নেদারল্যান্ডসের নির্বাচনে ইসলাম বিরোধী রাজনৈতিক দলের জয়

Share Now..

নেদারল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে কট্টর ডানপন্থী ও ইসলামবিরোধী গির্ট উইল্ডারের নেতৃত্বাধীন ফ্রিডম পার্টি (পিভিভি) বড় জয়ের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটির নির্বাচনে বুথ ফেরত জরিপে এ চিত্র উঠে এসেছে। খবর বিবিসির।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, ২৫ বছর যাবত সংসদে থাকা ফ্রিডম পার্টি ৩৫টি আসনে জয়ের পথে আছে। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বামপন্থী জোটের চেয়ে ফ্রিডম পার্টি অনেক এগিয়ে আছে।

ওয়াইল্ডার বলেন, ‘ফ্রিডম পার্টিকে এখন আর অবহেলা করা যাবেনা। এখন আমরা দেশ চালাবো।’ এই ফলাফল যদি শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হয় তাহলে সেটি হবে ডাচ রাজনীতির জন্য বড় এক ঝাঁকুনি।

কিন্তু ফ্রিডম পার্টিকে তাদের সঙ্গে সরকারে জোট সঙ্গী খুঁজে পেতে সংগ্রাম করতে হবে।

পার্লামেন্টে ৩০০টি আসনের মধ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা কোন দল পায়নি। সরকার গঠন করতে হলে ৭৬টি আসনের প্রয়োজন। সেজন্য ফ্রিডম পার্টিকে অবশ্যই জোট সরকার গঠন করতে হবে।

ফ্রিডম পার্টির পরে যে তিনটি বড় দলের অবস্থান রয়েছে তারা এরই মধ্যে ওয়াইল্ডারের নেতৃত্বে সরকারে যোগ না দেবার কথা জানিয়ে দিয়েছে।

বিজয়ী ভাষণে ৬০ বছর বয়সী ওয়াইল্ডার বলেন, ‘আমরা দেশ শাসন করতে চাই ও ৩৫টি আসন দিয়ে আমরা দেশ শাসন করবো। ৩৫টি আসন অনেক বড় বিষয় আর অনেক বড় দায়িত্বও বটে।’

বামপন্থী জোট নির্বাচনে ২৫টি আসনে বিজয়ী হয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই জোটের নেতা ফ্রাঁ টিমারম্যানস বলেছেন, ফ্রিডম পার্টির সাথে কোন সমঝোতায় তিনি যাবেন না।

তিনি সমর্থকদের বলেন, এখন ডাচ গণতন্ত্র এবং আইনের শাসনকে রক্ষা করার সময়। আমরা কাউকে এখান থেকে যেতে দেব না। নেদারল্যান্ডস-এ সবাই সমান।

নির্বাচনে তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে থাকা বড় দুটি দলের সমর্থনে চেষ্টা করবে ফ্রিডম পার্টি।

নির্বাচনে তৃতীয় অবস্থানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দিলান ইয়েসিলগোজ-এর নেতৃত্বে মধ্য-ডানপন্থী দল ও চতুর্থ স্থানে থাকেবে পিটার ওমটজিগট-এর নতুন রাজনৈতিক দল।

উভয় নেতা ফ্রিডম পার্টিকে অভিনন্দন জানিয়েছে তাদের সাফল্যের জন্য। ইয়েসিলগোজ এ সপ্তাহে বলেছেন তিনি ওয়াইল্ডারের নেতৃত্বে ক্যাবিনেটে কাজ করবেন না। যদিও ওয়াইল্ডারের সঙ্গে কাজ করার সম্ভাবনা তিনি পুরোপুরি খারিজ করে দেননি।

ওয়াইল্ডারের নেতৃত্বে ফ্রিডম পার্টির জয় ইউরোপজুড়ে একটি বড় ধাক্কা দেবে। কারণ, নেদারল্যান্ডস হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম।

সমগ্র ইউরোপের জাতীয়তাবাদী ও উগ্র ডানপন্থী নেতারা তার কৃতিত্বের প্রশংসা করেছেন। ফ্রান্সে, মেরিন লে পেন বলেছিলেন, এটি জাতীয় পরিচয় রক্ষার প্রতি ক্রমবর্ধমান সংযুক্তি নিশ্চিত করে।

ওয়াইল্ডার ইইউ ত্যাগ করার জন্য একটি গণভোট করতে চান, যাকে ‘নেক্সিট’ বলে ডাকা হয়। যদিও তিনি স্বীকার করেন যে এমন করার কোনো আবহ তার দেশে নেই।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় তিনি অবশ্য ভাষা পরিবর্তন করে বলেছেন যে নেদারর‍্যান্ডস-এ ইসলাম নিষিদ্ধ করার চেয়ে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখন আছে। সেজন্য তিনি বিষয়টি আপাতত স্থগিত রাখতে চান। তার এই কৌশল কাজে দিয়েছে এবং তার দল গতবারের তুলনায় দ্বিগুণ আসনে জয়লাভ করেছে।

ডাচ রাজনীতিতে প্রভাব

এই নির্বাচনের ফলাফল নেদারল্যান্ডস-এর রাজনীতির চেয়ে সমাজের জন্য বড় একটি ধাক্কা। অনেকে ভেবেছিলেন, নির্বাচনে তৃতীয় স্থান দখলকারী মধ্য-ডানপন্থী দলের দিলান ইয়েসিলগোজ দেশটির প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হবেন।

তিনি সাত বছর বয়সে তুরস্ক থেকে শরণার্থী হিসেবে নেদারল্যান্ডস-এ এসেছিলেন এবং এখন শরণার্থীদের বিরুদ্ধে তিনি সবচেয়ে শক্ত অবস্থান নিয়েছেন।

অনেক মুসলিম নেতা অভিযোগ করেন, মসজিদ এবং ইসলামিক স্কুল বন্ধ করার জন্য মি. ওয়াইল্ডারের যে অবস্থান সেটিকে স্বাভাবিক করা এবং উগ্র ডানপন্থীদের জন্য সরকারের দরজা খুলে দেবার কাজ করেছেন মিস্ ইয়েসিলগোজ।

৪৬ বছর বয়সী মিস্ ইয়েসিলগোজ এর আগের সরকারের আইনমন্ত্রী থাকলেও তিন সরকারের সাথে দূরত্ব বজায় রাখতেন। নির্বাচনের আগের দিন পর্যন্ত অর্ধেক ভোটার ছিলেন দোদুল্যমান। কিন্তু তারা ইয়েসিলগোজকে সমর্থন দেননি।

নির্বাচনে বিজয়ী ওয়াইল্ডার সম্পর্কে দ্য হেগ-এর একজন মুসলিম ভোটার বলেন, ‘তিনি যদি এতোটা মুসলিম-বিরোধী না হতেন তাহলে আমি তার প্রতি আগ্রহী হতাম।’

নির্বাচনের কয়েক ঘণ্টা আগে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে ওয়াইল্ডার বিবিসিকে বলেন, ‘আমি মনে করি হল্যান্ডের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো আমরা এক সপ্তাহে ১০টি আসন পেয়েছি।’

সরকার গঠনের জন্য তাকে যে সামনে কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে সেটির বাস্তবতা বুঝতে পারছেন ওয়াইল্ডার। কিন্তু তিনি নিজেকে ইতিবাচক মানুষ হিসেবে দাবি করেন এবং বলেন যে তার বিজয়ের ফলে তাকে ‘উপেক্ষা করা অন্য দলগুলোর জন্য কঠিন হবে’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *