প্লাস্টিকের গ্যাস ব্যাগের ব্যবহারে জানমালের ঝুঁকি বাড়ছে পাকিস্তানে

Share Now..


গ্যাস সংরক্ষণের জন্য পাকিস্তানিরা ক্রমবর্ধমানহারে প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহার করছেন, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং জানমালের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে৷ এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে জার্মানি সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে।দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চরসদ্দা জেলার একটি দরিদ্র এলাকায় থাকেন মধ্যবয়সী গৃহকর্মী মাসুমা বিবি৷ দুই বছর আগেও তিনি কাঠ দিয়ে রান্না করতেন, কিন্তু সেটা থেকে নির্গত ক্ষতিকারক গ্যাস ও কণাসমূহ শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা তৈরি করে৷ এখন তিনি গ্যাসের উপর নির্ভর করছেন যা সংরক্ষণ করা হয় এক ধরনের প্লাস্টিকের ব্যাগে৷

এইসব ব্যাগে সরু মুখনল ও গতিনিয়ন্ত্রক কপাট শক্তভাবে লাগানো থাকে৷ গ্যাস পাইপলাইন নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত দোকানগুলোতে এই ব্যাগে প্রাকৃতিক গ্যাস ভরা হয়৷ সেখান থেকে কিনে মানুষ ছোট একটি বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে গ্যাস ব্যবহার করে৷

একজন ব্যবহারকারীর মতে, ব্যাগে গ্যাস ভরতে এক ঘণ্টার মত সময় লাগে আর রান্নাঘরে গ্যাস সরবরাহ করার জন্য একটি কম্প্রেসরের দরকার হয়৷

যদিও গ্যাসের জন্য এই ধরনের ব্যাগের ব্যবহার বাড়ছে, কিন্তু এটি জানমালের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক৷

‘‘এই প্লাস্টিকের ব্যাগগুলো গ্যাস বিস্ফোরণ ঘটায় বলে সতর্কতা করা হয়েছে৷ তবে প্রথমত, আমি এই জাতীয় কোন দুর্ঘটনার কথা শুনিনি এবং দ্বিতীয়ত, যদি সেটা সত্যিও হয় আমাদের (দরিদ্র মানুষের) অন্য অন্য বিকল্প নেই,’’ বলছিলেন মাসুমা বিবি৷

ঘাটতির মধ্যে গ্যাস সরবরাহ হ্রাস

পাকিস্তানে জ্বালানির উৎসগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস সবচেয়ে সস্তা যা ব্যাপকভাবে খাবার রান্না ও উষ্ণতার জন্য ব্যবহৃত হয়৷ কিন্তু গ্যাসের মজুদ কমে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ বাড়ি, ফিলিং স্টেশন এবং শিল্পে সরবরাহ হ্রাস করতে বাধ্য হয়েছে৷

গ্যাসের অভাব ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে এবং এর প্রতিবাদে মানুষ আন্দোলন শুরু করেছে৷ গ্যাস সংরক্ষণ ও পরিবহনের জন্য ব্যবহৃত সিলিন্ডারগুলোর উচ্চমূল্য সমস্যাটিকে আরও জটিল করে তুলেছে৷

নাজিবুল্লাহ খান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, কার্বন ইস্পাত বা ইস্পাতের অ্যালয় দিয়ে তৈরি গ্যাস সিলিন্ডারের দাম প্রায় ১০ হাজার পাকিস্তানি রুপি (প্রায় পাঁচ হাজার টাকা), যা অনেক পরিবার, দোকানদার এবং ব্যবসার জন্য দুর্মূল্য৷

‘‘আকারের ভিত্তিতে প্রতিটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য গ্যাস ব্যাগের মূল্য ৫০০ থেকে ৯০০ রুপি (২৫০ থেকে ৫০০ টাকা) এবং প্রতিটি কম্প্রেসরের দাম দেড় হাজার থেকে দুই হাজার রুপি৷ শহর ও গ্রামে মানুষ উভয়ই এগুলো ব্যবহার করে,’’ বলেন তিনি৷

বিপদ ও গ্যাসব্যাগ রোধে অভিযান

বিপদজনক আখ্যায়িত করে সম্প্রতি গ্যাস সংরক্ষণের জন্য প্লাস্টিকের ব্যাগ ব্যবহারের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করেছে কর্তৃপক্ষ৷

ইসলামাবাদভিত্তিক পাকিস্তান ইন্সটিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসের বার্ন কেয়ার সেন্টারের মেডিকেল অফিসার ড. কুরাতুলাইন বলেন, প্রতিদিন প্রায় আটজন রোগী গ্যাস সংক্রান্ত দুর্ঘটনার শিকার হয়ে চিকিৎসা জন্য আসে, যাদের এক বা দুইজনের অবস্থা থাকে গুরুতর৷

তিনি বলেন, ‘‘বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রান্নার চুলার বিস্ফোরণে নারীরা আহত হয়৷ বাড়ির ভিতরে গ্যাস নির্গমনের কারণে ম্যাচ জ্বালালে বা বৈদ্যুতিক স্পার্কের মাধ্যমে বিস্ফোরণে মানুষ পুড়ে আহত হয়৷’’

One thought on “প্লাস্টিকের গ্যাস ব্যাগের ব্যবহারে জানমালের ঝুঁকি বাড়ছে পাকিস্তানে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *