বয়স একটি সংখ্যা মাত্র
স্বপ্ন কুমার মজুমদারের সেই কবিতার কথা মনে পড়ে যায়, হয়তো আমার যাচ্ছে বয়স বেড়ে,/ তাই বলে কি শখ দেব সব ছেড়ে?/ না হয় কিছু চুল পেকেছে, দূরেও নয় কেউ রেখেছে,/ তাই বলে কি অমনি যাব হেরে!/ বাড়ছে বয়স! গেলই না হয় বেড়ে!’
বয়স নেহাত সংখ্যা বা বছরের হিসেবে আটকে নয়। তবে সময় দ্রুত যেতে পারে, আবার দীর্ঘায়িত মনে হতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের কী করার আছে? আছে অনেক কিছুই। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ভুলে যাওয়া স্বভাব, স্মৃতিলোপ বা আলসেমির প্রভাব অনেকেই এড়াতে পারেন না। শরীরেও বিভিন্ন অসুখ বাসা বাঁধে। পরিবর্তন আসতে শুরু করে ত্বকে। মেজাজও ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। বিষণ্নতার ভূত মাথা থেকে তাড়ানো যায় না। শরীরের অসঙ্গতি লুকোতে নানা ধরনের ঔষধ খাওয়ার অভ্যাস গড়েন অনেকে। তবে অত ভাবারও কিছু নেই। জীবনে এত ভাবার আসলে প্রয়োজন হয় না অনেক সময়। কারণ:
সামাজিক নিন্দা পিছু লেগেই থাকবে
সবসময় সামাজিক নিন্দাই যে আমাদের ব্যতিব্যস্ত রাখে বিষয়টি এমনও নয়। অনেক সময় সামাজিক নানা মন্তব্যও আমাদের কষ্ট দেয়। বিশেষত নারীকে শারীরিক নানা বিষয়েও অনেক মন্তব্য সইতে হয়। অনেক সময় পদমর্যাদা বয়স পরিমাপের ডিসাইডিং ফ্যাক্টর হতে পারে। পুরুষদের অনেকেই মাথায় কলপ ব্যবহার করেন। কিন্তু নারী সামান্য হেয়ার স্টাইল করলে, চুল ভিন্নভাবে বাঁধলেই শুরু হয় সমালোচনা। নারীর পোশাক নিয়ে তর্ক তো বহু পুরোনো। সামাজিক নিন্দা বা সমালোচনা নারীদের অবদমনের একটি বড় বিষয়। কিন্তু সেদিকে আদৌ মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ কোথায়! সমন্বয় করে নারীকে চলতে হয়। তবে বয়সটা বাড়লে কিছুটা হলেও ইতিবাচকভাবে দেখা জরুরি সব।
ডায়েটের হিসেব
দশ-বিশ বছর আগে দাই-নানি বয়সের নারীরা ডায়েট নামক শব্দ শুনেছেন কি-না সন্দেহ আছে। সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস গড়ে না উঠলে ডায়েট বা ব্যায়াম কাজে আসবে না। অধিকাংশ নারীই জিমে যান। অনেকে ক্র্যাশ ডায়েট করে কষ্ট করেন। সাময়িক লাভ হয়। আবার ওজন বাড়ে। স্ট্রিটফুড, ফাস্টফুড, স্ন্যাকস আইটেমের এখন অভাব নেই। সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকেই অনেকে বাড়িতে খাওয়া এড়ান। বাইরে গেলেই নানা উপলক্ষে স্ট্রিট কি ফাস্টফুড খেতে হয়। হেলদি লাইফস্টাইলের বিষয়টি মাথাতেই থাকে না। অথচ হেলদি লাইফস্টাইল যে খুব জটিল তা নয়। সকালে উঠে চিরতার রস, ইসবগুলের ভুষি বা যষ্টিমধু খাওয়া গেলে ভালো। দৈনিক আমলকি বা ফাইবারসমৃদ্ধ কিছু ফল খাওয়া যেতে পারে। হেলদি স্ট্রিটফুড যেমন ছোলা, ভুট্টা, পেঁপে, আনারস, পেয়ারা ইত্যাদি তো আছেই। আজকাল গ্যাসের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। তারা এই খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমেই তার নিরসন ঘটাতে পারেন। মেথি, কালিজিরা, সিনামেন একসঙ্গে বেটে বা গুঁড়া করে ডেইলি ১ চামচ খাওয়া যেতে পারে। চায়ে চিনি বাদ দিন। খাবারে আলাদা লবণ কমান। ভাতের পরিমাণ কমান। ডায়েটে যুক্ত করুন লাল আটার রুটি, ব্রাউন ব্রেড। তারমানে এই নয় যে পছন্দের খাবার একেবারেই নয়। তবে জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
বয়স ফোবিয়া নারীর
নারীদের বয়সফোবিয়া একটু বেশিই। সামাজিক নিন্দা, সাংস্কৃতিক গঠন-গড়নের ফলেই বয়স সম্পর্কে নারীদের একধরনের হীনমন্যতা তৈরি হয়। অধিকাংশ নারীই তাদের বয়স কমিয়ে দেখতে পছন্দ করেন। এটি সাংস্কৃতিক নির্মাণ। কারণ সমাজে তাদের বয়স সম্পর্কে রয়েছে নেতিবাচক মন্তব্য। চল্লিশের পর একজন নারী যদি কোনোদিন ঘুরতে যাওয়ার আবদার করেন তাহলে দেখা গেল কেউ বলবে, ‘ঘোরার বয়স আছে আর?’ আবার একটু রঙিন জামা পরলেই বলবে, ‘খুকি সাজতে চাও?’ এসব মন্তব্যই বলে দেয় নারীর বয়স সম্পর্কে সমাজ রক্ষণশীল। তাই নারীকেও বয়সের ব্যাপারে রক্ষণশীল হতে হয়। পঞ্চাশে বা পরে ভালো থাকতে হলে সেটার প্র্যাকটিস শুরু করতে হবে আগে থেকেই। কাজের চাপে সংসারের ফাঁদে পড়ে খেলাধুলা বাদ দিলেও হাঁটা / জিম / যোগ ব্যায়াম আর সাঁতারটা চালু রাখুন সপ্তাহে মিনিমাম ৩ থেকে ৪ দিন। তার সঙ্গে ডায়েট। ত্বকের রুটিনচর্চা না করলে বয়স লুকোনোর খেলাতেই মত্ত থাকতে হবে। ভুলবেন না-আপনার সৌন্দর্য সুন্দর ত্বকে আর পজিটিভ মনে। পুরোনো দিনের মতোই ঘরোয়া টোটকাতে ফিরতে হবে। সেটা নারী-পুরুষ সবার ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। আমাদের নারীদের শরীরে বিরাট একটা ধকল যায়-সন্তানের জন্মের সময়। তাই রুটিন জীবনচর্চায় ফিরে যাওয়া জরুরি। সঙ্গে প্রয়োজন রুপচর্চায় রুটিন মনোযোগ। দিনশেষে বয়স একটা সংখ্যা। আর নারীর বয়স বিষয়ক ভাবনা সমাজের চাপানো।