দেখেশুনে ‘খেলতে’ চান লিপু-হান্নান

Share Now..

কথায় আছে, ‘কপালে নেই ঘি, ঠকঠকালে হবে কী’। বিষয়টি যেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। যেখানে ক্রিকেটারদের মাঠে পারফরম্যান্স করার কথা, সেখানে তারা ব্যর্থ হওয়ায় দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

নতুন নির্বাচক কমিটিতে টিকে থাকা একমাত্র সদস্য আব্দুর রাজ্জাক কিছুদিন আগে এক সাক্ষাত্কারে আক্ষেপ করে বলেছিলেন, ‘ভালো খেলোয়াড় যদি না পাই, সেক্ষেত্রে অনেক সময় এমন হয় যে, কে কম খারাপ খেলছে তাকে নিতে হয়। দল তো নির্বাচন করতে হবে!’ সদ্য নির্বাচিত প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বলেছেন, ‘আমি চাই, সবাই ভালো খেলুক এবং আমাদেরকে চাপে ফেলুক যে কাকে রেখে কাকে নেব, সব ভালোর মধ্য থেকে।’

জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক হয়ে গতকাল প্রথম বারের মতো গণমাধ্যমের সামনে আসেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। তিনি এভাবেই ইতিবাচক কথা বলেছেন। একই সুরে কণ্ঠ মিলিয়েছেন কমিটিতে নতুন সদস্য হিসেবে জায়গা করে নেওয়া হান্নান সরকারও। তবে দুই জনের কণ্ঠেই একই হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়েছে, দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেবেন না কেউই। যেখানে যতটুকু করা লাগবে, সবটুকু করতে প্রস্তুত তারা। সেখানে কোনো বাধা এলে প্রধান নির্বাচকের স্পষ্ট উচ্চারণ, ‘স্বাধীনভাবে না হলে কাজ করে কোনো আনন্দ নেই। রাস্তা সব সময় খোলা আছে। আসার রাস্তা খোলা, যাওয়ার রাস্তাও খোলা।’ লিপু বিশ্বাস করেন, ‘স্বাধীনতা থাকবে। এই ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথা হয়েছে।’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের প্রথম অধিনায়ক ছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় করেছিল বাংলাদেশ, সে সময়ে জাতীয় দলের ম্যানেজার ছিলেন তিনি। এছাড়াও বোর্ড পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন দীর্ঘদিন, ছিলেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানও। তাতে অভিজ্ঞতায় কমতি নেই তার। তবে যে পদে বসতে চলেছেন, সেখানে দেখেশুনে ‘খেলতে’ চান লিপু। ‘বল ইজ নট ইয়েট ডেলিভার্ড। সো লেট দ্য বল কাম অ্যান্ড লেট মি প্লে দ্য বল’ (বল এখনো করা হয়নি। সুতরাং আগে বলটা আসতে দিন এবং আমাকে খেলতে দিন)। এভাবেই প্রধান নির্বাচকের কণ্ঠে কথার ফুলঝুরি ফুটেছে। একই কায়দায় কথা বলেছেন হান্নান সরকারও। তিনিও দেখেশুনে খেলতে চান। আর আগেভাগেই জানিয়ে দিয়েছেন তার দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া।

হান্নান সরকার জানিয়েছেন, ‘আমরা আসলে দেখব কোন পরিস্থিতিতে কোন কোন খেলোয়াড় আমাদের দরকার। আমাদের দলের জন্য যা দরকার হবে, সেটিকেই গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করব। কে জনপ্রিয় কিংবা কে কোথায় জনপ্রিয় সেটির চেয়ে বাংলাদেশ দলে কোনটা দরকার, সেই বিষয় দেখব। হ্যাঁ, ক্রিকেটাররা খারাপ করতেই পারে। জনপ্রিয় কোনো খেলোয়াড়কে বাদ দিয়ে যদি কম জনপ্রিয় কাউকে নেওয়া হয়, তাহলে সেটি অবশ্যই আলোচনা করে নেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যেটি ভালো হয়, ভালো ফলের জন্য যা করা দরকার, আমরা সেটিই করব।’

দল নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি ‘তৃতীয় পক্ষ’ থাকার অভিযোগ অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। সে বিষয়ে গাজী আশরাফ হোসেন বলেছেন, ‘আমি কোন স্টাইলে কাজ করব কিংবা করতে পারব নাকি পারব না, এটা সময়ই বলে দেবে। ভালো কিছুর সঙ্গে আপস করতে কখনোই দোষ নেই, যদি সেটা বৃহত্তর স্বার্থে হয়। কেউ যদি আমার চেয়ে ভালো কোনো পরামর্শ দেয় এবং সেটা যদি দলের জন্য ভালো হয়, তাহলে স্বাগত।’

এ দিকে দল নির্বাচন নিয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবেন বলে জানিয়েছেন হান্নান সরকার। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি, একজন খেলোয়াড়ের জাতীয় দলে ঢোকার বিষয়টি যতটা কঠিন হওয়া উচিত এবং বাদ পড়ার বিষয়টিও ততটা কঠিন হওয়া উচিত। সহজে জাতীয় দলে ঢোকার রাস্তা থাকা উচিত না। বোলিংয়ের জায়গায় এমন হতে পারে কিন্তু ব্যাটিংয়ের জায়গায় কোনো ছাড় নেই। ব্যাটিংয়ের জন্য অভিজ্ঞতা খুব জরুরি। আমি বিষয়টি নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করব। জাতীয় দলে অনেক যাচাই-বাছাই, পরীক্ষা দিয়ে ঢোকা উচিত। একটা সিরিজ, একটা টুর্নামেন্ট, একটা বিপিএল দিয়ে বিচার করার আগে আমাদের চিন্তাভাবনা করতে হবে। এখন এখানে পরিবর্তনের সময় এসেছে, আমরা আমাদের পাইপলাইনগুলো কীভাবে প্রস্তুত রাখছি, সেটি দেখার বিষয়।’

অতীতে দেখা গেছে, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স খারাপ হলে সমালোচনার বাণে বিদ্ধ হতে হয় নির্বাচকদের। তাতে একটা চাপের বলয় সব সময় তাদের চারপাশে থাকে। সেটিকে সামলানোর বিষয়ে হান্নান বলেছেন, ‘জন্মের পর থেকেই চাপের মধ্য দিয়ে আসছি। বয়স তো কম হলো না। চাপ নিয়ন্ত্রণ করেই বড় হয়েছি। একটা সময়ে মাঠে যখন খেলেছি তখন এক ধরনের চাপ সামলিয়েছি। কোন রাস্তার চাপ কীভাবে সামলাতে হবে, সেটি জানা আছে।’ বাংলাদেশের কোটি কোটি ক্রিকেট সমর্থকেরও চাওয়া, সব চাপ কাটিয়ে টাইগার বাহিনী এগিয়ে যাক দুর্বার গতিতে। আর সেই চলার পথ আরো প্রশস্ত হোক বর্তমান নির্বাচকদের হাত ধরে। তবে দিনশেষে মাঠের খেলা এবং ক্রিকেটারদের ওপরই সবার সফলতা-ব্যর্থতার গল্প নির্ভর করবে। সেই জায়গায় সবকিছু ঠিক তো? সেটি এখন সময়ের অপেক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *