ঝিনাই নদী এখন মরা খাল, সুযোগ নিচ্ছে ভূমিদস্যুরা

Share Now..

প্রবীণদের কাছ থেকে জানা গেছে, আগে এই নদীতে প্রচুর ঝিনুক পাওয়া যেতো বলেই নদীর নামকরণ হয়েছে ঝিনাই নদী। ঝিনাই নদী মূলত পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের একটি শাখা। ১৯৩৮ সালের ব্রিটিশ সরকার জামালপুর-বাহাদুরাবাদ ঘাট রেললাইন স্থাপনের সময় খরস্রোতা ঝিনাই নদীর ওপর একটি রেলওয়ে ব্রিজ নির্মাণ করেছিল। ব্রিজের নাম দেওয়া হয় ঝিনাই ব্রিজ।

১৯৭১ এ মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝিনাই ব্রিজের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্বাধীনতার পর ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামত করা হয়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে যখন নদীতে তীব্র স্রোত থাকত, তখন এই ব্রিজের ওপর দিয়ে রেলগাড়ি খুব ধীরে চলত। সে সময় বড় বড় পাল তোলা নৌকা চলাচল করত।

জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ এই তিন উপজেলার ১২ লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতে একমাত্র ভরসা ছিল ইঞ্জিনচালিত বিশাল আকারের ফেরি। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই খরাস্রোতা ঝিনাই নদীর আগের জৌলুস আর নেই। ১৩৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের সর্পিলাকার প্রকৃতির ঝিনাই নদীর গড় প্রস্থ ৭৬ মিটার। ব্রহ্মপুত্র থেকে শুরু হয়ে ঝিনাই নদী জামালপুর হয়ে টাঙ্গাইলের বংশী নদীর মোহনায় গিয়ে মিলিত হয়। এক সময় এই নদীর পানি দিয়ে দুপাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকার জমি চাষাবাদ করা হতো। খরস্রোতা ঝিনাই নদী শুকনো মৌসুমে মরা খালে পরিণত হয়। বর্ষায় তেমন উল্লেখযোগ্য মাত্রায় পানি প্রবাহিত হয় না।

হাটচন্দ্রা এলাকার শতবর্ষী ইদ্রিস আলী, কম্পপুর এলাকার পচাত্তরোর্ধ আবুল হোসেন বলেন, আমি ছোটবেলায় দেখেছি এবং শুনেছি ঝিনাই নদীতে কুমির ছিল, শুশুকেরও দেখা মিলত। এছাড়া পাল তোলা নৌকা চলত। এখন নদীতে পানি নেই, মরুভূমি হয়ে গেছে।

এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, নদীর মুখে পলি জমে নদীটি ভরাট হয়ে গেছে। এছাড়া একশ্রেণির ভূমিদস্যু সুযোগ বুঝে নদীর প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করে দখলে নিয়ে সেখানে নানা স্থাপনা নির্মাণ করে যাচ্ছেন।

কম্পপুর এলাকার লেবু মিয়া, রশিদপুর এলাকার আব্দুর রাজ্জাকের মতে, জরুরি ভিত্তিতে নদীটি খনন করা প্রয়োজন।

এ ব্যাপারে জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ঝিনাই নদী পুনঃখনন প্রবাহ সচল করার জন্য ইতোমধ্যে বিআইডব্লিউটিএ একটি সমীক্ষা করেছে। তারা যদি এ বিষয়ে কোনো প্রকল্প গ্রহণ না করে, তাহলে পরবর্তী সময়ে নতুন করে প্রকল্প গ্রহণ করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *