নাগরিক সচেতনতায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম

Share Now..

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর কল্যাণে বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে মানুষ পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে। যোগাযোগের বিবর্তন চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল খাতগুলোর ওপর চলে আসে কিছু দায়িত্বও। কোনো দেশের নাগরিকদের অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রেও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো এখন ভূমিকা রাখতে পারে বিশেষভাবে। বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিধায় নাগরিকদের নিয়ে কাজ করার বিষয়টি কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলে আর সীমাবদ্ধ নেই।  

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো বিশ্বের বিভিন্ন নির্বাচনে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ২০২০ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময়, নির্বাচন কেন্দ্রিক ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াইইয়ের জন্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছিল টিকটক। ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সেক্রেটারিস অব স্টেট এবং মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মতো সংস্থার কাজ করে প্ল্যাটফর্মটি। এছাড়া, ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের জন্য এজেন্স ফ্রান্স-প্রেস এবং পলিটিফ্যাক্টের সঙ্গে পার্টনারশিপ করে টিকটক। নির্বাচন সম্পর্কে টিকটক ইউজারদের সঠিক তথ্য প্রদান করতে একটি ইন-অ্যাপ ২০২০ ইলেকশন গাইডও চালু করেছে টিকটক।

বাংলাদেশের অবস্থান 

অন্য দেশের মতো বাংলাদেশের নির্বাচনকেও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো প্রভাবিত করছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের আসন্ন সংসদীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও যার প্রভাব দৃশ্যমান। যেখানে নাগরিকদের কাছে নির্বাচনী তথ্য প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে এই প্ল্যাটফর্মগুলো। এ পরিপ্রেক্ষিতে গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী বাংলাদেশে একইভাবে উদ্যোগ নিয়েছে টিকটক। যার আওতায় দেশের ফ্যাক্ট-চেকিং সংস্থা নিউজচেকার এর সঙ্গে কাজ করে প্ল্যাটফর্মটি। সংস্কৃতি এবং জনগোষ্ঠীর ভিন্নতার কারণে তথ্য আদান-প্রদানের ধরন আর স্থানীয় প্রেক্ষাপটও ভিন্ন হয়ে থাকে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে টিকটকের কাজ করার দিকটি সেটিই তুলে ধরে।

টিকটক ইউজারদের সচেতনতা এবং অংশগ্রহণকে তুলে ধরতে নতুন প্রোডাক্ট ফিচার নিয়ে এসেছে এই প্ল্যাটফর্মটি। টিকটকের রিপোর্টিং টুলগুলো ব্যবহারকারী-বান্ধব হওয়ায় প্ল্যাটফর্মে কোনো বিভ্রান্তিকর কনটেন্টের বিরুদ্ধে যে কেউ পদক্ষেপ নিতে পারে সহজেই। 

নিরাপদ ডিজিটাল স্থান নিশ্চিতের প্রতি টিকটকের প্রতিশ্রুতির প্রমাণস্বরূপ হলো এর কমিউনিটি গাইডলাইনসের প্রয়োগ। যা নির্বাচনের মতো সময়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। নির্বাচন-সম্পর্কিত ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে বেশ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করছে প্ল্যাটফর্মটি। যার মধ্যে রয়েছে কনটেন্টের অপসারণ, সার্চিং এর ফলাফল নির্ধারণ এবং যাচাই না করা তথ্য হ্রাস। বিশেষজ্ঞ এবং সামাজিক সংগঠনগুলোর সাথে কাজ করার কারণে টিকটকের পলিসির কাঠামো আরও উন্নত হয়েছে। প্ল্যাটফর্মে প্রচারিত তথ্যের সমন্বয়তা বজায় রাখতে এমন নীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নির্বাচনের বাইরে: দৈনন্দিন আলোচনা 

বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনের সঙ্গে জনগনের সম্পৃক্ততা কতটা বেশি,  তা বোঝা যায় ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে রাজনীতি নিয়ে চলমান আলোচনা থেকে। মত প্রকাশের জন্য দেশের নাগরিকদের কাছে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো একটি জায়গা হয়ে উঠেছে। এমনকি সরকারের নীতিমালা এবং সামাজিক বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত থাকতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম এখন একটি অন্যতম উৎস।

রাজনৈতিক আলোচনা, ভোটারদের তথ্য প্রদান এবং নাগরিকদের যুক্ত করতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো এখন ব্যবহৃত হচ্ছে। ডিজিটাল লিটারেসি বা সাক্ষরতার এই যুগে তথ্যের বিশ্বাসযোগ্যতা বুঝতে পারা অপরিহার্য। তথ্যের এই সত্যতা নিশ্চিতে টিকটকের শিক্ষামূলক কনটেন্ট এবং গাইডগুলো নাগরিকদের জন্য টুলস হিসেবে কাজ করছে। যার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের দিকটি গুরুত্ববহ হয়ে উঠে।

ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের একটি বিশেষ দিক হল তাদের শিক্ষামূলক ভূমিকা। টিকটকের মিডিয়া লিটারেসি ভিডিও এবং ইন-অ্যাপ গাইডের মাধ্যমে, এর ইউজাররা সরাসরি তথ্য পাওয়ার পাশাপাশি কনটেন্টগুলো নিজেরা বিশ্লেষণ করারও সুযোগ পায়। 

অনেক ক্ষমতার সঙ্গে সঙ্গে অনেক দায়িত্বও চলে আসে যেটি কিনা আজকের ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তথ্যের নির্ভুলতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাকস্বাধীনতা বজায় রাখার প্রতিও খেয়াল রাখতে হয় প্ল্যাটফর্মগুলোর। যেখানে ক্রমাগত প্রয়োজন হয় ফ্যাক্ট-চেকিং, কনটেন্ট মডারেশন এবং ভুল তথ্য রোধ করা।

বিগত মার্কিন নির্বাচন নিয়ে টিকটক প্ল্যাটফর্মে এর প্রভাব দেখা গিয়েছিল উল্লেখযোগ্যভাবে, এদিকে এবারের বাংলাদেশের নির্বাচনকে ঘিরে সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্যোগ নিয়েছে টিকটক। সব মিলিয়ে এটি প্রমান হয় যে ভবিষ্যতের নির্বাচনের জন্য এমন প্ল্যাটফর্মগুলো অবদান রাখতে পারে বিশেষভাবে। যেখানে নাগরিকদের তথ্য প্রদান এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াগুলো নিশ্চিত হবে সঠিকভাবে। সর্বোপরি এটি সম্ভবপর হতে পারে যদি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো জোর দেয় নির্ভুলতা, শিক্ষা এবং ইউজারদের ক্ষমতায়নের উপর। 

বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য টিকটকের মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা বৃহত্তর গ্লোবাল ট্রেন্ডেের একটি ক্ষুদ্রতর রূপ। ডিজিটাল পরিসরে এত তথ্যের ভিড়ে কনটেন্ট সংশোধন ও যাচাই করার জন্য প্ল্যাটফর্মগুলোর এগিয়ে আসা তাৎপর্যপূর্ণ। গঠনমূলক আলোচনা, অন্যের মতামত সম্মান, এবং কোনো বিষয়বস্তু যাচাই করার মতো বিষয়গুলো প্ল্যাটফর্ম ইউজারদের শেখানো হলেই ডিজিটাল জগতে গণতান্ত্রিক কাঠামো আরও শক্তিশালী হবে।

বাংলাদেশের নির্বাচনী এই সময়ে নির্বাচনের অখণ্ডতা বজায় রাখতে এবং নাগরিকত্ব প্রচারে টিকটকসহ অন্যান্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ভুল তথ্য রোধ এবং নাগরিকদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে টিকটক এই উদ্যোগগুলো গ্রহন করেছে। এমন প্রচেষ্টা অন্যান্য দেশ এবং প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য ডিজিটাল যুগে সত্য তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত।

লেখক: বাংলাদেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *