ঝিনাইদহে প্রথম জানাযা গার্ড অব অনার প্রদান ঢাকার সাভারে দাফন আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ ক্ষনজন্মা পুরুষ নূরে আলম সিদ্দিকীর চীর বিদায়

Share Now..


আসিফ কাজল, ঝিনাইদহঃ
নূরে আলম সিদ্দিকী। একটি চলমান ইতিহাসের নাম। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর হিসেবে আন্দোলনের এক স্ফুলিঙ্গ। অনলবর্ষি বক্তা। চার খলিফার এক খলিফা হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতা সংগ্রামসহ দেশের ইতিহাস খ্যাত সব আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহন। তরুন প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা। সাফল্যের পরতে পরতে জড়িয়ে আছে যার নাম। তিনি হলেন নূরে আলম সিদ্দিকী। হ্যা, ঝিনাইদহের এই ক্ষনজন্মা পুরুষ আর নেই। বলা যায় একটি নক্ষত্রের পতন। বুধবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও বৃহত্তর যশোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক নূরে আলম সিদ্দিকী ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজীউন) মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। গতকাল বুধবার ঝিনাইদহ সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ১২ টায় হেলিকপ্টার যোগে তার মরদেহ ঝিনাইদহে আনা হয়। রাখা হয় সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। তাকে শেষবার একনজর দেখার জন্য রাজনৈতিক কর্মী, সহকর্মী, সহপাঠিসহ নানা শ্রেণী পেশার সেখানে ভীড় করেন। মুহুর্তের মধ্যে ঝিনাইদহ সরকারী বালক বিদ্যালয়ের মাঠ পরিপুর্ন হয়ে যায়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অব অনার প্রদাণ করা হয়। এর আগে তার রাজনৈতিক জীবনী নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এমপি, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মকবুল হোসেন, জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাড আজিজুর রহমান, পিপি এ্যাড ইসমাইল হোসেন ও ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাড. এম এ মজিদসহ অন্যান্যরা। জানাযা শেষে আবারো হেলিকপ্টারে তার মরদেহ ঢাকার গুলশানের আজাদ মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে তার দ্বিতীয় জানাজা শেষে সাভারে নিজের করা মসজিদের পাশে দাফন করা হয়। নূরে আলম সিদ্দিকীকে মুক্তিযুদ্ধের ‘চার খলিফার একজন’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মুজিব বাহিনীর অন্যতম কর্ণধার ও প্রাক্তন ছাত্রলীগ ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী ছয় দফা আন্দোলন, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪০ সালের ২৬ মে ঝিনাইদহে জন্মগ্রহন করেন। তার পিতার নাম নরুন্নবী সিদ্দিকী। তার বড় ছেলে তাহজীব আলম সিদ্দিকী সমি বর্তমান ঝিনাইদহ-২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে তিনি ঝিনাইদহ-২ আসন থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্যতম নেতা, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নূরে আলম সিদ্দিকীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। বুধবার (২৯ মার্চ) এক শোক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিচারণ করে বলেন, নূরে আলম সিদ্দিকী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি অবিচল থেকে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন, ছয়-দফা আন্দোলন এবং ‘৭০-এর নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে জাতির এই সাহসী সন্তানের অবদান পরবর্তী প্রজন্ম চিরকাল শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে। প্রধানমন্ত্রী তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *