পৃথিবীখ্যাত বিজ্ঞানীদের পাশে ঝিনাইদহের হরিপদ কাপালীল নাম!

Share Now..


আসিফ কাজল, ঝিনাইদহঃ
ঝিনাইদহের জাত কৃষক ও নিরক্ষর বিজ্ঞানী হরিপদ কাপালী এখন বাংলাদেশের আইকন। তাকে নিয়ে গল্প লেখা হচ্ছে। পত্রিকার পাতা জুড়ে এক সময় তার মুখচ্ছবি আর আবিস্কারের গল্প তুলে ধরা হতো। মৃত্যুর আগে ও পর হরিপদ কাপালীর কৃতিত্বের কথা ধারাবাহিক ভাবে উঠে আসছে পাঠ্যপুস্তকে। মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিজ্ঞান বইতে হরিপদ কাপালীর বিস্ময়কর আবিস্কারের কথা তুলে ধরা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের কাছে। পাঠ্যপুস্তকে তার আবিস্কারের কথা জানতে পারছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। অষ্টম শ্রেনীর কৃষি বিজ্ঞানে কৃষক হরিপদ কাপালীর কথা প্রথম জানতে পারে দেশের শিক্ষার্থীরা। এবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড সপ্তম শ্রেনীর বিজ্ঞান বইতে “ফসলের ডাক” অধ্যায়ে হরিপদ কাপালীকে শিক্ষার্থীদের কাছে বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত করেছে। পাঠ্যপুস্তকে উল্লেখ করা হয়েছে, “তোমরা কি বিজ্ঞানী হরিপদ কাপালীর নাম শুনেছে? না শুনে থাকলে তোমাদের ষষ্ঠ শ্রেনীর ছোট ভাইবোনদের কাছ থেকে তাদের বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ বইটি চেয়ে আনতে পারো। সেখানে তার আবিস্কৃত ধানের জাত উদ্ভাবনের কথা বলা হয়েছে। দলে দলে এক সাথে ঘটনাটা পড়ে আলোচনা করো। আলোচনার পর নিচের প্রশ্নের উত্তর লেখ”। এরপর পাঠ্যপুস্তুকে উল্লেখ করা হয়েছে, “হরিপদ কাপালীর নতুন ধানের জাত কিভাবে খুজে পেলেন? যে পক্রিয়ায় তিনি নতুন ধানের জাত আবিস্কার করলেন তার ধাপগুলো কী কী ?”। এদিকে ষষ্ঠ শ্রেনীর বিজ্ঞান বইতে হরিপদ কাপালীকে বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তুকে “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি” অধ্যায়ে তিনজন বিজ্ঞানীর নাম ছবিসহ ছাপা হয়েছে। এরমধ্যে বিজ্ঞানী মাদাম কুরি, স্যার আইজ্যাক নিউটন ও ঝিনাইদহের হরিপদ কাপালী। দুইজন বিজ্ঞানী অধ্যায়ে বলা হয়েছে “বিজ্ঞান বিষয়টা সঠিক ভাবে বোঝার জন্য এবারে দুইজন বিজ্ঞানীর দুটি আবিস্কারের কথা বলা যাক। একজন বিজ্ঞানীর নাম পৃথিবীর সবাই জানে আর অন্যজনকে দেখলে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না যে তিনি একজন বিজ্ঞানী। তার কথা জানে শুধু আমাদের দেশের অল্প কিছু মানুষ”। বিজ্ঞানী স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূর্য্যের আলোকে ভাগ করে সাতটি ভিন্ন ভিন্ন রংয়ের বিশ্লষনের কথা ও আরেকটি প্রিজম দিয়ে সাতটি রংকে একত্রে করে আবার বর্ণহীন করে দেখানোর তত্ত্বটি উল্লেখ করা হয়। এই অধ্যায়ে তৃতীয় বিজ্ঞানী হিসেবে ছাপা হয়েছে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটী ইউনিয়নের হরিপদ কাপালীর নাম। তিনি সদরের আসাননগর গ্রামের কুঞ্জু লাল কাপালী এবং শ্রীমতি সরোধনী দম্পত্তির সন্তান। ১৯৯৫ সালে তিনি অজ্ঞাত জাতের একটি ধান আবিস্কার করে কৃষিতে অবদান রাখেন। পরবর্তীতে সেই নতুন জাতের নাম দেয়া হয় “হরিধান”। ২০১৭ সালের ৬ জুলাই ৯৪ বছর বয়সে এই বিজ্ঞান মনস্ক জাত কৃষকের মৃত্যু হয়। এদিকে দুইজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর পাশে হরিপদ কাপালীর নাম ‘বিজ্ঞানী’ হিসেবে উঠে আসায় উচ্ছাসিত হয়েছেন ঝিনাইদহের মানুষ। ষষ্ঠ শ্রেনীর বইয়ে বিজ্ঞানী হরিপদ কাপালীকে যশোর এলাকার একজন সাধারণ চাষি হিসেবে ভুল তথ্য দেয়া হলেও তার নতুন জাতের ধান আবিস্কারের পুরো কাহিনী স্থান পেয়েছে। আলোচনার শেষে বলা হয়েছে, “তোমাদের এই দুইজন বিজ্ঞানীর কথা আলাদাভাবে বলা হয়েছে বোঝানোর জন্য যে, বিজ্ঞান আসলে শুধু বড় বড় ল্যাবরেটরি এবং দক্ষ অভিজ্ঞ বিজ্ঞানীদের জন্য নয়। একজন সাধারণ মানুষের যদি বৈজ্ঞানীক মন থাকে তাহলে তিনিও বিজ্ঞানে অবদান রাখতে পারেন। বিজ্ঞান এক ধরণের জ্ঞান যেটি যুক্তিকর্ত, পর্যবেক্ষন এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা দিয়ে যাচাই করতে পারি, কিন্তু মনে রাখবে যে, সব ধরণের জ্ঞানই কিন্ত বিজ্ঞানের ক্ষেত্র নয়। আমাদের চারপাশে যে বাস্তব জগৎ আছে, সেটি হচ্ছে বিজ্ঞানের ক্ষেত্র। অর্থাৎ প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক ঘটনা হচ্ছে বিজ্ঞানের ক্ষেত্র”। হরিপদ কাপালীর নামের নামের পাশে “বিজ্ঞানী” কথাটি উল্লেখ করে দেশবাসি ও নতুন প্রজন্মের কাছে পরিচিত করার বিষয়ে সাধুহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী নাজির উদ্দীন বলেন, আমি গর্বিত যে আমার ইউনিয়নের সন্তান হরিপদকে বিজ্ঞানী হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তিনি বলেন, পৃথিবী খ্যাত বিজ্ঞানীদের পাশে হরিপদ কাপালীর নাম থাকা মানে তার আবিস্কারের প্রতি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোড সুবিচার করেছে। তিনি বলেন, পাঠ্যপুস্তকে হরিপদ কাপালীকে যশোর এলাকার হিসেবে পরিচতি করা হয়েছে যা সংশোধন হওয়া দরকার। তিনি তো ঝিনাইদহ সদর উপজেলার আসাননগর গ্রামের বাসিন্দা। সঠিক ইতিহাসটা তুলে ধরা হোক। তা না হলে নতুন প্রজন্ম তার জন্মের স্থান সম্পর্কে জানতে পারবে না।

One thought on “পৃথিবীখ্যাত বিজ্ঞানীদের পাশে ঝিনাইদহের হরিপদ কাপালীল নাম!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *