ডাক্তারের কাজ করেন সুইপার-বাবুর্চি

Share Now..

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ১৫ শয্যার জন্য যে জনবল, সেই একই জনবল দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার এ হাসপাতাল। জনবল সংকট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, চিকিত্সা দিচ্ছেন সুইপার ও বাবুর্চি।

গতকাল মঙ্গলবার (৭ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পান, জরুরি বিভাগে এক জন রোগীর ড্রেসিং করছেন সুরুজ নামের এক জন বাবুর্চি। ঐ সময় জরুরি বিভাগে আরও চার জন রোগী চিকিত্সার জন্য আসেন। হাসপাতালে কর্মরতদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোগীদের প্রচণ্ড চাপে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, দীর্ঘদিন ধরে সুইপার ও বাবুর্চিরাও ডাক্তারের কাজ করে আসছেন। শুধু দাউদকান্দি নয়, সারা দেশের ৪৯২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিত্সাসেবার এমন বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।
তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবার এই অব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী কে? ভুল চিকিত্সায় রোগী মারা গেলে তার দায়ভার কে নিবেন? বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, এর জন্য তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর দায়ী হওয়ার কথা না। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো অব্যবস্থাপনা আছে কি না তা দেখভালের দায়িত্ব মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ও সিভিল সার্জনদের। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার অব্যবস্থাপনা দেখে মনে হয়, যেন এর দায়ভার নেই কারোরই। ডাক্তারের কাজ সুইপার ও বাবুর্চিদের দিয়ে করানো হচ্ছে—এগুলো কি তারা দেখেন না? তারা কি অন্ধ?জনগণের হাতের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার ওয়ার্ড পর্যায়ে হেলথ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে, যেখানে এক জন মেডিক্যাল অফিসার আছেন। আর উপজেলা পর্যায়ে আছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা পর্যায়ে আছে জেলা সদর হাসপাতাল। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের এই স্বাস্থ্যসেবার অবকাঠামো পুরোপুরি সচল থাকলে এবং সঠিকভাবে কাজ করলে সাধারণ রোগীদের পাশাপাশি মহামারিকালে করোনা রোগীরাও সুচিকিত্সা পেতেন। কারণ জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলায় ব্যথা—করোনা এসব উপসর্গভিত্তিক চিকিত্সা প্রটোকল অনুযায়ী প্রাথমিক চিকিত্সা দিলে ভালো হয়ে যায়। এক জন মেডিক্যাল অফিসার এই চিকিত্সা দিতে পারেন। লকডাউনের পাশাপাশি তৃণমূলের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতে প্রাথমিক চিকিত্সা দেওয়া হলে করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতো।সারা দেশে ৩১ শয্যার ৪৯২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। পরবর্তী সময় কোনো কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। কিন্তু জনবল বাড়ানো হয়নি। বেশির ভাগ হাসপাতালে ৩১ শয্যার জনবল নেই। যে জনবল রয়েছে তা নিয়ে ১৫ শয্যার একটি ক্লিনিকের চিকিত্সাসেবা দেওয়া সম্ভব। এই সীমিত জনবল দিয়েই চলছে সারা দেশের ৫০ ও ১০০ বেডের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *