ট্রেনিং ও ডেপুটেশনে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট
\ বিশেষ প্রতিনিধি, শৈলকুপা \
ঝিনাইদহের শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একের পর এক বদলী, ট্রেনিং ও ডেপুটেশন জনিত কারণে চরম চিকিৎসক সংকট দেখা দিয়েছে। শৈলকুপা উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এই উপজেলায় প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একমাত্র হাসপাতালে সবসময় ধারণক্ষমতার চেয়ে তিনগুণ রোগী বেশী থাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।আবার অন্যদিকে বদলী, ডেপুটেশনের কারণে চিকিৎসক সংকটে রোগীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। এছাড়াও চিকিৎসক সংকটের কারণে প্রায় ২ মাস ধরে সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় চরম দূভোগে পড়েছে সাধারন অসহায় গরীব রোগীরা। জনবহুল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দ্রুত শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগ ও ডেপুটেশনে বদলী চিকিৎসকদের ফিরিয়ে এনে উন্নত সেবা নিশ্চিত করতে এলাকাবাসীরা দাবী জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কনসালট্যান্ট, মেডিসিন, সার্জারি, প্রসূতি ও শিশু বিশেষজ্ঞসহ চিকিৎসকদের সব পদই শূন্য রয়েছে। আবার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ১৬ জন কাগজে কলমে দেখানো হলেও বাস্তবে চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ৬ জন বাকী ৩জন মেডিকেল অফিসার ট্রেনিং, ৪ জন মেডিকেল অফিসার ডেপুটেশনে ও ২জন মেডিকেল অফিসার ছুটিতে ও ১জন মেডিকেল অফিসার সাসপেন্ড এ আছেন বিধায় চরম ডাক্তার সংকট দেখা দিয়েছে। আবার ডিউটিতে স্বল্প সংখ্যক চিকিৎসক থাকায় তাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়।এত ডাক্তার সংকটের পরেও একের পর এক ডাক্তার ডেপুটেশনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জেলাতে। এদিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দিকে কোন খেয়াল নেই সংশ্লিষ্ট কমকতাদের। এছাড়াও চিকিৎসক স্বল্পতার কারণে হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ও আউটডোর সেবা মেডিক্যাল অফিসাররা সামাল দিতে না পারায় উপসহকারী মেডিকেল অফিসারদের উপর ভরসা করতে হচ্ছে সাধারণ রোগীদের। এত চিকিৎসক সংকট থাকার পরেও সম্প্রতি ডাক্তার সোহেলী ইসলামকে ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালে ডেপুটেশনে বদলি করা হয়েছে।যিনি প্রতিনিয়ত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সিজারিয়ান অপারেশন করলেও এখন তা বন্ধ রয়েছে যার ফলে অসহায় গরীব মানুষেরা চরম সমস্যায় পড়েছে। আর এভাবেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে শৈলকুপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
ইমারজেন্সিতে কর্তব্যরত ডাক্তার শাহানেওয়াজ ইবনে কাসেম জানান প্রতিদিনই এখানে ৬০ থেকে ৭০ টা রোগী ভর্তি দিতে হয় এবং ভর্তি ছাড়াও অনেক রোগী বিভিন্ন রোগ নিয়ে এখানে আসে । ডাক্তার সংকটের কারণে এত রোগী সামাল দেওয়া খুবই কষ্টসাধ্য।
সিজারিয়ান অপারেশন করতে আসা পৌর এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম বলেন, সিজার করতে এসেছিলাম হাসপাতালে এখন এসে দেখি অপারেশন বন্ধ রয়েছে, শুনলাম ডাক্তার নেই।আমরা গরীব মানুষ বাইরে অপারেশন করার মত কোন টাকা নেই।
হাসপাতাল আউটডোরে সেবা নিতে আসা রহিমা বেগম নামে এক রোগী বলেন, হাসপাতালে এমবিবিএস ডাক্তার নেই বললেই চলে। আমরা মেডিকেল অফিসারের বিকল্প হিসাবে উপ সহকারী মেডিকেল অফিসারকে দেখালাম। হাসপাতালে চরম ভীড়,চরম ডাক্তার সংকট রয়েছে, আমরা ডাক্তার চাই।
ডাঃ সোহেলী ইসলাম বলেন, আমি বেশকিছুদিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেস্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসারের আদেশে সিজারিয়ান অপারেশন করেছি। এখন অপারেশন বন্ধ রয়েছে।গত সোমবার আমাকে ঝিনাইদহ শিশু হাসপাতালে বদলীর আদেশ দেওয়া হয়েছে। আমার সাজারীর উপর ট্রেনিং থাকলেও আমাকে দেওয়া হয়েছে শিশু হাসপাতালে। শিশুদের উপর আমার কোন অভিজ্ঞতা নেই।
উপজেলা চেয়ারম্যান এম হাকিম আহামেদ বলেন, উপজেলাতে ডাক্তার সংকট রয়েছে এঁটা জানি তবে যে সমস্থ ডাক্তারদের ডেপুটেশনে অন্যত্র বদলী করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কমকতাদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে ফিরিয়ে আনার জন্য আপ্রান চেষ্টা করবো।
ঝিনাইদহ সিভিল সাজন শুভ্রা দেবনাথ বলেন, ঝিনাইদহ জেলা শহরের ২৫০ শয্যা ও শিশু হাসপাতালে ডাক্তার সংকট হওয়ায় আমরা উপজেলা থেকে ডাক্তার ডেপুটেশনে আনছি। শৈলকুপাতে ডাক্তার সংকটের ব্যাপারে এমপি সাহেব সুস্থ্য হয়ে ফিরে আসলে স্বাস্থ্য কমিটির মিটিংয়ে প্র¯তাবনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।