমরা আবার অনেক কষ্ট করে সেই গাছ ঠিক করার পর আবারো উপড়ে দিয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, গত তারেও আমরা সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত পান বরজ পাহারা দিয়ে বাড়ি গেছি। সকালে মাঠে এসে দেখি পান গাছের গোড়া থেকে সব উপড়ে ফেলেসে। দুই-তিন বছরের মধ্যে টাকার অংকে প্রাই ৭২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কোন ভাবে পুষিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। গাছ উপড়ে দেওয়ার পর গাছে যে পান আছে বর্তমান বাজারে সেগুলো অর্ধেক দামে ৫০ টাকা পোন (৮০ পিচ পানে এক পোন) দরে বিক্রয় করতে হবে। অথচ এই পান দুই মাস পর বিক্রয় করতে পারলে ১২০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দরে বিক্রয় করা যেতো।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক মিল্টন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাজ সারাদিন বরজে কাজ করে সন্ধায় বাড়িতে গেছি। আমার কাজ মাঠে পান বরজে কাজ করা আর নামাজ পড়া। আজ সকালে মাঠে এসে দেখি পানের পাতা নেতিয়ে গেছে। পরে দেখি কে বা কারা পান গাছের গোড়া থেকে সব গাছ উপড়ে দিয়ে গেছে। এরপরই আমি হতভম্ব হয়ে গেছি। কারো সাথে কোন ধরনের শত্রæতাও নেই। গালমন্দ করবে এমন কেউ নেই যে তার সাথে আমার কোন কথা কাটাকাটি হয়েছে। তাহালে কেন আমার এমন ক্ষতি করলো। এর আগেই আমার ভাইদের পান গাছ উপড়ে দিয়েছিলো দৃর্বত্তরা। থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল, ইউনিয়ন পরিষদেও অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলাতেও জাননো হয়েছে তবুও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, ১৫/১৬ বছর ধরে আমাদের মাঠে এই ধরনের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু আজও ধরা পড়েনি কে বা কারা করছে।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক হিটলার ঢাকা পোস্টকে বলেন, কেসমত ঘোড়াগাছা গ্রামের মাঠে ৩৫ শতক জমিতে পানের আবাদ করেছি। সন্তানের মতো করে পান ক্ষেত যতœকরে রেখেছি। সামনে সিজনে ভালো দাম পাবো বলে। কিন্তু ১ মাসের মধ্যে পাশাপাশি সব বরজের পান উপড়ে দিয়েছে। আমার ক্ষেত বোঝাই পান, ৩ থেকে ৪ লাখ টাকার পান ছিলো বরজে, সেই পান গাছ সব উপড়ে দিয়েছে। কারা এই কাজগুলো করে তা আজও ধরতে পারিনি। এই নিয়ে হরিণাকুন্ডু থানাতে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। আমাদের দাবি এই কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের সনাক্ত করে আইনের আওতাই আনতে হবে এবং দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
হরিণাকুন্ডু উপজেলা কৃষি অফিসার শরীফ মোহাম্মদ তিতুমীর ঢাকা পোস্টেকে বলেন, কৃষকের বরজের পানগাছ উপড়ে দিয়েছে তারা দুর্বৃত্তকারী, এই ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। ক্ষতিপূরণ দেবার কোনো সুযোগ থাকলে, আমার দপ্তর তার পাশে থাকবে। আইনগত সহায়তার জন্য থানায় অভিযোগ করলে আমরা সার্বিক সহযোগীতা করবো। এছাড়া বরজের ক্ষতিগ্রস্ত অংশে পুনরায় চারা রোপন করতে পারলে হয়তো কিছুটা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে কৃষক।