ফসল ঘরে উঠবে তাই রাত জেগে পাহারা

Share Now..

শৈলকুপা প্রতিনিধি ঃ

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মাঠের পর মাঠ পেঁয়াজ ক্ষেত নিয়ে মহা চিন্তায় কৃষকেরা। চলছে পেঁয়াজ তোলার মৌসুম তবে তার আগেই চোরচক্র হানা দিচ্ছে পেঁয়াজের ক্ষেতে। ক্ষেত থেকেই চুরি হয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজ।
এদিকে, পেঁয়াজ চুরি ঠেকাতে মাঠেই টানানো হয়েছে তাবু । চোর ধরতে তাবুর ভেতরে ওৎ পেতে থাকছে ১৫-২০ জন করে যুবক-বৃদ্ধ। কারও হাতে টর্চ লাইট আবার কারও হাতে লাঠি। সারারাত জেগে পালাক্রমে এভাবে চলছে পাহারা।

শৈলকুপার মনোহরপুর গ্রামের মাঠে শাহিন নামের এক যুবকের পেঁয়াজ চুরির ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে গ্রামটিতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান পাহারাদাররা। গ্রামটির বাসিন্দা রিয়াজুল জানান, তার ৫বিঘা পেঁয়াজ রয়েছে যা ঠেকাতে রাত জেগে দিচ্ছেন পাহারা। প্রতিক’ল আবহাওয়া থাকায় পেঁয়াজের ফলন কম হওয়া ও অতিরিক্ত খরচ হওয়ায় এমনিতেই মাথায় হাত, তার উপর চোর চক্রের হানা। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। পেঁয়াজের দাম ভালো না হলে স্বর্বস্ব খোয়াবেন বলছেন তিনি। তাই শেষ সম্বলটুকু রাত জেগে পাহাড়া দিচ্ছেন। এমন পাহারা দেয়ার কথা জানান জিকরুল, রাজিব, লিটন, আরাফাত, জনি,রনি,রাজু সহ অনেকেই ।

ঘটনার সরেজমিন গেলে দেখা যায় নতুন নতুন দৃশ্য। রাত ১০ টা,মাঠের ঠিক মাঝখানে আলো জ¦লতে দেখা যাচ্ছে। এগিয়ে যেতেই বোঝা গেলো এটা তাবু। তার ভেতরে ১৫-২০ জন মানুষ কাথা-কম্বল গায়ে দিয়ে বসে আছে, আবার ঘুম তাড়াতে কারো কারো হাতে কিছু শুকনা খাবার, কেউ কেউ খাচ্ছে মুড়ি ।
এভাবে মাঠে তাবু টাঙ্গানো প্রসঙ্গে হুমায়ুন মিয়া নামের এক ব্যক্তি বললেন, আর ১০-১৫ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ উঠানো যাবে কিন্তু চুরি হয়ে যাবার ভয়ে দলবদ্ধভাবে রাত জেগে পেয়াজ ক্ষেত পাহারা দিতে হচ্ছে।

এদিকে শৈলকুপার ৯নং মনোহরপুর, ১২ নং নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়ন সহ বিভিন্ন ইউনিয়নে পুলিশের পক্ষে করা হয়েছে মাইকিং। কোন ধরনের চুরি, জোর পূর্বক পেঁয়াজ তুলে নেয়া, সামাজিক বিরোধে পেঁয়াজ লুটপাট ঠেকাতে এমন ভ’মিকা নিয়েছে পুলিশ। নিত্যানন্দনপুর ইউনিয়নে বিট পুলিশিং এর দায়িত্বে থাকা এসআই রেজাউল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ ক্ষেতের মালিক নিজেও ক্ষেতের ফসল তুলতে পারবে না, অনুমতি নিতে হবে প্রশাসনের। যাতে কৃষকেরা স্বস্তিতে নিজেদের ফসল ঘরে তুলতে পারে সেকারণে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

শৈলকুপার সারুটিয়া ইউনিয়নে বড় ধরনের দুশ্চিন্তায় রয়েছে কৃষকেরা। তাদের পেঁয়াজ সহ সব ধরনের চৈতালী ফসল নিয়ে চিন্তায় রয়েছে প্রান্তিক চাষিরা। ইউনিয়নটিতে ৫টি খুনের ঘটনায় নানা ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়ে। ফসলের ক্ষেত, গরু-ছাগল লুটপাট, জমি জবরদখল এসব যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

শৈলকুপার বিভিন্ন এলাকায় চোরচক্র আর দুর্বৃত্তদের হানা নিয়ে অবশ্য কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে করণীয় কি বা এখনো কোন সুরাহা দেয়া হয়নি কৃষকদের, মাঠে দেখা যায়নি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদেরও।
তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের শৈলকুপা উপজেলা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন জানান, বিষয়টি দুঃখজনক কিছু এলাকা থেকে এমন চুরির খবর পাচ্ছেন কৃষকদের কাছ থেকে। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে জানানো হয়েছে বলে জানান।

প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় ব্যাপকভাবে পেঁয়াজ চাষ করে কৃষকেরা। জেলার ভেতরে সবচেয়ে বেশী পেঁয়াজ হয় এ উপজেলাতে। এখানকার পেঁয়াজ যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। শৈলকুপাতে গত বছর পেয়াজ চাষ হয় ৭হাজার ৮শত ৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ১লক্ষ ১৬হাজার ৫শ টন পেয়াজ। এবছর পেয়াজ চাষের লক্ষমাত্র ধরা হয়েছে ৭হাজার ৯শ৬৬ হেক্টর জমি। তবে লক্ষ মাত্রার চেয়েও বেশী পরিমান জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছে কৃষকেরা। এবছর পেঁয়াজ চাষ হয়েছে ৮হাজার ৪শ ৫ হেক্টর জমিতে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *