নৌকায় ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিন

Share Now..
  • আমার ওপর ভরসা রাখুন, আসুন সকলে মিলে বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি
  • চলার পথে কোনো ভুলভ্রান্তি করে থাকলে ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখবেন
  • আবার সরকার গঠন করতে পারলে ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ পাব

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবার সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলার পথে যদি কোনো ভুলভ্রান্তি করে থাকি, তাহলে আপনারা ক্ষমা সুন্দর চোখে দেখবেন—এটাই আমার আবেদন। আবার সরকার গঠন করতে পারলে ভুলগুলো শোধরানোর সুযোগ পাব। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ‘নৌকা’ মার্কায় ভোট দিয়ে আমাকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দিন।’

এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজীবন যে সংগ্রাম করেছেন, সে কথা তুলে ধরে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি বাবা-মা, ভাই সব হারিয়ে দুঃখ-বেদনাকে সম্বল করে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। আপনাদের মধ্যে খুঁজে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের মমতা এবং ভাইয়ের মায়া। আপনারাই আমার পরিবার, আমার ওপর ভরসা রাখুন। আসুন, সবাই মিলে এই বাংলাদেশকে স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ করি।’

একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রত্যাশা রেখে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলসমূহ এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতি অনুরোধ, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, এমন কোনো উদ্ভট ধারণাকে প্রশ্রয় দেবেন না এবং ইন্ধন জোগাবেন না।’

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই ভাষণ গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়। তার সামনে টেবিলে একপাশে ছিল আওয়ামী লীগের দলীয় পাতাকা, অন্য পাশে ছিল দলীয় নির্বাচনি প্রতীক নৌকার ছবি। চার মেয়াদে রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে আওয়ামী লীগ দেশের কী কী উন্নয়ন করেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ শেখ হাসিনা তার ভাষণে তুলে ধরেন। বিএনপি-জামায়াত জোট কীভাবে বারবার দেশের উন্নয়নকে ‘বাধাগ্রস্ত’ করেছে, সেই বিবরণও দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে আপনাদের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইতে হাজির হয়েছি। এই উন্নয়নকে টেকসই করা, আপনাদের জীবনমান উন্নত করা, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত স্মার্ট সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ চাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, উত্পাদন বৃদ্ধি করে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা, দারিদ্র্য হ্রাস, ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারগুলোর ঘরবাড়ি ও জীবন জীবিকার স্থায়ী ব্যবস্থা করা, যুগোপযোগী শিক্ষাব্যবস্থায় আজকের শিশু এবং তরুণদের সুশিক্ষিত করা, স্বাস্থ্যসেবা আরো উন্নত করা, ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা, প্রতি উপজেলায় কারিগরি ও কম্পিউটার ট্রেনিংয়ের যে সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে, তা সম্পন্ন করা, দক্ষ জনশক্তি রপ্তানির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন কর্মক্ষেত্র খুঁজে বের করা, গ্রামের মানুষের জন্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা, রাস্তাঘাট উন্নত করা, বিদ্যুত্, সুপেয় পানি ও স্যানিটেশনের যে ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে, তা টেকসই করে সব মানুষের জীবনমান উন্নত করাই আওয়ামী লীগ সরকারের লক্ষ্য।

ভোটে নির্বাচিত হয়ে আরো একবার সরকার গঠনের সুযোগ পেলে আওয়ামী লীগ নদী, খাল, পুকুর, জলাধার খনন, ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ, বনায়ন সৃষ্টি, উপকূলীয় অঞ্চলে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করে সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদী ভাঙনের হাত থেকে দেশের জনগণকে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত থেকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, টানা চতুর্থবার সরকারে যেতে পারলে আওয়ামী লীগ সড়ক, রেল, নৌ, বিমান পথ ও সেবা উন্নত করে যোগাযোগ অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন করবে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, অধিক ফসল উত্পাদন, খাদ্য সংরক্ষণ, খাদ্য ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাত করা, দেশের চাহিদা পূরণ করা ও বিদেশে রপ্তানির উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ অব্যাহত থাকবে।

স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তোলার যে ইশতেহার আওয়ামী লীগ ঘোষণা করেছে, সেখানে অগ্রাধিকারের ১২টি বিষয় শেখ হাসিনা তার ভাষণে তুলে ধরেন। এগুলো হলো—১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার করা। ২. দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার আওতার মধ্যে রাখার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। ৩. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবসমাজের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। ৪. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। ৫. উত্পাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষিব্যবস্থা যান্ত্রিকীকরণ ও উত্পাদিত পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া। ৬. কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা। ৭. গ্রাম পর্যায়ে পর্যন্ত অবকাঠামো এবং শিল্প-কলকারখানা গড়ে তুলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা। ৮. ব্যাংক-বীমা ও আর্থিক খাতের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ৯. নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। ১০. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করে ব্যক্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ১১. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে গড়ে তোলা ও তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা। ১২. সাম্প্রদায়িকতা ও সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছরে বাংলাদেশের অর্থসামাজিক অবস্থা কেমন ছিল আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত কতটুকু অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, আমি সেই চিত্রটা তুলে ধরছি—প্রবৃদ্ধি ৭.২৫ শতাংশ, মাথাপিছু আয় পাঁচ গুণ বৃদ্ধি। বাজেটের আকার ১২ গুণ বৃদ্ধি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ১৩ গুণ বৃদ্ধি। জিডিপির আকার ১২ গুণ বৃদ্ধি। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ৩৬ গুণ বৃদ্ধি। রপ্তানি আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি। বার্ষিক রেমিট্যান্স ছয় গুণ বৃদ্ধি। বৈদেশিক বিনিয়োগ এফডিআই পাঁচ গুণ বৃদ্ধি। একজন কৃষি-শ্রমিকের ক্রয়ক্ষমতা ৩ গুণ বৃদ্ধি। শ্রমিকদের মজুরি ৯ গুণ বৃদ্ধি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৬ গুণ বৃদ্ধি। রপ্তানি আয় ৫ গুণ বৃদ্ধি। দারিদ্র্যের হার ৪১.৫১ শতাংশ থেকে ১৮.৭ শতাংশে হ্রাস। অতি দারিদ্র্য হার পাঁচ গুণ কমেছে। সুপেয় পানি ৫৫ শতাংশ থেকে ৯৮.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। স্যানিটারি ল্যাট্রিন ৪৩.২৮ শতাংশ থেকে ৯৭.৩২ শতাংশ বৃদ্ধি। শিশু মৃত্যুহার হাজারে ৮৪ থেকে কমে ২১ জন। মাতৃ মৃত্যুহার প্রতি লাখে ৩৬০ জন থেকে কমে ১৫৬ জন। মানুষের গড় আয়ু হয়েছে ৭২.৮ বছর। তিনি বলেন, বিদ্যুত্ উত্পাদন সক্ষমতা আট গুণ বৃদ্ধি। বিদ্যুত্ সুবিধা ভোগের হার ২৮ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ বৃদ্ধি। স্বাক্ষরতার হার ৭৬.৮ শতাংশ বৃদ্ধি। কারিগরি শিক্ষা ২২ গুণ বৃদ্ধি। দানাদার শস্য উত্পাদন চার গুণ বৃদ্ধি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। ঢাকায় মেট্রোরেল চালু করেছি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, পাতাল রেলের কার্যক্রম উদ্বোধন করেছি। রূপপুরে দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্র স্থাপন করেছি। উদ্বোধন করা হয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টারমিনাল। চট্টগ্রামে দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম পাতাল সড়কপথ, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ নির্মাণ করেছি। কক্সবাজারে দৃষ্টিনন্দন রেলস্টেশন স্থাপন করে ঢাকা-কক্সবাজার রেল রুট চালু করেছি।

510 thoughts on “নৌকায় ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *