দক্ষিণ আফ্রিকার ভরাডুবিতে বাংলাদেশ কিছু শিখবে?

Share Now..

চার দিন পরেই মাঠে গড়াচ্ছে নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে একযোগে চলবে ২০ দলের এই টুর্নামেন্ট। সেই লড়াইয়ের আগে বাংলাদেশ একটি সিরিজও খেলে ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে। যেখানে ধবলধোলাই হতে গিয়েও কোনোমতে বেঁচে ফিরেছেন টাইগার বাহিনী। তবে বাংলাদেশ বাঁচলেও নিজেদের বাঁচাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। 

ক্যারিবিয়ানদের মাটিতে সিরিজ খেলতে নেমে পড়তে হয়েছে ভরাডুবিতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচের ধারেপাশে ছিল না বাংলাদেশ দল। লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা অবস্থান করছিলেন প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে। উড়ে যেতে প্রায় ৭ ঘণ্টা সময় দরকার পড়ে। কিন্তু সেখান থেকেও বাংলাদেশের দলের কাছে পৌঁছে গেছে এক বিশেষ বার্তা।

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে পরপর দুই ম্যাচ হেরে সিরিজ খোয়ানোর ক্ষত এখনো দগদগে। তৃতীয় ম্যাচটি প্রতাপের সঙ্গে জিতলেও সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঘুরেফিরে একটি বিষয় সামনে এসেছে। বিসিবি পরিচালক আকরাম খানও সেই বিষয়ে কথা বলেছিলেন। সেটি হলো- পাওয়ার প্লের প্রথম ৬ ওভার কাজে লাগাতে না পারা। বাংলাদেশ এই বিষয়টি নিয়ে বেশ ভুগছে। একের পর এক উইকেট পড়ছে, তার প্রভাবে রানও হচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত গতিতে। এই ব্যর্থতায় প্রোটিয়ারা ডুবেছে।

ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশের পরে দক্ষিণ আফ্রিকার নেতৃত্বে থাকা রেসি ফন ডার ডুসেন বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতির সঙ্গে তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারিনি। শিখতে পারলাম ক্যারিবিয়ান কন্ডিশনে কীভাবে খেলতে হয়। ওপরের দিকে ব্যাট হাতে আমরা একটু সাহসী হতে পারি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাওয়ার প্লেতে যেভাবে খেলেছে, সেটি সত্যিই অনবদ্য। আমরা সেটি করতে পারিনি। প্রথমদিকে রানের গতি বাড়িয়ে নিতে না পারলে পুরোনো বলে সেটি কঠিন হয়ে যায়। আমরা সেখানেই পিছিয়ে ছিলাম।’

তিন ম্যাচের সিরিজে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ পাওয়ার প্লের উপযুক্ত ব্যবহার করেছে। প্রথম দুই ম্যাচে ১ উইকেটের বিনিময়ে ৬৪ ও ৫১ রান পেয়েছে। আর তৃতীয় ম্যাচে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৮৩ রান করেন উইন্ডিজরা। বিপরীতে কেবল দ্বিতীয় ম্যাচে প্রথম ৬ ওভারের সুবিধা নিতে পেরেছিল প্রোটিয়ারা। সেই ম্যাচে ২ উইকেটে ৮৫ রান করেছিল দলটি। তবে পাহাড়সম রান ভেদ করতে জয় তুলে নিতে ব্যর্থ হন ডুসেন বাহিনী। অন্যদিকে প্রথম ও তৃতীয় ম্যাচে প্রথম ৬ ওভারে ৪৬ ও ৪৫ রান তুলে ভরাডুবির সাক্ষী হতে হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে বাংলাদেশের পাওয়ার প্লের পরিসংখ্যানও তেমন সুখকর নয়। টাইগাররা ৩৭, ৪৩ ও ৪৮ রান তুলতে পেরেছেন প্রথম ৬ ওভার থেকে। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত এই সংস্করণে এভাবে রান তুললে হোঁচট যে অবশ্যম্ভাবী, তা যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ। প্রথম ৬ ওভারে কেবল ২ জন ফিল্ডার থাকেন ৩০ গজ বৃত্তের বাইরে। সেক্ষেত্রে বাউন্ডারি ও ওভার বাউন্ডারির সুবিধা নিয়ে থাকে প্রতিটা দল। বাকি ১৪ ওভার কেমন কাটবে সেটি যেন এই ৬ ওভার দেখেই বোঝা যায়। কিন্তু বাংলাদেশ এই জায়গাটিতেই মন্থর ক্রিকেট চালিয়ে যাচ্ছে।

নাজমুল হোসেন শান্তর দল প্রথম পর্বের ২ ম্যাচ খেলবে যুক্তরাষ্ট্রে। আর বাকি ২ ম্যাচ ওয়েস্ট ইন্ডিজে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ খেলার সুবাদে সেখানকার কন্ডিশন অনেকটাই পরিচিত হয়ে উঠেছে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরিস্থিতি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিছুটা হলেও আঁচ পাওয়া গেছে দক্ষিণ আফ্রিকার সিরিজ দেখে। টাইগার বাহিনী অনেকবার খেলেছে উইন্ডিজের মাটিতে। চেনা-জানা আছে সেখানকার মাঠ-ঘাট। 

তবে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দলটি তাতে শঙ্কার বাতাস এসে গা ছুঁয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কতটুকু নিজেদের মেলে ধরতে পারে টাইগার বাহিনী সেটিই এখন সময়ের অপেক্ষা। কবিগুরু বলেছেন, ‘মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।’ এবার বাংলাদেশের মেঘ কেটে সেই সূর্য কখন হাসবে সেটিই দেখতে চান ভক্তরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *