পাকিস্তান সরকার দলছুটদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে যাচ্ছে
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবে সায় দেওয়া দলত্যাগীদের বিরুদ্ধে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে পিটিশন করতে যাচ্ছে পাকিস্তান সরকার। গত শুক্রবার (১৮ মার্চ) পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন। পার্লামেন্টে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের আগে তার দল থেকে বের হয়ে যাওয়া এমপিদের সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি না, সে বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় জানতেই এ আবেদন। খবর প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
পাকিস্তানের আইন অনুসারে, দলছুট হলে বা দলের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়া সংসদ সদস্যদের আসন শূন্য ঘোষণা হতে পারে। এ মাসের অনাস্থা ভোটের আগেই ‘দলত্যাগ বিরোধী’ এই আইন প্রয়োগ করতে চায় ইমরানের সরকার। বিরোধী দলের আনা অনাস্হা প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটাভুটি করতে এ মাসেই দেশটির পার্লামেন্টে অধিবেশন বসার কথা রয়েছে।
পার্লামেন্টের ওই অনাস্হা ভোটকে সামনে রেখে অস্হির হয়ে উঠেছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক অঙ্গন। এর আগে বৃহস্পতিবার নিজ দলের একাধিক সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রী খানের প্রতি সমর্থন প্রত্যাহার করে বিরোধী দলের ইমরান পতনের ডাকে সায় দেন। ইমরান তার জোটের শরিকদের সমর্থনও হারাতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও আছে। এতে সাবেক এই ক্রিকেট তারকার ক্ষমতায় থাকা অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ রশিদ আহমাদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘দলত্যাগের পর আর তাদের ভোট দেওয়ার ক্ষমতা থাকছে কি না, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় জানার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’ ইমরান খানের নেতৃত্বে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান আহমাদ। তবে কবে নাগাদ আদালতে এই আবেদন করা হবে সে বিষয়ে কিছু জানাননি তিনি। ইমরান সরকারের মন্ত্রী আহমাদ দলত্যাগীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি সবাইকে ফিরে আসার আহ্বান জানাই। আমরা আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্হা নেবো না।
পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন তেহরিক ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলীয় সরকারের কেবিনেট মন্ত্রী আসাদ উমর বলেন, যারা দল ছেড়ে বেরিয়ে বিরোধী দলের অনাস্হা প্রস্তাবে যোগ দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করা হয়েছে। তিনি জানান, বিরোধী দলের প্রশ্রয়ে দলের ভিন্নমতালম্বীরা যেখানে আশ্রয় নিয়ে আছে ইসলামাবাদের সেই বাড়িতে হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের হাতেগোনা কয়েক জন কর্মী। আর তাদের নেতৃত্ব দিয়েছে দুই আইনপ্রণেতা। হামলাকারীরা ওই বাড়ির মূল ফটক ভেঙে ফেলে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ ঘটনায় জড়িত সরকারি দলের ওই দুই সংসদ সদস্যকে আটক করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা খুবই গুরুতর একটি ঘটনা। এসবে সায় জানাতে পারি না আমরা। আসলে খুনই শুধু অপরাধ নয়; হত্যাচেষ্টাও কিন্তু অপরাধ।’
ইমরানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র ও অর্থনীতি পরিচালনা এবং বিদেশ কূটনীতিতে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে তার সরকারের পতন চাইছে পাকিস্তানের বিরোধী দলগুলো। দেশটির কোনো প্রধানমন্ত্রী তার মেয়াদকাল পুরোপুরি শেষ করতে পারেননি। শরিক দল ও দলছুটদের সমর্থন হারালে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে ১৫৫টি আসন থাকবে ইমরানের দল পিটিআইয়ের; কিন্তু সরকারে টিকে থাকতে লাগবে ১৭২টি আসন।
অন্যদিকে, নিম্নকক্ষে বিরোধী দলগুলোর ১৬৩টি আসন রয়েছে। বিরোধী দল ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সামরিক বাহিনীর সমর্থন হারিয়েছেন ইমরান খান। দেশটিতে ক্ষমতায় টিকে থাকতে এই সমর্থন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাবেক এই ক্রিকেটার নিজেও চার বছর আগে সামরিক বাহিনীর সমর্থনেই ক্ষমতায় এসেছিলেন।