বিনোদন জগৎ: কাজ দিয়ে মুগ্ধতা ছড়ানো সেরা ১০

Share Now..

না, কোনো বক্স অফিসের টাকা গুনে নয়। বক্স অফিসের হিসেবও নেই এ দেশে। তবে গেল বছর শোবিজে নানান চর্চা বা অচর্চার ভেতরে যারা সত্যিকার অর্থেই নিজের কাজ দিয়ে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন—তাদেরই ১০ জনকে নিয়ে এই প্রতিবেদন। এই তালিকা আরো দীর্ঘ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রথম কিস্তিতে ১০ জন তারকাকে নিয়ে তৈরি করা হলো।

শাকিব খান : নিজেকে ছাড়িয়ে বহুদূর

এ বছর শাকিব খানকে নিয়ে যখন নানান কন্ট্রোভার্সির সংশয় ছিল। ঠিক সে সময়ে শাকিব নিজের ক্যারিয়ারকে থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি ঘুরিয়ে নিলেন। শুধু ঘুরিয়ে ফেলাই নয়। দারুণভাবে ঈর্ষণীয় জায়গা করে নিলেন দীর্ঘদিনের মেয়াদে! গেল বছর স্ত্রী-সন্তানের নানান বাহাসসহ গুঞ্জনেই মুখরিত ছিলেন। গেল বছরের প্রায় পুরোটা আমেরিকাতে ছিলেন গ্রিন কার্ড নেবার আশায়। সে সময় আলোচনা হচ্ছিল যে, শাকিবের সময়, এই বুঝি শেষ হয়ে এলো। কিন্তু হিমেল আশরাফের ‘প্রিয়তমা’ মুভি দিয়েই যেন নতুন এক শাকিব ধরা দিলো। বিশেষ করে এই ছবিতে শাকিবের বৃদ্ধলুকের পোস্টারটি ভাইরাল হয়। ছবিটি টানা প্রায় ২ মাস একাধিক সিনেমা হলে ব্যবসা করে। প্রযোজক মারফত ঘোষণা হয়—ছবিটি বাংলা ছবির পুরোনো রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। যদিও এই রেকর্ড ভাঙা নিয়ে কিছুটা বিতর্কও তৈরি হয় একাধিক মহলে। তবে এত কিছুর পরও শাকিব খানের এই ফেরাটা ছিল দুর্দান্ত। ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রের পর ‘প্রিয়তমা ’ বছরের সেরা ব্লক বাস্টার মুভি। এর পরপরই অনেকটা শাহরুখ খানের ফরম্যাটে একসাথে তিন নির্মাতার সাথে চুক্তিবদ্ধ হলেন শাকিব খান। অনন্য মামুনের ‘দরদ’, হিমেল আশরাফের ‘রাজকুমার’ ও রায়হান রাফির ‘তুফান’।

আরিফিন শুভ : ম্যাচিউরড ইন মুজিব

তাকে বলা হতো ইন্ডাস্ট্রিতে দীর্ঘদিন লেগে থাকা তারকা। ‘ছুঁয়ে দিলে মন’, ‘ঢাকা এটাক’ ছাড়া ক্যারিয়ারে উল্লেখ করার মতো মুভি কম তার। সুদর্শন কিন্তু অভিনয়ে আরেকটু সময় দিলে আরো ভালো করবেন, এরকম মন্তব্যই পাওয়া যেত তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের মুখ থেকে। কিন্তু শ্যাম ব্যানেগাল পরিচালিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজেট ও বড় ব্যাপ্তির চলচ্চিত্র মুজিব-এ যেন জাত চেনালেন তিনি। ছবিটিতে জাতির জনকের চরিত্রে রূপদান একটা কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল তো বটেই। অনেকেই বলছিলেন—বঙ্গবন্ধুকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা অতো সহজ নয়। কিন্তু সেই কঠিন কাজটিই করে দেখিয়েছেন অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে। সিনেমাটি দেখার পর আরিফিন শুভ’র অভিনয়ে মুগ্ধ না হয়ে পারেননি কেউ।

জয়া আহসান : তারকার দেশ থাকতে নেই!

দেশে অভিনয়ের ক্ষেত্রে নতুন ছবির ঘোষণা দিয়েছেন অনেক আগে। কিন্তু একের পর এক ছবি করে চলেছেন টলিউডে। দেশে যেন কিছু ইভেন্ট আর জাতীয় পুরস্কার নেবার জন্যই তাকে সরব দেখা গেছে। সারাবছর ভারতীয় মিডিয়াতেই চর্চা হয়েছে জয়া আহসানকে নিয়ে। এটা এক হিসেবে যেমন বাংলাদেশি নির্মাতাদের ব্যর্থতা। অন্যদিকে একজন বাংলাদেশি শিল্পী হিসেবে গ্লোবাল প্লাটফর্মে দারুণ সাফল্য জয়া আহসানের। সেই সাফল্যের অঙ্কেই এবারে জয়া আহসান বছরের শেষ ভাগে ‘কড়ক সিং’-এ বলিউডের পঙ্কজ ত্রিপাঠির সাথে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেন। অনিরুদ্ধ রায়ের নির্মাণে জয়া আহসানের এই মুভিতে অভিনয় ভারতীয় গণমাধ্যমের একাধিক জরিপে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়।

আফরান নিশো : সফলতা অতঃপর

তাকে বলা হয় ছোট পর্দার সুপারস্টার। গত কয়েকবছর ধরে সবচেয়ে বহুল চর্চিত বিষয় ছিল ‘কবে ফিল্মে আসবেন আফরান নিশো’। সেই প্রশ্নের জবাব দিলেন এ বছর। সুড়ঙ্গ ছবিটি সফলতার মাধ্যমে অভিনয়ের ক্যারিয়ারে মঞ্চ ছাড়া বাকি সব ফরম্যাটেই নিজেকে সেরা প্রমাণ করলেন। হুমায়ূন ফরিদীর প্যাটার্ন ফলো করা এই গুণী অভিনেতা চলচ্চিত্রে নিয়মিত হোক এটা তার ভক্তদের আকুল চাওয়া। কিন্তু ‘সুড়ঙ্গ’ ছবিটি সুপারহিট হবার পরও সেই একই প্রযোজকের ব্যানারে একাধিক ছবি সাইনিং-এর ঘোষণা আসবে এমনটাই প্রত্যাশা করেছিলেন সকলে। অথচ সুড়ঙ্গ’র প্রযোজক তার পরবর্তী ছবির ঘোষণা দেন শাকিব খানকে নিয়ে। তাই এ বছরটা আফরান নিশো একটি সফল ছবি দিয়েও নতুন ছবির ঘোষণার বিষয়টি রহস্যজালে আটকে রাখেন।

আজমেরী হক বাঁধন : হিসেবি অভিনেত্রী

রেহেনা মরিয়ম নূরের বাঁধন তার অভিনয় আর ক্যারিয়ার সচেতনতায় এখন যথেষ্ঠ ম্যাচিউরড ও বোল্ড। তাই সময়টাকে দারুণভাবে কাজে লাগিয়েছেন। বলা যায় খুব হিসেব করেই পথ এগুচ্ছেন। কাজ হাতে নিচ্ছেন। ওটিটিতে কাজ করেছেন। তা নিয়ে অভিনয়ের প্রশংসা যেমন পেয়েছেন তেমনি বছর শেষে বিশাল ভরদ্বাজের পরিচালনায় ‘খুফিয়া’ নিয়ে দারুণভাবে আলোচনায় আসেন। বলিউডের বিখ্যাত অভিনেত্রী টাবুর সাথে সেয়ানে সেয়ানে অভিনয় প্রশংসিত হয়েছে সর্বমহলে।

আসিফ ইকবাল : গীতিকবিদের বলয়ভাঙার বছর

বাংলা চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকে কারা কারা গান লিখবেন তা দীর্ঘদিন ধরে জুটি বা সিন্ডিকেট হিসেবেই কাজ করে আসছে। তবে বলয় ভেঙে যখন নতুন ধারার নির্মাতা বা সংগীত পরিচালকেরা কাজ শুরু করেন তখন সেই দৃশ্যপট কিছুটা হলেও পরিবর্তন হতে থাকে। গীতিকবি আসিফ ইকবাল আধুনিক বা রক গানে সিদ্ধহস্ত এবং দারুণ সফল একজন। তবে প্লেব্যাকে যেন তার ব্যাটে বলে হচ্ছিল না। এ বছর যেন গানে আসিফ ইকবালের বছর হয়ে উঠলো। প্রহেলিকা মুভিতে ‘মেঘের নৌকা’ গানটির পর প্রিয়তমা মুভির টাইটেল গানটি রেকর্ড গড়ে। একই সাথে এই গানগুলোর সাথেই জনপ্রিয় এই গীতিকবি প্লেব্যাকে নিয়মিত হলেন। তবে আসিফ ইকবালের পাশাপাশি চলতি বছর প্লেব্যাকে আলো ছড়িয়েছেন আরো দুই গীতিকবি জাহিদ আকবর ও সোমেশ্বর অলি। তারা দুজনেই মূলত আধুনিক গানের সফল গীতিকার হলেও প্লেব্যাকে তাদের নিজেদের প্রমাণের সুযোগ পাননি এতদিন।

কোনাল : ক্যারিয়ারের বৃহস্পতি

কণ্ঠশিল্পী কোনালের ক্যারিয়ারের সর্বশ্রেষ্ঠ বছর এটি। হয়তো শিল্পী তার ২০২৩- এর ক্যালেন্ডার নিজের আলমারিতে গুছিয়ে রাখবেন! প্লেব্যাকের সাফল্যই একজন শিল্পীর চূড়ান্ত সাফল্য ধরে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন ধরে গান গাইলেও স্টেজে অন ডিমান সং তার হয়ে উঠছিলো না। অবশেষে এ বছর যেন সোনায় সোহাগা হিসেবে ধরা দিলো। সুপারস্টার শাকিব খানের ছবিতে নিয়মিত কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সুুযোগটাও দারুণভাবে কাজে লাগালেন তিনি। চিরায়ত নিয়মে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সমকালীন সেরা তারকার ছবিতে গানের সুযোগটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সেই সুযোগটা শিল্পী তার মেধা,যোগ্যতায় সেরা জায়গা করে নেয়। সেদিক দিয়ে ‘লিডার আমিই বাংলাদেশ’ মুভিতে কোনাল ইমরানের গাওয়া ‘সুরমা সুরমা’। ‘প্রিয়তমা’ চলচ্চিত্রের টাইটেল গান তুমুল জনপ্রিয়তা কোনালের ক্যারিয়ারে সাফল্যের পালক ছুঁলো। এছাড়াও মাহফুজ আহমেদের কামব্যাক মুভি ‘প্রহেলিকা’র মেঘের নৌকা গানটিও ছিল শ্রোতাদের ভালো লাগার প্লে-লিস্টে।

নাসির উদ্দিন খান : নতুন তারকা!

২০২৩ এ ছোটপর্দা বা বড় পর্দা কিংবা ওটিটি প্লাটফর্মে একজন অভিনয় শিল্পী ধুমকেতু হয়ে এসেছেন। এই শোবিজে নতুন করে জায়গা করে নিলেন—তার নাম নাসির উদ্দিন খান। আশফাক নিপুনের সিরিজ মহানগরে ছোট্ট একটি চরিত্রে কাজ করেই যেন নিজেকে জানান দিচ্ছিলেন তিনি। এরপর তাকে পুরোপুরি কাজে লাগালেন নির্মাতা শিহাব শাহীন। ‘মাইসেল্ফ অ্যালেন স্বপন’ সিরিজটি অনেকদিন মনে রাখার মতো একটি কাজ। যেখানে দুর্দান্তভাবে নজর কেড়েছেন এই অভিনেতা। ঠিক তার পরপরই প্রহেলিকা ছবিতে নাসিরের চরিত্রটি নিয়ে ব্যাপক চর্চা হয়েছে। এই ছবিতেও তিনি ছক্কা পিটিয়েছেন। সারাবছরই তিনি বাংলাদেশের ইরফান খান বা বাংলাদেশের নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী হিসেবে তুলনায় ছিলেন। নিজ অভিনয় প্রতিভাতেই যেন উজ্জ্বল এই শিল্পী।

ইশান : নীরব ঘাতকের মতো জনপ্রিয়

‘আমার বন্ধু চিকন কালিয়া, দেইখো আসিয়া’। এই গানে নেই বড় কোনো ব্যানারের ঢাক ঢোল কিংবা যা নামিদামি কম্পোজারের বানানো গান না। কোনো বড় সুপারস্টারের লিপে যাওয়া কণ্ঠও না এটা। কোনো জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের গানও এটি না। এ যেন নীরব ঘাতকের মতো ভালোবাসায় বিঁধে রইল দর্শক-শ্রোতার মনের ভেতর। ‘নিঠুর মনোহর’ গানটি তেমনই এক হূদয়গ্রাহী গান। যে গানে টিকটক শুধু নয়, অগনিত মানুষ আনমনেই গুনগুন করেছেন। শিল্পীর নাম ইশান। এ বছরের তারকা কণ্ঠশিল্পী।

রায়হান রাফি : বাজি লেগে জেতা একজন

এ দেশে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচালকরা ছিলেন স্টার সুপারস্টারের ওপরে নির্ভরশীল মেকার। বড় কোনো তারকা ছাড়া ছবি নিয়ে আলোচনায় আসতে কেউই পারছিলেন না। যে কজন এসেছেন  তারাও সৌখিন। হঠাত্ হঠাত্ এক দুটি ছবি করে আবার ব্যাকফুটে। সেক্ষেত্রে বাজি লেগে দর্শককে হলে ফেরানোর নির্মাতা হলেন রায়হান রাফি। তার পোড়ামন টু সফলতার দীর্ঘদিন পর ‘পরান’ হিট হবার পর যখন ব্যাক টু ব্যাক ‘সুড়ঙ্গ’ও প্রশংসিত হলো এবং শাকিব খানের ছবির সাথে ফাইট দিয়ে সফলতা আনলো ছবিটি—তখন বলতেই হয় নির্মাতা হিসেবে অনেকদিন পর বাজি লাগা কোনো স্টার মেকার এলো বাংলাদেশে। বছরের শেষ দিকে সুপারস্টার শাকিবের সাথেও তার নতুন ছবি ‘তুফান’ এর ঘোষণা এলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *