ঝিনাইদহ জেনারেল হাসপাতালে কেনাকাটায় দুই কোটি ৯ লাখ টাকার অডিট আপত্তি, সাড়ে ১৩ টাকার ট্যাবলেট কিনেছেন সাড়ে ২৩ টাকায় !

Share Now..

\ স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ \
ঝিনাইদহ আড়াই’শ বেড জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত¡াবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলামের বিরুদ্ধে দুই কোটি ৯ লাখ টাকার অডিট আপত্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য অডিট অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে ২০২৪-২০২৫ নিরীক্ষা অর্থ বছরের জন্য গঠিত নিরীক্ষা দল ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের বিল ভাউচার, চুক্তি কার্যাদেশ, ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মেমো, ডেলিভারি চালান, ভ্যাট চালান, ইডিসিএলের মুল্য তালিকা ও ব্যয় বিবরণী পর্যালোচনা করে এই আপত্তি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাইমিনুল ইসলামের তত্ত¡াবধানে এই অডিট কর্যক্রম পরিচালিত হয়। অডিট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরের ওষুধ ও অস্ত্রপচার সরঞ্জামাদি (এমএসআর) কেনার জন্য ৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এই বরাদ্দ থেকে ৬৫% অর্থ ব্যয়ে ওষুধ কেনার সরকরী নির্দেশনা থাকলেও সাবেক তত্ত¡াবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বিধি বহির্ভূতভাবে ৯১.৯২% টাকা ব্যয়ে কেবল ওষুধ ক্রয় করেছেন। এতে সরকারের এক কোটি ৩৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এছাড়া তিনি প্যারাগন নামে একটি ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বেশি দামে মন্টিলুকাস ও ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কিনেছেন। কিন্তু ওই দুইটি ওষুধ সরকারী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাসেনশিয়াল ড্রাগ (ইডিসিএল) থেকে কেনার নির্দেশনা ছিল। অডিট প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারী ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) থেকে ১০ টাকা ৬৭ পয়সা দরে মন্টিলুকাস ও ২ টাকা ৯২ পয়সা দরে ৫০০ মিলিগ্রামের ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ক্রয়ের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু হাসপাতালটির তৎকালীন তত্ত¡াবধায়ক নিয়মবহির্ভূত ভাবে বেসরকারি ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্যারাগন এন্টারপ্রাইজ থেকে ১৫ টাকা ৮৪ পয়সা দরে মন্টিলুকাস ও ৭ টাকা ৯০ পয়সা দরে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কিনেছেন। এই খাতেই অতিরিক্ত নিয়মবহির্ভূত ব্যয় হয়েছে ৩০ লাখ ৫১ হাজার টাকা। অডিটের তথ্যমতে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জিএফআর অনুচ্ছেদ ১০(২) অনুসারে, ব্যয় প্রাইমানিক চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়া উচিত নয়। সাধারণ আর্থিক বিধির বিধি-১২ ধারা অনুযায়ী, প্রয়োজন মুল্যায়নের চেয়ে বেশি ক্রয়েরও কোনো অনুমতি নেই। কিন্তু কোনো নিয়মেরই তোয়াক্কা করেননি সাবেক হাসপাতাল প্রধান ডাঃ সৈয়দ রেজাউল। আসবাবপত্র কেনার ভ্যাট কর্তনেও বড় রকমের অনিয়ম করেছেন তিনি। আসবাবপত্র কেনার পর ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট কর্তনের সরকারী বিধান থাকলেও তিনি আসবাবপত্র সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারমাইন এন্টারপ্রাইজ বিল পরিশোধের সময় ভ্যাট কর্তন করেছে মাত্র ৭.৫ শতাংশ। ফলে সরকার রাজস্ব হারিয়েছে প্রায় ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা। এছাড়া প্রয়োজন মুল্যায়ণ ছাড়াই তিনি ভোগ্য জিনিস কেনায় ৪৪ লাখ ৩১ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করেছেন। অডিট আপত্তির বিষয়ে ঝিনাইদহ আড়াই’শ বেড জেনারেল হাসপাতালের সাবেক তত্ত¡¡াবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি হাসপাতাল ও ঝিনাইদহবাসির প্রয়োজনে এই অতিরিক্ত ব্যয় করেছেন, তবে তিনি সরকারী টাকা আত্মসাৎ করেননি। অডিট আপত্তির জবাব দিলেই বিষয়টি নিস্পত্তি হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। ঝিনাইদহ আড়াই’শ বেড জেনারেল হাসপাতালের বর্তমান তত্ত¡াবধায়ক ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এ বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে একটি জবাব দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *