ঝিনাইদহে রাতের আধারে ২ কৃষকের ফসলহানী

Share Now..

\ ঝিনাইদহ অফিস \
পরম যতেœ, সার মাটি দিয়ে এক বছর ধরে লালন পালন করে বড় করেছি। ১৫ থেকে ২০ দিন পরেই বাজারে বিক্রয় করা হবে। অথচ সকালে মাঠে আসতেই দেখি আমার সারা বছরের সব স্বপ্ন সব শেষ। রাতের আধারে শত্রæতা করে কলাগাছ থেকে সব অপরিপক্ক কলা কেটে মাটিতে ফেলে গেছে। এখন আমি কি করবো? দূর্বৃত্তরা রাতের আঁধারে দুই কৃষকের কলা, ভূট্টা ও পানের লতা কেটে দেওয়ায়, এভাবেই এক কলা এবং এক পান চাষী আন্তনাদ করছিলেন। গতকাল বৃস্পতিবার ( ১৯ ডিসেম্বর) রাতে সদর উপজেলার রাধাকান্তপুর গ্রামের মাঠে বেনজির আহমেদ শিলুর ২৫০টি কলার কাঁধি, দুই শতক ভূট্টাগাছ ও প্রতিবেশী টুলুর ৬শতক জমির পান গাছের লাতা কেটে রেখে গেছে দূর্বৃত্তরা। এই ঘটনার পর থেকে ওই মাঠের কৃষকেরা মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কৃষক বেনজির আহমেদ শিলু ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ৫নং কুমড়াবাড়ীয়া ইউনিয়নের রাধাকান্তপুর গ্রামের হেলাল মালিতার ছেলে ও টুলু একাই গ্রামের আজিম উদ্দীনের ছেলে। তাদের দুজনের দাবী গ্রামের কিছু মানুষের সাথে তাদের পূর্বের শত্রæতা। প্রকাশ্যে তাদের কোন ক্ষতি করতে না পেরে রাতের আধারে ফসলের এমন ক্ষতি করা হয়েছে।
সরেজমিনে রাধাকান্তপুর গ্রামের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, নবগঙ্গা নদীর তীরে শিলুর দুই বিঘা জমিতে অপরিপক্ক কলা, তার পশেই ভূট্টা ক্ষেত। কলা গাছের থেকে অপরিপক্ক কলা কেটে মাটিতে ফেলে রাখা। দূর থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই কলাগাছ থেকে কলা কেটে আলাদা করে রাখা হয়েছে। তার পাশেই দুই শতক ভূট্টা গাছের গোড়া থেকে কাটে ফেলা। মাঠের অপর প্রান্তে টুলুর ১২ শতক পান বরজের মধ্যে ৬শতক জমির পান গাছের গোড়া থেকে লতা কেটে রাখা। এতে দুই কৃষকের প্রাই সাড়ে তিন লাখ টাকার ক্ষতি হতে পারে
বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাঠের কৃষকদের থেকে জানা যায়, এর আগেও ওই মাঠে বিভিন্ন সময়ে কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে।
প্রতিবেশী কৃষক কামরুল ঢাকা পোস্টকে জানান, একই মাঠে তার কলা ও ভূট্টার চাষ আছে। সকালে মাঠে এসে দেখেন শিলুর কলাগাছ থেকে কলা কেটে মাটিতে ফেলে রেখে গেছে দূর্বৃত্তরা। কলা ক্ষেতের পাশেই ভূট্টা ক্ষেত সেখানেও দুই শতক জমির ভূট্টা গাছ কেটে রেখে গেছে। এই মাঠের সব কৃষকেরা অসহায়, সবাই নিরাপত্তাহিনতাই ভুগছে। যারা এই কাজের সাথে যারা জড়িত তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতাই আনার দাবী করেন তিনি।
প্রতিবেশী সেলিক জানান, গ্রামের দুই জন কৃষকের ২৫০টি কলা, দুই শতক ভূট্টা ও ৬শতক জমির পান গাছ রাতের আধারে কেবা কারা কেটে দিয়ে গেছে। এটা খুবই দুঃখজনক।
পান চাষী টুলু বলেন, এনজিও থেকে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়ে এই পান বরজ দিয়েছি। প্রথম বছরেই পানের আবাদ ভালো হয়েছে। এই পানের উপর এখন সংসার এবং এনজিও কিস্তির টাকা আসে। সকালে বরজে কাজ করতে এসে দেখি পান গাছের গোড়া থেকে সব লতা এক ফুট, দুই ফুট করে কাটা। গ্রামের কিছু মানুষের সাথে আমাদের ঝামেলা আছে। আমাদের ধারণা হয়তো তারা প্রকাশ্যে কোন ক্ষতি করতে না পেরে, রাতের আধারে পানের গাছ কেটে দিয়ে গেছে। আমরা চাই তদন্ত করে আসল দোষীকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।
কলা চাষী বেনজির আহমেদ শিলু বলেন, ৭টি কলা বিক্রয় উপযোগী হওয়ায় গতকাল প্রতিপিচ ২৭০ টাকা দরে বিক্রয় করেছি। সকালে ব্যাপারির কলা কাটতে আসার কথা, এজন্য আমওি আসছি কলা দেখতে যেন অপরিপক্ক কলা যেন না কাটে। বাগানে আসতেই দেখি, গাছ থেকে কলা কেটে কে বা কারা মাটিতে ফেলে রেখে গেছে। প্রতিটি গাছের মাথা থেকে কলা কাধিসহ কেটে ফেলে রাখা। আবার পাশেই ভূট্টা ক্ষেত সেখানেও দুই শতক জমির ভূট্টা গাছ কাটা।
আরো বলেন, আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে গ্রামের কিছু মানুষের বিরোধ আছে। কিছু দিন আগেও তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। তারা বিভিন্ন সময় হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। আমাদের ধারণা তারাই শত্রæতা করে কলা ও ভূট্টা গাছ কেটে দিয়েছে। আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইন শৃংখলা বাহিনীর কাছে দাবী সঠিক তদন্ত করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনা হোক। এ কাজের সাথে যেই থাকুক সঠিক বিচার চাই।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ নূর-এ-নবী বলেন, রাধাকান্তপুর গ্রামে দুইজন কৃষক ভাই, শিলু ও টুলু। কৃষক শিলুর দেড় বিঘা জমির ফলন্ত কলা গাছ না কেটে দুর্বৃত্তরা কলার কাধি কেটে ফেলে রেখে গেছে, যেটা অপরিপক্ক। বাজারে বিক্রয় করার কোন সুযোগ নেই। উনার ৪০০ কলা গাছের মধ্যে ২৫০টি গাছের কলা কেটে নিচে ফেলেছে এবং বাকি অর্ধেক নষ্ট করে রেখে গেছে। অপর পান চাষী টুলুর ৬ কাঠা জমির পান বরজের মধ্যে ৩ কাঠা পানের লতা কেটে দিয়েছে। দুইজন কৃষক ভাইয়েরই অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কৃষি অফিস থেকে প্রণোদনার মাধ্যমে তাদের সহযোগীতা করার চেষ্টা করা হবে। পাশাপাশি স্থাণীয় প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সাথে কথা বলে তাদের যদি কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় সেটাও চেষ্টা করা হবে।
আরো বলেন, একজন কৃষক এতা কষ্ট করে নিজের সন্তানের মতো করে লালন পালন করে একটা গাছ বড় করে। একজন মানুষ কিভাবে কৃষকের এমন ক্ষতি করতে পারে। আইন শৃংখলা বাহিনীর যারা আছেন, তাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, তারা যেন এই কৃষক ভাইদের পাশে দাড়াই এবং অন্যায় কারীদের শাস্তির আওতায় আনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *