দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ইসলাম

Share Now..

হজরত রসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘মূল্যবৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি ৪০ দিন পর্যন্ত খাদ্যশস্য মজুত করে রাখে, সেই ব্যক্তি আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং তার প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।’ (মিশকাত :১৩১৬)

ইসলামের দৃষ্টিতে ভোক্তাদের জিম্মি করে অর্থকড়ি উপার্জন ঘৃণ্য ও সভ্যতাবিবর্জিত কাজ। এইসব অবৈধ কর্মকাণ্ড পরকালে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হবে। ব্যবসার লক্ষ্যই হলো মুনাফা লাভ। ইসলামে তা হারাম নয়। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা :বাকারা, আয়াত :২৭৫)

ইসলামে অসৎ- জালিয়াতি, ধোঁকাবাজি, ভেজাল মেশানো ও দালালি ইত্যাদি নিষিদ্ধ। রসুল (স.) বলেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে, আল্লাহ তাকে দুরারোগ্য ব্যাধি ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস :২২৩৮) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি (সংকট তৈরি করে) খাদ্যশস্য গুদামজাত করে, সে অপরাধী।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস:১৬০৫)

কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারসাজি থেকে সাধারণ জনগণকে বাঁচাতে সরকার দ্রব্যমূল্য নির্ধারণ করে দিতে পারে। দেখা যায়, বাজেট ঘোষণার আগে ও পরে তারা বিভিন্ন জিনিসও এরকম সিন্ডিকেট করে রাখে এবং যখন দাম বাড়ে, তখনই সেটা বাজারে ছাড়ে। ইসলামে এ ধরনের ব্যবসায়ীদের জন্য রয়েছে পরকালীন শাস্তি। যেসব অবস্থায় মাল গুদামজাত করা নিষেধ, তা হলো: ১. স্বল্পমূল্য চলাকালীন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে বেশি লাভের আশায় এমনভাবে গুদামজাত করা যে, বাজারে এর প্রভাব-প্রতিক্রিয়া পড়ে। ২. কোনো দ্রব্য এমন পরিমাণে গুদামজাত করা যে, এর কারণে ক্রেতা-সাধারণত সেই পণ্যের চরম সংকটের সম্মুখীন হয়। ৩. মানুষের খাদ্যদ্রব্যের সংকট অবস্থায় যে কোনো পরিমাণ খাদ্যদ্রব্য গুদামজাত করা। ৪. বাজারে কৃত্রিম খাদ্য সংকট সৃষ্টির জন্য গুদামজাত করা। উল্লেখিত অবস্থায় মালামাল গুদামজাত করা নিষিদ্ধ ও গুনাহের কাজ।

গুদামজাত করা বা বিভিন্ন জিনিসে সিন্ডিকেট করা ইসলামে চরম ঘৃণিত কাজ। কেননা, ব্যবসায়ীদের স্বার্থের জন্য গরিব-দুঃখী ও অসহায় মানুষ কষ্টের মধ্যে পতিত হয়। আল্লাহর কাছে তাদের ফরিয়াদ বয়ে আনতে পারে সমাজ ও রাষ্ট্রের দুর্ভিক্ষসহ নানান কঠিন আজাব। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘যেসব লোক বিনা দোষে মুমিন পুরুষ ও নারীকে কষ্ট দেয়, তারা অতি বড় একটা মিথ্যা অপবাদ ও সুস্পষ্ট গুনাহের বোঝা নিজেদের মাথায় তুলে নেয়।’ (সুরা :আহজাব, আয়াত :৫৮)

লেখক : শিক্ষার্থী, কিং আব্দুল আজিজ বিশ্ববিদ্যালয়, জেদ্দা, সৌদি আরব

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *