‘বিএনপিকে আর ছাড় দেবে না ১৪ দল’

Share Now..
  • নির্বাচন নস্যাৎ করতে চাইলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে:আমু
  • বিএনপি রাজপথ থেকে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাবে: মেনন
  • বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রের মুখোশধারী সন্ত্রাসী দল: ইনু
  • নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে: শেখ শহীদ
  • আমেরিকা ও জামায়াত বাংলাদেশের একটি অপশক্তি: দিলীপ বড়ুয়া
  • ইত্তেফাক রিপোর্ট

আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নেতারা বলেছেন, দেশের বিচার বিভাগকে বিতর্কিত ও অপদস্থ করতে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রধান বিচারপতির বাসায় হামলা করেছে বিএনপি। দেশকে অকার্যকর করতে, পাকিস্তান বানাতে যারা সংবিধানের ওপর আঘাত করছে, তাদের আর ছাড় দেওয়া হবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে কোনও আপস  বা সংলাপ হবে না। বিএনপি নামক অপশক্তিকে নির্মূল করতে হবে। বিদেশিরা বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নয়, অসাংবিধানিক সরকার নিয়ে আসতে চায়।

সোমবার বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কেন্দ্রীয় ১৪ দল আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। বিএনপি-জামায়াত কর্তৃক ‘পুলিশ হত্যা, রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে অগ্নিসংযোগ, প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার’ প্রতিবাদে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

সভাপতির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্নয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু এমপি বলেন, বিএনপি বিদেশি প্রভুর ওপর ভর করে আন্দোলন করছে। আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নস্যাৎ করতে চাইলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে।

আমির হোসেন আমু বলেন, ‘বিএনপি সন্ত্রাস-নৈরাজ্য করেছে ২০১৩-১৪ সালে, এবার আবার শুরু করেছে। ইসরায়েল যেমন গাজার ওপর হামলা করছে, বিএনপিও তাই শুরু করেছে। বিচার বিভাগকে অপদস্থ করার জন্য প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। দেশকে অকার্যকর করতে, পাকিস্তান বানাতে যারা সংবিধানের ওপর আঘাত করছে, তাদের আর ছাড় নয়।’ তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। এর বাইরে আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য করলে সমুচিত জবাব দেওয়া হবে। দেশের জনগণের জানমাল রক্ষায় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। অবরোধে আর যাতে কোনও নৈরাজ্য করতে না পারে, তাদের প্রতিহত করতে রাস্তায় থাকতে হবে নেতাকর্মীদের। এখন থেকে শুরু করে নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে ১৪ দল।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি বলেন, বিএনপি আবারও লেজ গুটিয়ে পালাবে। বিদেশিদের লক্ষ্য সুষ্ঠু নির্বাচন নয়। পৃথিবীজুড়ে আমেরিকা তাণ্ডব চালাচ্ছে। বিএনপি জামায়াতকে দিয়ে বাংলাদেশে তাণ্ডব চালাতে চায় আমেরিকা। বিএনপি রাজপথ থেকে আবারো লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

জাতীয় পার্টি-জেপি’র মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য-বেশি বিদেশি চক্রান্ত চলছে। বিএনপির টেইক ব্যাক বাংলাদেশ মানে হলো, বাংলাদেশকে আবারও দুর্ভিক্ষে ও অন্ধকারে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং আগামী নির্বাচনে সবাইকে উন্নয়ন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু এমপি বলেন, বিএনপি হচ্ছে গণতন্ত্রের মুখোশধারী সন্ত্রাসী দল। জাতীয় ঐক্যের নামে রাজাকার জঙ্গি জামাতের সাথে কোন মিটমাট হবে না। নির্বাচনকে জঙ্গি মুক্ত রাখতে পুলিশ হত্যাকারী, বিচারপতির ওপর হামলাকারীদেরকে আটক করে কারাগারে রাখতে হবে। তিনি বলেন, ‘বিএনপির নব্য উপদেষ্টা পিটার হাস পুলিশ হত্যার পক্ষে দাঁড়িয়েছে। রাষ্ট্রদূত থাকার যোগ্যতা হারিয়েছে পিটার হাস।’ তিনি বলেন, শনিবারের ঘটনায় বিএনপি যে নৃশংস পুলিশ হত্যা, পুলিশ বাসে অগ্নিসংযোগ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করেছে। তারা পরিকল্পিতভাবে সন্ত্রাসী-জঙ্গি হামলা চালিয়েছে। 

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন, আমেরিকা ও জামায়াত বাংলাদেশের একটি অপশক্তি। তত্ত¡াবধায়ক সরকারের কথা বলছে বিএনপি। কিন্তু তারা জানে না কেমন হবে সেই সরকার। এবার তত্ত¡াবধায়ক সরকার হবে চার পাঁচ বছরের জন্য। আমাদের দেশকে বানানো হবে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের চাটুকার। তাই মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অপশক্তিকে প্রতিহত করে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করতে হবে।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১৪ দলের ঢাকা মহানগরের সমন্বয়ক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, ‘আবার বাসে আগুন দিলে, নৈরাজ্য করলে বাংলাদেশ থেকে বিএনপিকে বিতাড়িত করা হবে। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির ভরসা বিদেশি প্রভু। তাদের ওপর ভর করে আপনাদের আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে। আহ্বান জানাবো, এখনো সময় আছে আন্দোলন-আন্দোলন খেলা বন্ধ করে নির্বাচনে আসুন।

জাতীয় পার্টি-জেপি’র প্রেসিডিয়াম সদস্য সাদেক সিদ্দিকী বলেন,  দেশে গণতান্ত্রিক, সাংবিধান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিগুলোর আরও ঐক্যবদ্ধ করা জরুরি। শুধু মুখে নয়, আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনেও ঐক্যের প্রতিফলন থাকতে হবে। জাতীয় পার্টি-জেপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় যুব সংহতির কেন্দ্রীয় সভাপতি অ্যাডভোকেট এনামুল ইসলাম রুবেল বলেন, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোন বিকল্প নেই। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে না পারলে দেশে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে।

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য সালাহউদ্দিন মাহমুদ, জাসদের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, গণআজাদী লীগের সভাপতি এসকে শিকদার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। জনসভায় ব্যাপক মানুষের সমাগম ঘটে। আওয়ামী লীগের পাশাপাশি ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলো খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেয়। বিকাল ৩টার দিকে জাতীয় পার্টি-জেপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও জাতীয় যুব সংহতির সভাপতির অ্যাডভোকেট এনামুল ইসলাম রুবেল মিছিল নিয়ে সমাবেশে আসেন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *