বাঁহাতিদের এগিয়ে থাকার কারণ 

Share Now..

সাধারণত, মানুষ বাঁ দিককে নেতিবাচক বা বেঠিক হিসেবে দেখতে অভ্যস্ত, বিশেষ করে যখন ডান হাত বা রাইট শব্দটি ইতিবাচক ধারণার সঙ্গে জড়িত। ছোটবেলায় যারা বাঁ হাতে লেখেন, তারা প্রায়ই শুনেছেন যে বাঁ হাতে লেখা সঠিক নয় এবং তাদেরকে ডান হাতে পেনসিল ধরতে বলা হয়েছে। তবে প্রতিভা এমন একটি বিষয় যা সহজে দমিয়ে রাখা যায় না। আজকাল বাঁ হাতে লেখাকে বিশেষ গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট, যেমন রোনাল্ড রিগ্যান, জর্জ বুশ, বিল ক্লিনটন, এবং বারাক ওবামা ছিলেন বাঁহাতি। শিল্প জগতে মাইকেলেঞ্জেলো এবং লিওনার্দো দা ভিঞ্চির মতো প্রতিভাবান ব্যক্তিরাও বাঁ হাতে ‘সিস্টিন চ্যাপেল’ এবং ‘মোনালিসা’ সৃষ্টি করেছেন। ধনকুবের বিল গেটস এবং ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গও বাঁ হাতেই অধিকাংশ কাজ সম্পাদন করেন। যারা বাঁ হাতে লেখেন, খাওয়া-দাওয়া করেন, বা বিভিন্ন কাজ করেন, তাদের দৃষ্টিভঙ্গিও সাধারণত ভিন্ন হয়। মস্তিষ্কের ডান পাশের অংশটি সৃজনশীল কাজের সঙ্গে জড়িত, এবং বাঁ হাত ব্যবহারকারীদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক ও কল্পনাশক্তি আলাদাভাবে প্রকাশ পায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাঁহাতিদের মস্তিষ্কের দুই পাশই সক্রিয় থাকে, যা ডানহাতিদের তুলনায় তথ্য দ্রুত অনুধাবনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ব্রিটিশ রাজপরিবারের প্রিন্স উইলিয়াম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং উইনস্টন চার্চিলও বাঁহাতি ছিলেন। জাস্টিন বিবার, লেডি গাগা এবং অপরাহ উইনফ্রের মতো বর্তমান প্রজন্মের তারকারাও বাঁহাতে কাজ করেন। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন এবং দার্শনিক অ্যারিস্টটলও এই তালিকায় আছেন। তবে যেসব দেশে বাঁ হাতে খাওয়া অশোভন মনে করা হয়, সেখানে বাঁহাতি মানুষদের কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বাঁ হাতে খাওয়া বা কিছু দেওয়া-নেওয়াকে অভদ্রতা হিসেবে দেখা হয়। বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ বাঁহাতি, এবং তাঁদের নিয়ে কিছু মজার তথ্যও রয়েছে।

গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে বাঁহাতি চালকরা ডানহাতিদের চেয়ে বেশি সফল। উদাহরণস্বরূপ, যেখানে ৪৭ শতাংশ ডানহাতি চালক প্রথমবারেই চালক পরীক্ষায় সফল হন, সেখানে বাঁহাতি চালকদের সংখ্যা ৫৭ শতাংশ। বাঁহাতিরা সাধারণত দ্রুত টাইপ করতে পারেন, একসঙ্গে দুটি কাজ করতে সক্ষম হন, নিজেদের ওপর বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখেন, এবং তুলনামূলকভাবে বেশি আয় করেন।

বাঁহাতি মানুষদের বিশেষভাবে তুলে ধরতে ১৯৭৬ সালে ডি আর ক্যাম্পবেল ‘বাঁহাতি দিবস’ পালন করেন, যিনি লেফট হ্যান্ডার্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯৯২ সালে এই ক্লাবের উদ্যোগে দিনটি বড় করে উদযাপন করা হয়। এই দিবসের মূল উদ্দেশ্য ছিল ডানহাতি মানুষের দুনিয়ায় বাঁহাতিদের সুবিধা এবং অসুবিধাগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা। আজকের দিনে বাঁহাতি মানুষের স্বতন্ত্রতা এবং তাদের বিশেষত্ব উদযাপন করার পাশাপাশি, তারা প্রতিদিন যেসব সমস্যার মুখোমুখি হন, সেগুলো নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *