বাতের ওষুধ হিসেবে চীনে বিক্রি হচ্ছে বাঘের মূত্র

Share Now..

বাতের ওষুধ হিসেবে বাঘের মূত্র বোতলে ভরে বিক্রি করছে চীনের দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ সিচুয়ানের ইয়ান বিফেংশিয়া ওয়াইল্ডলাইফ জু নামের একটি চিড়িয়াখানা। ওষুধের নাম দেওয়া হয়েছে মেডিসিনাল টাইগার ইউরিন।

প্রতিটি বোতলে রয়েছে ২৫০ মিলিগ্রাম পরিমাণ ‘ওষুধ’ এবং এক একটি বোতলের দাম ৫০ ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৮৪৭ টাকা)। হাসাপাতালের এক কর্মকর্তার বরাতে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, বোতলভর্তি যেসব ‘ওষুধ’ বিক্রি হচ্ছে, সেগুলো মূলত সাইবেরিয়ান টাইগারের মূত্র। ইয়ান বিফেংশিয়া চিড়িয়াখানাটি বেশ বড় আকারের এবং সমৃদ্ধ। সেখানে সাইবেরিয়ান বাঘের জন্য পৃথক জায়গা রয়েছে। সেখান থেকেই সংগ্রহ করা হয় এই মূত্র।

তবে ওষুধ হিসেবে বোতলে ভরার আগে কিংবা গ্রাহকদের কাছে বিক্রির আগে এই মূত্র জীবাণুমুক্ত করা হয় কি না— সে প্রশ্নের কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি ওই কর্মকর্তা।

কীভাবে এই ‘ওষুধ’ ব্যবহার করতে হবে— সে বিষয়ক একটি নির্দেশনা অবশ্য দিয়েছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। সেখানে দু’ভাবে ওষুধটি ব্যাবহার করা যাবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে- হোয়াইট ওয়াইনের (একপ্রকার মদ) সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণে ওষুধ এবং আদাকুচি মিশিয়ে তা আক্রান্ত স্থানে মালিশ করা অথবা সরাসরি পান করা। তবে কারো যদি অ্যালার্জির সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে তাকে ‘ওষুধ’ পানের পরিবর্তে মালিশ করার পরামর্শ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

অবশ্য টাকা থাকলেই যে এই ‘ওষুধ’ তাৎক্ষণিকভাবে কিনতে পারা যাবে— এমন নয়। কারণ চিড়িয়াখানা কৃর্তপক্ষ প্রতিদিন মাত্র ২ বোতল ওষুধ বিক্রির অনুমতি দিয়েছে। তাই গ্রাহককে অর্ডার দিয়ে বেশ কয়েকদিন অপেক্ষা করতে হয়।

এর আগে ২০১৪ সালে ইয়ান বিফেংশিয়া ওয়াইল্ডলাইফ জু একটি রিয়েলিটি শো’র আয়োজন করেছিল। সেই শো’তে কয়েকজন সেলিব্রেটিও এসেছিলেন। সাইবেরিয়ান বাঘের মূত্রভর্তি এক একটি বোতল সেই সেলিব্রেটিদের উপহার হিসেবে প্রদান করেছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে সেসময় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছিল।

প্রসঙ্গত, চীনে দুই ধরনের হাসপাতাল রয়েছে— আধুনিক পশ্চিমা ধাঁচের হাসপাতাল এবং চীনের ঐতিহ্যগত ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতির হাসপাতাল। হুবেই প্রদেশের প্রধান ঐতিহ্যগত হাসপাতালের একজন ফার্মাসিস্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, বাঘের মূত্র মালিশ করলে বা পান করলে বাতের ব্যাথা সারে— এমন দাবির কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের এ ধরনের উদ্যোগ শুধু জনমন ও বহির্বিশ্বে চীনের ঐহিহ্যগত ওষুধ ও চিকিৎসাপদ্ধতি সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাবই সৃষ্টি করবে না, বরং বাঘ সংরক্ষণের যে উদ্যোগ চীনের সরকার নিয়েছে— তাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।

এ ব্যাপারে ওই চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, কিন্তু কোনো কর্মকর্তাই মন্তব্য করতে রাজি হননি। একজন কর্মকর্তা শুধু বলেছেন, বাঘের মূত্র বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে তাদের। সরকারের কাছ থেকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এ লাইসেন্স নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *