পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা
পরিষ্কার, পরিপাটি, নির্মল অবস্থাকে বলে পরিচ্ছন্নতা। আর বিশেষ পদ্ধতিতে অর্জিত দেহ, মন, পোশাক ও স্থান বা পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা ও নির্মলতাকে বলে তাহারাত বা পবিত্রতা। আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ভালবাসেন। যারা পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকে সবাই তাদের ভালবাসে। আল্লাহপাকও তাদের ভালবাসেন। কুরআন মাজীদে আছেÑ অর্থাৎ যারা পবিত্র থাকে, আল্লাহ তাদের ভালবাসেন।” সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত সালাত আদায় করার জন্য শরীর, পোশাক ও স্থান তথা পরিবেশ পবিত্র হওয়া অপরিহার্য। প্রিয়নবী (সাঃ) এরশাদ করেছেনÑ “ধর্মের ভিত্তি পরিচ্ছন্নতার ওপর প্রতিষ্ঠিত।” কেননা অপরিচ্ছন্ন দেহ মনের এবাদত আল্লাহ পাক কবুল করেন না। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছেÑ অর্থাৎ “বিশ্বাসীগণ” তোমরা যখন নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করবে, তখন মুখ, হাত, পা ধৌত করবে এবং মাথা মাসেহ করবে।” (সুরা মায়িদা)।
সালাত, তাওয়াফ, কুরআন তেলাওয়াতের মতো মৌলিক ইবাদতের জন্য পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতাকে ইসলাম পূর্বশর্ত করা হয়েছে। অনুরূপভাবে অন্যান্য ইবাদতে পরিচ্ছন্নতা ব্যতীত একাগ্রতা আসে না।
আমরা নানা রকম কাজ করি। আমাদের হাত, পা, শরীর ও কাপড় ময়লা হয়, ধুলোবালি লাগে। ঘামে শরীর ভিজে যায়, দুর্গন্ধ হয়। লোকে ঘৃণা করে। আমরা মুখ দিয়ে খাবার খাই, দাঁতে ময়লা লাগে। দাঁত মুখ পরিষ্কার না করলে মুখ থেকে দুর্গন্ধ আসে। লোকে অপছন্দ করে, অকালে দাঁত পড়ে যায়। দাঁত পরিষ্কার রাখার জন্য ওযু করার আগে দাঁত মাজতে হয়, মেসওয়াক করতে হয়। মহানবী (সাঃ) বলেছেনÑ “আমার উম্মতের কষ্ট না হলে প্রত্যেক ওযুর আগে মেসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।” অনেকের নখ, চুল বড় হয়। দেখতে খারাপ লাগে। নখ বড় হলে নখে নানা রকম ময়লা জমে, তা খাবারের সাথে পেটে যায় এবং পেটের অসুখ হয়। নখ কেটে ছোট ও পরিষ্কার রাখতে হবে। চুল ঠিক করে রাখতে হবে। মহানবী (সাঃ) একবার একটি লোককে এলোমেলো চুল দেখে বললেনÑ “এ ব্যক্তি কি চুল ঠিক করার কিছুই পেল না?”
স্বাস্থ্য বিজ্ঞানে শরীরকে সুস্থ রাখার জন্য যে সব পন্থা বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন, তন্মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যবস্থা। অপরিচ্ছন্ন দেহ সুস্থ থাকতে পারে না। কেননা দৈহিক পরিশ্রমের ফলে শরীরের ভেতর হতে নানা প্রকার দূষিত পদার্থ চোখ, ত্বক, কান, জিহবা প্রভৃতি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে প্রতিনিয়ত বের হয়। বিভিন্ন কাজের সময় হাত, পা, মুখ, নাক, চোখ এমনকি প্রতিটি অঙ্গই অপরিষ্কার হয়ে যায়। এ অঙ্গগুলো পরিস্কার রাখলে রোগ-জীবাণুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
শুধু শরীর পরিচ্ছন্ন রাখলেই চলবে না। ব্যবহার্য অন্যান্য সামগ্রী ও পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যে প্লেটে খাই, যে জায়গায় ঘুমাই, যে কাপড়-চোপড় পরিধান করি, সেগুলো পরিচ্ছন্ন বা পবিত্র না হলে শরীরে রোগ-জীবাণু জেঁকে বসবে। পোশাক পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ পাক বলেনÑ “তোমার কাপড় পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখ।” (সূরা আল মুদাস্সির-৪)।
এ ছাড়া খাওয়ার প্লেট, গ্লাস, জগ, বিছানার চাদর, খাট, টেবিল চেয়ার, খাটের নীচের অংশ, থাকার রুম চতুপার্শ্বের পরিবেশ অবশ্যই পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার জন্যই রাসূল পাক (সাঃ) এরশাদ করেছেন, “পানির ঘাটে, রাস্তার মাঝে, বৃক্ষের ছায়ায় মলত্যাগ হতে বিরত থাকবে। (মেশকাত)।
হিংসা, লোভ, ক্রোধ, কাম, গীবত, হাসাদ, ইত্যাকার পাপের কারণে অন্তর অপরিচ্ছন্ন হয়। রাসূলে পাক (সাঃ) এরশাদ করেনÑ অর্থাৎ “মানবদেহে এক টুকরা গোস্ত আছে যা পরিচ্ছন্ন হলে সমগ্র দেহ পরিচ্ছন্ন এবং খারাপ হলে সমগ্র দেহ খারাপ হয়ে যায় সেই গোস্ত টুকরা ক্বলব বা অন্তর।” রাসূলের এ ভাষ্য দ্বারা প্রমাণিত হয়, অন্তর অপবিত্র অপরিচ্ছন্ন হলে দেহ অপবিত্র হয়ে যায়। তাই ইসলাম মনের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে সবিশেষ গুরুত্ব প্রদান করেছে। মনের পরিচ্ছন্নতা অর্জিত হয়। জিকর তেলাওয়াত, মোরাকাবা-মোশাহাদার মাধ্যমে। আল্লাহ পাক বলেনÑ “জেনে রেখ। আল্লাহ স্মরণে আÍা প্রশান্ত হয়।”
আল্লাহ পাক আমাদের বাহ্যিক অভ্যন্তরীণ সকল প্রকার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। কেননা পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি, আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতা ও মানবকুলের নিকট আদরণীয়। আর অপরিচ্ছন্ন ব্যক্তি সকলের নিকট ঘৃণিত ও নিন্দনীয়।