তাপদাহে পুড়ছে ঝিনাইদহ, জেলা জুড়ে শতশত নলকূপ অকেজো, পানি সংকট

Share Now..

\ ঝিনাইদহ অফিস \
তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে ঝিনাইদহ। পুড়ছে ফসলের মাঠ। হাসফাস করছে প্রাণীক‚ল। সেইসাথে যুক্ত হয়েছে পানির সংকট। হস্তচালিত নলক‚প এবং গভীর নলকুপে (স্যালো মেশিন) পানি উঠছে না। গৃহস্থালি ও মাঠে কৃষক উভয়ই পানি সংকটে পড়ছে। সরেজমিন দেখা যায়, ঝিনাইদহের বাজার গোপালপুর মাঠে স্যালোইঞ্জিন চালিয়ে ধান ক্ষেতে সেচ কাজ করেন ইবাদত হোসেন। দুই সপ্তাহ আগেও তাঁর সেচ পাম্পে পর্যাপ্ত পানি উঠত। এখন ৪ থেকে ৫ ফুট মাটির গভীরে মেশিন বসিয়েও পানি উঠছে না। ভারি বৃষ্টি না হলে ইবাদতের মতো ঝিনাইদহের হাজারো কৃষক জমিতে পানি নিয়ে বিপাকে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবার হস্তচালিত টিউবওয়লে একইভাবে পানি উঠছে না। বেশ কয়েক বছর জেলায় প্রায় ৫০ হাজার টিউবওয়েলে কম পানি উঠছে। ভূক্তভোগীরা বলছে, ইরি ধানের সেচ কাজে এবং পুকুর খনন করে মাছের চাষের জন্যে মাত্রাতিরিক্ত ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করায় পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার নবগঙ্গা নদী , চিত্রা নদী, কুমার নদসহ বেশির ভাগ বিল-ঝিল, জলাশয় ও পুকুর-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। বিশেষ করে জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর প্রায় ৮০ শতাংশ পানি শুকিয়ে গেছে। এসব নদীর তলদেশে কৃষকরা এখন ধান চাষ করছেন। জানা যায়, জেলার ছয় উপজেলায় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক নলক‚পে পানি কম উঠছে। সাধারণত ২০ থেকে ৩০ ফুট নিচে পানির স্তর পাওয়া যায়। কিন্তু এখন ৩০ থেকে ৩৫ ফুট নিচেও পানির লেয়ার মিলছে না। জেলা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বলছে, অনুমতি ছাড়া ব্যক্তি উদ্যোগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক হাজার গভীর ও অগভীর নলক‚প বসানো হয়েছে। এসব নলক‚প থেকে নিয়ম না মেনে পানি উত্তোলন করায় স্তর নেমে যাচ্ছে। বাজার গোপালপরের ইলেকট্রিকশেয়ান হুমায়ুন কবির ঢাকা পোস্টকে জানান, বর্তমান প্রতিদিন ৫ থেকে ৬ জন জানাচ্ছেন তার টিউবওয়েলের মোটরে পানি উঠছে না। কিন্তু এর কোন সমাধান দিতে পারছি না। বৃষ্টি হলে সমস্যা স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন। সদর উপজেলার হলিধাণী এলাকার কৃষক বাবলু মিয়া ঢাকা পোস্টকে জানান, দিনের বেলায় ধান ক্ষেতে পানি দিতে পারছি না। একদিকে প্রচন্ড গরম অন্যদিকে পানির অনেক নিচে নেমে গেছে। বাধ্যা হয়েই গভীর রাতে ধানক্ষেতে পানি দিতে হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলাজুড়ে কত হাজার বেসরকারি বা ব্যক্তি উদ্যোগে নলক‚প রয়েছে, তা আমাদের পরিসংখ্যানে নেই। তবে সরকারিভাবে জেলায় ১৭ হাজার গভীর ও ১৮ হাজার অগভীর নলক‚প রয়েছে। এসব নলক‚পে পানির স্বাভাবিক অবস্থা রয়েছে। প্রকৌশলীদের পরামর্শ নিয়ে নলক‚প স্থাপন করলে শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট কমবে। ঝিনাইদহ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (ক্ষুদ্রসেচ) মো. জাহিদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, সময়টা এখন শুষ্ক এবং উষ্ণকাল। এসময় নদ-নদীর পানি কমে আসে। যে কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নেমে যায়। তাই এসময় পানি ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়ম মেনে পাম্প স্থাপন করলে পানির সংকট কমবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *