তারকাদের ব্যক্তি সাফল্য বনাম দেশীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি!

Share Now..

গত অতিমারিতে পুরো বিশ্ব যখন নিজেদের ছবির বিপণনকে আমূল বদলে ফেলেছেন, ঠিক তখন বাংলা চলচ্চিত্র আটকে ছিল শিল্পী সমিতির কোন্দল নিয়ে। মূলধারার বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র পথ হারিয়েছে অনেক আগেই। তারই শেষ পেরেক যেন ঠুকছিল একাধিক সংগঠনের নানা যুক্তিহীন বাহাস।

এদেশে সিনেমা ব্যবসাসফলতার একমাত্র অঙ্ক শাকিব খান। সেই শাকিব খান যখন গ্রিন কার্ডের আশায় যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি দেন। দীর্ঘদিনের জন্য দেশ ছাড়া হন। হাতে বেশ কিছু ছবিও তখন চলছিল তার। তারই একটি ছবির ডাবিং করতে ছুটে যেতে হয়েছে খোদ নির্মাতাকেও। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েই আন্তর্জাতিক ছবি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন শাকিব খান। আমেরিকান প্রবাসী এক নির্মাতার নতুন ছবির নাম ‘রাজকুমার’।
ছবিতে শাকিব খানের বিপরীতে কাজ করছেন আমেরিকান এক অভিনেত্রী। সেই ছবির সফলতা ব্যর্থতার হিসেব অনেক দূরের গল্প। সুপারস্টার থেকে শুরু করে তারকাশিল্পীরা এখন তাদের ক্যারিয়ারের সফলতার সূচক খুঁজছেন দেশের গণ্ডির বাইরে। শিল্পীদের কোনো দেশ নেই। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আমাদের নিজস্ব চলচ্চিত্রের অবকাঠামোও পাল্টানোর জন্য তারকা, নির্মাতা প্রযোজকের প্রয়োজন। কারণ রিজিওনাল মুভি হিসেবে ছোট্ট একটা গণ্ডির সিনেমা থেকে আজ শুধু ভারত না, গোটা বিশ্বের সিনেমা ব্যবসায় তাক লাগিয়ে দিয়েছে দক্ষিণী নির্মাতা-অভিনেতারা। পুষ্পা ছবির ব্যবসার কাছে তাই হেরে যায় স্পাইডার ম্যান-এর বিপণন। ট্রিপল আর, কেজিএফ টু যারা নির্মাণ করেছেন বা যারা অভিনয় করেছেন তারাও এক সময় ছিলেন ভীষণ অবহেলিত। কিন্তু তারা অন্য কাজ বাদ রেখে ছবির মানোন্নয়ন করেছেন। একজন নির্মাতা হিসেবে রাজমৌলীর সাফল্য, দেশপ্রেম এখানেই বা দক্ষিণী সুপারস্টার রামচরণের ট্রিপল আর যখন করোনার ভেতরে আশা ভঙ্গের কারণ হয়েছিল তখন প্রযোজককে নিজের পারিশ্রমিক ফিরিয়ে দিয়ে হলেও ছবির সফলতার জন্য নতুন অঙ্ক কষতে বসেছিলেন সকলে। ফলাফল! রেকর্ড সাফল্য।

আমাদের দেশে গত কয়েকবছর ধরে জয়া আহসান টলিউডের ছবির কাজে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছেন। পেয়েছেন তিন তিনবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড। একটি লাইভ ইন্টারভিউতে জয়া আহসান বলেছিলেন, ‘আমি তো বাংলাদেশে ব্লক হয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে ব্লক করে ফেলা হচ্ছিল। আমি তো ভালো ভালো কাজ করতে চাই। একজন শিল্পী তো ভালো কাজটাই খুঁজবে!’ জয়া আহসানের মতো মেধাবী তারকাকে কাজে লাগিয়েছেন কলকাতার কৌশিক গাঙ্গুলি, সৃজিত মুখার্জিরা। যারা টলিউডে নিয়মিত ছবি নির্মাণ করে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের নিজেদের ইন্ডাস্ট্রি।

অন্যদিকে জয়াকে ঠিকঠাক ব্যবহার করলে যে বাংলাদেশেও সুপারহিট ছবি করে দেখানো যায় সেটিও প্রমাণ করেছেন নিজের প্রযোজিত ‘দেবী’ ছবি দিয়ে। অথচ আমাদের এখানে মেধাবী নির্মাতারা একটি ছবি নির্মাণের পর আর কোনো ধারাবাহিকতা থাকে না। পরের ছবি মুক্তির আগে তার আগের সাফল্য ভুলে যায় দর্শক। নির্মাতা প্রযোজক ও শিল্পীদের আন্ত-সম্পর্ক এতটাই বিচ্ছিন্ন যে, চলচ্চিত্র নামের ভালো একটি মালা গাঁথা সম্ভব হয় না তাদের পক্ষে। গত কয়েকবছরে হাতে গোনা দু-একটি ছবি ছাড়া উল্লেখ করার মতো ছবি সাফল্য নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *