বিপিএলেই সাইফউদ্দিনের ‘নতুন জীবন’
‘দীর্ঘ ৯ মাস পর মাঠে নেমে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা। ধন্যবাদ যারা খারাপ সময়ে পাশে ছিলেন।’- বিপিএল দিয়ে লম্বা সময় পর মাঠে ফিরে ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। শুধু তো মাঠে ফিরলেন না, পারফরম্যান্স দিয়ে জাতীয় দলের দরজায় কড়া নাড়লেন তিনি। সেই সাইফউদ্দিন সত্যিই বাংলাদেশ দলে ফিরেছেন। এমন সময়, যখন বিশ্বকাপের দল নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন নির্বাচকেরা।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এই সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচের দল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু। দেড় বছর পর জাতীয় দলে আবার সুযোগ মিলেছে সাইফউদ্দিনের। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলেও এই অলরাউন্ডারের থাকার সম্ভাবনা প্রবল। কারণ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলা দল থেকেই বেছে নেওয়ার হবে বিশ্বকাপের ‘সেরা ১৫’।
প্রথম তিন টি-টোয়েন্টির স্কোয়াডে নেই সাকিব আল হাসান ও মোস্তাফিজুর রহমান। চোট সংক্রান্ত সমস্যা না থাকলে তাদের বিশ্বকাপে থাকা একরকম নিশ্চিত। সাকিবও অলরাউন্ডার, তবে তিনি স্পিনার। অন্যদিকে মোস্তাফিজের ভূমিকা শুধু পেস বোলিংয়ে। স্কোয়াডে জায়গা পেতে তাদের দুজনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা নেই সাইফউদ্দিনের। কারণ তিনি পেস বোলিং অলরাউন্ডার।
শিগগিরই জানা যাবে বিশ্বকাপের দল। সেখানে সাইফউদ্দিন থাকুন বা না থাকুন, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের ক্রিকেটারদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন তিনি। চোট আর তিনি হাত ধরাধরি করে হাঁটছেন ক্যারিয়ারের শুরু থেকে। এক সিরিজ খেলেন তো পরের সিরিজে ছিটকে যান চোটে। তবে কখনও হাল ছাড়েননি। ফিরে আসার শপথে আরও ভয়ঙ্কর রূপে পাওয়া গেছে তাকে।
সবশেষ ঘটনা গত বিপিএলে। প্রায় ৯ মাস পর প্রথমবার মাঠে ফিরে আগুনে পারফরম্যান্স তার। কুড়ি ওভারের এই প্রতিযোগিতাই ‘নতুন জীবন’ দিয়েছে তাকে। বিপিএল মঞ্চে আলো ছড়িয়ে নিজের প্রয়োজনীয়তার কথা আরেকবার জানান দিয়েছিলেন। একটু একটু করে ভিত শক্ত করেছেন। এবার সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ স্কোয়াডের পথে শক্ত প্রার্থী সাইফউদ্দিন। প্রধান নির্বাচক লিপু যেমন জানিয়ে রেখেছেন, ‘দিনশেষে পারফরম্যান্স একটা বড় বিষয়। সাইফউদ্দিন হয়তো তার ব্যাটিংয়ে কিছুটা এগিয়ে আছেন। আবার বোলিংয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী আছে। তাই জিম্বাবুয়ে সিরিজটি তার স্বরূপে ফেরার জন্য বড় একটি সুযোগ।’
পেসারদের চোট পড়ার প্রবণতা অনেক বেশি থাকে। কারও কারও তো চোটের সঙ্গে অতিমাত্রায় সখ্যতায় ক্যারিয়ারই শেষ হয়ে গিয়েছে। সাইফউদ্দিনের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারতো এমনটা। তবে তিনি লড়াকু, কঠিন পরিস্থিতি জয় করে নতুন উদ্যোমে শুরু করতে ভালোবাসেন। ২০২৪ সালের বিপিএলেও দেখিয়েছেন মনের জোর ও আত্মবিশ্বাস।
বিপিএল দিয়ে ৯ মাস পর ফিরে আদৌ পারফর্ম করতে পারবেন কিনা, সাইফউদ্দিনকে ঘিরে এই সংশয় থাকার যথেষ্ট কারণ ছিল। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই সব শঙ্কা হাওয়ায় মিলিয়ে দিলেন ফরচুন বরিশালের অলরাউন্ডার। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট। আর ব্যাটিংয়ে ১৮ বলে ২ চার ও ২ ছক্কায় করেন অপরাজিত ৩০ রান।
পরের ম্যাচ ছিল দুরন্ত ঢাকার বিপক্ষে। এবার তিনি আরও ভয়ঙ্কর। বল হাতে মাত্র ২১ রান দিয়ে তার ৩ উইকেট। ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ হয়নি। পরের ম্যাচগুলোতেও বোলিংয়ে আলো ছড়িয়েছেন।
চোটের কারণে বিপিএল শুরু করেছিলেন দেরিতে। শুরু থেকে থাকলে উইকেটসংখ্যায় সবার ওপরেই থাকতে পারতেন তিনি। এরপরও যে ৯ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন, তাতেই সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় চতুর্থ হয়ে শেষ করেছেন টুর্নামেন্ট। তার ১৫ উইকেটের বিপরীতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা সাকিব (১৭) ও শেখ মেহেদী হাসান (১৬) যথাক্রমে মাত্র ১ ও ২ উইকেট বেশি পেয়েছেন।
বিপিএলে অবশ্য ব্যাটিংয়ে খুব বেশি সুযোগ পাননি। যে কয়টিতে সুযোগ পেয়েছেন, আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে চড়াও হয়েছেন প্রতিপক্ষের বোলারদের ওপর। ৪ ম্যাচে ব্যাটিংয়ে নেমে আউট হয়েছেন মাত্র একবার। আর নামের পাশে যোগ করেছেন ৬৩ রান, যেখানে স্ট্রাইক রেট ১৮৫.৩০!
বিপিএলের ধারালো বোলিংয়ের সঙ্গে সুযোগ পাওয়া ব্যাটিংয়ে জাতীয় দলে ফেরার জোরালো দাবি জানিয়ে রাখেন সাইফউদ্দিন। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ধারাবাহিকতা ধরে রেখে জাতীয় দলের দরজা খুললেন এই অলরাউন্ডার। এবার মাঠে নামার অপেক্ষা। জিম্বাবুয়ে সিরিজে ঘরোয়া লিগের পারফরম্যান্সের ছাপ থাকলে তাকে আরও ঠেকায় কে! যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের ১৫ জনের একজন হবেন লড়াকু সাইফউদ্দিন।