বিদ্যুতের আসা-যাওয়ায় গ্রাহকরা ক্ষুব্ধ
দেশে গ্যাসের পাশাপাশি বিদ্যুত চাহিদা অনুযায়ী পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। রোজার শুরুতেই লোডশেডিং এবং বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার খেলায় বিপাকে পড়েছেন প্রায় সব এলাকার মানুষ। তবে শহরের চেয়ে গ্রামীণ এলাকার মানুষ অপেক্ষাকৃত কম বিদ্যুত পাচ্ছে। বিশেষ করে সেহরি ও ইফতারের সময় বিদ্যুত না পেয়ে হতাশা ও ক্ষোভ বাড়ছে অনেকের মধ্যে। এই সংকটকালীন সময়ে ধৈর্য ধারণ করার জন্য বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় গ্রাহকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
গরম, রমজান এবং সেচ মিলিয়ে দেশে চলতি এপ্রিলে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা চলছে। কিন্তু রমজানের প্রথম দিনেই গত শনিবার দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র বিবিয়ানায় ছয়টি কূপ থেকে বালু উঠতে থাকায় গ্যাস উত্পাদন বন্ধ করে দিতে হয়। ফলে দৈনিক প্রায় ৪২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি দেখা দেয়। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম চড়া থাকায় সক্ষমতায় অর্ধেক দৈনিক ৫০ কোটি ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে। দেশে আগে থেকেই দৈনিক প্রায় ৮০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি ছিল।
এর সঙ্গে এই দৈনিক ৯২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ ঘাটতি পরিস্থিতি নাজুক করে তুলেছে। স্থানীয় গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘসময় ধরে স্থবির থাকায় এ অবস্থ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে সবচেয়ে বেশি বিদ্যুত উত্পাদন করা হয় গ্যাস থেকে। গ্যাসের উত্পাদন কমায় বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোতে প্রায় ৪০-৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বিকল্প জ্বালানি তেল এবং কয়লায় উত্পাদন কিছুটা বাড়িয়ে ঘাটতি কিছুটা কমানো গেলেও সংকট দূর করা যাচ্ছে না। ১০ এপ্রিল থেকে এলএনজি সরবরাহ কিছুটা বাড়ানো যাবে। তখন সংকট আরো কিছুটা কমবে।
এমন অবস্থায় দেশের প্রায় সব জেলায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। ইত্তেফাকের গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর ও দিনাজপুরের প্রতিনিধিরা জানান, গত রবি ও সোমবার জেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকায় দৈনিক ২ ঘণ্টা থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুত ছিল না। বিদ্যুত না পেয়ে অনেক গ্রাহক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। গত সোমবার টাঙ্গাইলের মধুপুরে ঘনঘন লোডশেডিং ও দীর্ঘ সময় বিদ্যুত না থাকায় স্থানীয়রা অতিষ্ঠ হয়ে বিক্ষোভ মিছিল এবং স্থানীয় পল্লী বিদ্যুত সমিতির অফিস ঘেরাও করে।
এ সময় অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভয়ে অফিস থেকে পালিয়ে যায়। ঐ এলাকায় গত রবিবার রাত থেকে টানা ১০ ঘণ্টা মধুপুর শহর ফিডারে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ ছিল। বিদ্যুত, গ্যাস না পেয়ে বিভিন্ন জন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিক্ষুব্ধ পোস্ট দেন।
তবে অনেক পল্লী বিদ্যুত সমিতি গ্রাহকদেরকে আগাম লোডশেডিং ও সতর্কতা বার্তা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে। সোমবার নাটোর পল্লী বিদ্যুত সমিতি-২ জানায়, ঐ দিন সন্ধ্যায় তাদের এলাকায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭৭ মেগাওয়াট। বিপরীতে সরবরাহ পেয়েছে ৬১ দশমিক ৫ মেগাওয়াট। অর্থাৎ সাড়ে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত লোডশেডিং করতে হয়েছে। নোটিশে এবং ফেসবুক বার্তায় সমিতিটি জানায়, দেশের গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উত্পাদন কেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের চাপ কমে যাওয়ায় বিদ্যুত উত্পাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
আবার একই সময়ে রমজান মাস শুরু ও প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ার কারণে বিদ্যুতের চাহিদা অত্যধিক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুত সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সন্ধ্যাকালীন পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। রোজায় সময়ে এই লোডশেডিংয়ের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বিদ্যুতের এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা না পর্যন্ত জনগণের ধৈর্য ও সহযোগিতা কামনা করা হয়। বিদ্যুত বিভাগের প্রাক্কলন অনুযায়ী চলতি এপ্রিল মাসে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার ৭৬৬ মেগাওয়াট। এটি গত বছর ছিল ১৪ হাজার ৭৩৫ মেগাওয়াট।