ত্বকী হত্যা মামলায় আরেক আসামি গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জে কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) ভোরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোড এলাকায় খাগড়াছড়িগামী একটি বাস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে জামাই মামুন (৪০) বরিশাল সদরের চরমোনাই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিমের ছেলে এবং ত্বকী হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত আজমেরী ওসমানের আত্মীয়। আজমেরী নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির প্রয়াত সংসদ সদস্য একেএম নাসিম ওসমানের ছেলে এবং নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের ভাতিজা। ২০১৪ সালে মার্চে ত্বকী হত্যা মামলায় র্যাবের ফাঁস হওয়া একটি তদন্ত প্রতিবেদনে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তার ব্যক্তিগত কার্যালয় ‘উইনার ফ্যাশন’ নামে ‘টর্চার সেলে’ নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে ১১ জনের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে মামুনের নামও রয়েছে। তাকে ওই প্রতিবেদনে আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের জামাই বলে উল্লেখ করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানায়, ত্বকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার একাধিক আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা জবানবন্দিতে এই হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার মামুনের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়েছেন। তবে, দীর্ঘদিন সে ঢাকায় আত্মগোপনে ছিল। মঙ্গলবার ভোররাতে তাবলীগ জামাতের ছদ্মবেশে ঢাকা হতে খাগড়াছড়ির রামগড় যাওয়ার পথে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খাগড়াছড়িগামী বাস হতে আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালত পুলিশের পরিদর্শক আব্দুর রশিদ জানিয়েছেন, গ্রেপ্তারের পর মামুনকে আদালতে নেওয়া হয়। সেখানে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি রিমান্ড শুনানির জন্য আগামী ৬ অক্টোবর তারিখ ধার্য করেন।
২০১৩ সালের ৬ মার্চ শহরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বেরিয়ে স্থানীয় একটি পাঠাগারে যাওয়ার পথে অপহরণের শিকার হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। পরদিন তার ‘এ’ লেভেল পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়, যেখানে দেখা যায় তিনি পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ পেয়েছিলেন, যা সেইবার সারাবিশ্বে সর্বোচ্চ ছিল।
এরপর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। দীর্ঘ সাড়ে ১১ বছরেও এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি। তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্রও দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাব। ত্বকীর পরিবার বরাবরই অভিযোগ করে আসছিলেন প্রভাবশালী ওসমান পরিবারের সদস্যরা জড়িত থাকায় আওয়ামী লীগের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারকাজ বন্ধ রয়েছে। তবে, ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত এক মাসে এই হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাদের মধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।