পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আরও প্রভাবশালী হচ্ছে রাশিয়া?
টানা ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রাশিয়ার হামলার প্রতিক্রিয়ায়, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-সহ পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে আরোপ করা হয় একের পর এক নিষেধাজ্ঞা।
এসব নিষেধাজ্ঞায় রুশ অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে পশ্চিমা অনেক সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হলেও আসলে কি ঘটছে? নিষেধাজ্ঞা কি আসলেই রুশ অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারছে? নাকি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে বিশ্বে আরও প্রভাবশালী হয়ে উঠবে রাশিয়া।
রাশিয়ার রাজধানী মস্কোতে বসবাস করেন ২৩ বছর বয়সী আলেকজান্ডার। পেশায় স্থানীয় একটি আর্ট মিউজিয়ামের কর্মী আলেকজান্ডারের জীবন বেশ ভালোভাবেই জটিল করে তুলেছে পশ্চিমাদের আরোপিত বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা।
জিনিপত্রের ক্রমবর্ধমান দাম তাকে তার দৈনন্দিন খরচ কমাতে বাধ্য করেছে। এমনকি বিল পরিশোধ-সহ জীবনযাপনে সহায়তার জন্য নিজের নিয়মিত কাজের বাইরে তাকে একটি বাড়তি কাজও খুঁজে বের করতে হয়েছে। তবুও আলেকজান্ডার আশাবাদী যে, পশ্চিমাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলো দীর্ঘমেয়াদে রাশিয়ার জন্য কিছু অপ্রত্যাশিত সুবিধা বয়ে আনবে।
নিজের নামে শেষাংশ উল্লেখ করতে অনিচ্ছুক এই যুবক বলছেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞা যেন আমাদের সামনে আরও সুযোগ এনে দিয়েছে এবং আমাদের দেশকে এটিই মনে করিয়ে দিয়েছে, রাশিয়া তার নিজস্ব পণ্য উৎপাদন করতেও সক্ষম। এটি সম্ভবত নতুন এবং ইতিবাচক কিছুর দরজা খুলতে পারে।’
গত ছয় মাসে পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো বহির্বিশ্বের সাথে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সম্পর্ককে নাটকীয়ভাবে পরিবর্তন করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাত্র তিন দশকের মধ্যেই রাশিয়া খুব সহজে বৈশ্বিক পুঁজিবাদের বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করেছিল।
যদিও এই সময়ে মস্কো এবং পশ্চিমের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক প্রায় সময়ই উত্তেজনাপূর্ণ থাকলেও উভয়ের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিল বেশ শক্তিশালী। মধ্যবিত্ত রাশিয়ানরা সহজেই ইউরোপে ফ্লাইট বুক করতে বা স্মার্টফোন থেকে জিন্স পর্যন্ত সর্বশেষ পশ্চিমা বিভিন্ন পণ্য কিনতে পারতেন। এছাড়া বিদেশে অর্থ প্রেরণ বা গ্রহণসহ মৌলিক আর্থিক কর্মকাণ্ডও রাশিয়ানরা কয়েক মিনিটের মধ্যে করতে পারতেন।
তবে বর্তমান বাস্তবতায় এখন সেই যুগ যেন চিরকালের জন্য শেষ হতে পারে। ইউক্রেনে সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে ক্রেমলিনের সিদ্ধান্তের পর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপ ও এশিয়ায় ওয়াশিংটনের মিত্ররা দ্রুতই রাশিয়ার অর্থনীতির বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব সব নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে।