বার্সেলোনায় ব্রাজিলের ‘ছোট বাঘ’

Share Now..

লাতিন আমেরিকাকে ‘ফুটবলারের খনি’ বললে ভুল বলা হবে না। দুনিয়া কাঁপানো ফুটবলারদের সংখ্যা লাতিন অঞ্চলেরই বেশি। এবার এলাকাটাকে ছোট করে যদি শুধু ব্রাজিলের কথা যদি বলা হয়? বিশ্বসেরা সব ফুটবলারই দিয়েছে ব্রাজিল। পেলে থেকে শুরু করে হালের ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, আরও কত কত সব নাম।

আবার প্রতিভার অপচয়ও আছে ব্রাজিলের ফুটবলে। ইউরোপিয়ান ফুটবলে পাড়ি দিয়ে পা হড়কানো ফুটবলারের সংখ্যাও কম নয়। তবে মোটা দাগে ব্রাজিলিয়ানদের দাপট ইউরোপিয়ান ফুটবলে সবসময়ই বেশি। তাই তো ব্রাজিলের ঘরোয়া ফুটবলে কেউ আলো ছড়ালেই চোখ পড়ে ইউরোপের নামি ক্লাবগুলোর। অমনি নেমে পড়ে ‘যুদ্ধে’। কে কার আগে খেলোয়াড়টিকে দলে আনতে পারবে, চলে প্রতিযোগিতা। সেই প্রতিযোগিতা শেষে ইউরোপিয়ান ফুটবলে সবশেষ সংযোজন ভিতর রোকি।

এ বছরের লাতিন আমেরিকার অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপে আলো ছড়িয়ে লোভনীয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। চোখ পড়ে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর। প্যারিস সেন্ত জার্মেই, চেলসি, আর্সেনাল, বায়ার্ন মিউনিখ, লিভারপুলের রাডারে ছিলেন রোকি। তবে সবাইকে পাশ কাটিয়ে এই ব্রাজিলিয়ান তরুণ বেছে নিয়েছেন বার্সেলোনাকে। এই খবর নতুন নয়। গত জুলাইতেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল রোকি নাম লেখাচ্ছেন কাতালান ক্লাবটিতে। সেই সময়টাও চলে এসেছে। বুধবার নতুন ঠিকানায় যোগ দিতে বার্সেলোনায় পৌঁছে যান তিনি।

বয়স মাত্র ১৮। পেশাদারি ফুটবলে আছেন মোটে তিন বছর। তারপরও এই তরুণকে দলে পেতে কেন এত আগ্রহ ছিল ইউরোপিয়ান জায়ান্টদের? কেনই-বা বার্সেলোনা ঘরে তুললো তাকে? ব্রাজিলে রোকিকে ডাকা হয় ‘তিগ্রিনিয়ো’ বা ‘ছোট বাঘ’ নামে। মাঠে তিনি সত্যিই বাঘ। আক্রমণভাগে ‘দ্বিতীয় স্ট্রাইকার’ হিসেবে যেমন খেলতে পারেন, তেমনি উইঙ্গার হিসেবেও ভড়কে দিতে পারেন প্রতিপক্ষকে। ১৮ বছর বয়সেই খেলার যে ধার দেখিয়েছেন, তাতে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে তার থাকা স্বাভাবিক।এর ওপর ছিল লাতিন আমেরিকার অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের পারফরম্যান্স। এ বছর অনূর্ধ্ব-২০ পর্যায়ের মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতেছে ব্রাজিল। তাদের শিরোপা জেতার পথে রোকির ছিল ৬ গোল।

২০০৫ সালে ব্রাজিলের তিমোতেও’র জন্ম রোকির। ছোটবেলা থেকেই তার ঝোঁক ছিল ফুটবলে। একসময় ভালোবাসার বাঁধনে আটকে যান খেলাটির। এরপর থেকে ফুটবলই তার ধ্যান-জ্ঞান। ১০ বছর বয়সে আমেরিকা মিনেইরোর যুব দল দিয়ে ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন শুরু। পরে ক্রুজেইরোর যুব দল পেরিয়ে সেখানেই মাত্র ১৬ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলে পা রাখেন।
ক্রুজেইরোতে খেলেছেন অবশ্য মোটে এক বছর। ততদিনে নজরে পড়ে গেছেন আতলেতিকো পারানেন্সের।

গত বছরের এপ্রিলে এই ক্লাবটিতে রোকি নাম লেখান ৪ মিলিয়ন ইউরোতে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। তার অভিষেক মৌসুমেই পারানেন্সে খেলে কোপা আমেরিকার ফাইনাল। যদিও শিরোপা জিততে পারেনি। তবে এই টুর্নামেন্টে রোকির পারফরম্যান্স ছিল অসাধারণ। যে কারণে ছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা একাদশে। ছয় ম্যাচে ২ গোলের পাশাপাশি ছিল ২ অ্যাসিস্ট।

সেই রোকিই এখন বার্সেলোনার। এক বছরেরও কম সময়ে তার দাম বেড়েছে আট গুণ। বার্সেলোনা যদিও তার ট্রান্সফার ফি প্রকাশ করেনি। তবে ইউরোপিয়ান মিডিয়ার খবর, রোকিকে পেতে কাতালানদের খরচ করতে হচ্ছে ৪০ মিলিয়ন ইউরো।
ব্রাজিলিয়ান তরুণ ফরোয়ার্ডের ন্যু ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা ছিল সামনের মৌসুমে। তবে ছয় মাস আগেই চলে এসেছেন। বার্সেলোনা এক বিবৃতিতে নিশ্চিত করেছে, সাড়ে ৭ বছরের চুক্তিতে ২০৩১ সাল পর্যন্ত ন্যু ক্যাম্পে থাকবেন রোকি। বাইআউট ক্লজ ৫০০ মিলিয়ন ইউরো।

গ্রীষ্ম বাদ দিয়ে জানুয়ারির দলবদলেই রোকির আসার কারণ বার্সেলোনার ইনজুরি-সমস্যা। চলতি মৌসুম শেষ হয়ে গিয়েছে গাভির। এই অবস্থায় লা লিগা কর্তৃপক্ষ রোকিকে সাইন করার অনুমতি দিয়েছে। তাই চলতি মৌসুমের বাকি সময় ধারে যোগ দিচ্ছেন রোকি। স্থায়ী চুক্তি কার্যকর হবে সামনের মৌসুম থেকে।

রোকির প্রতি ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর চাহিদা কেন, সেটা নিশ্চয় এতক্ষণে বোঝা গেছে। কিন্তু বার্সেলোনার অন্য লক্ষ্যও আছে এখানে। সাম্প্রতিক সময়ে বার্সেলোনার সেরা স্ট্রাইকার ছিলেন লুই সুয়ারেস। কাতালানরা নাকি রোকির মধ্যে সুয়ারেসকে খুঁজে পেয়েছে। তার মানসিকতা ও বৈশিষ্ট্যে উরুগুইয়ান স্ট্রাইকারের ছাপ। তাছাড়া রবার্ত লেভানদোভস্কিও ক্যারিয়ারের শেষলগ্নে। তার উত্তরসূরি হিসেবেই রোকিকে ঘরে তুলেছে স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা।

রোকি বাঁ পায়ের খেলোয়াড়। তবে ডান পায়েও কম যান না। দুই পায়েই গড়ে দিতে পারেন ম্যাচের ফল। যদিও রোকির মূল অস্ত্র গতি ও শারীরিক শক্তি। প্রতিপক্ষের রক্ষণের সামনে তিনি আরও বেশি ভয়ঙ্কর। তাকে আটকাতে গিয়ে প্রতিপক্ষরা ফাউল করে বসে নিজেদের সীমানায়। ফলে বারবার পেনাল্টি ‘উপহার’ পায় রোকির দল।

তার সামর্থ্য বুঝতে দেরি হয়নি বার্সেলোনার। এক বছরের চেষ্টার পর ঘরে তুলতে পেরেছে ব্রাজিলিয়ান তরুণকে। আগামী ২ জানুয়ারি খুলবে স্প্যানিশ ফুটবলের শীতকালীন দলবদলের জানালা। সেদিন আনুষ্ঠানিক চুক্তি সাক্ষর হলে ৪ জানুয়ারি লাস পালমাসের বিপক্ষেই বার্সেলোনায় অভিষেক হয়ে যেতে পারে ব্রাজিলের ‘ছোট বাঘ’-এর।

ব্রাজিলের ফুটবলে বাঘের মতোই ছিল রোকির পারফরম্যান্স। হিংস্র ও সুযোগ-সন্ধানী। ইউরোপের কঠিন ফুটবলে কতটা ছাপ ফেলতে পারবেন তিনি, সেটিই এখন দেখার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *