বিপিএলের আয়ে ভাগ চায় কুমিল্লা, বিসিবি বলছে সম্ভব না

Share Now..

আগামীকাল মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল)। দশম বারের মতো মাঠে গড়াতে যাচ্ছে এই টুর্নামেন্ট। একাদশকে পা দিলেও এখনো এই টুর্নামেন্টকে নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। প্রায় প্রতি বছরই বিপিএল নিয়ে তৈরি হয় নানা বিতর্ক। ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিকানাও পরিবর্তন হচ্ছে প্রায় প্রতি বছর। ঠিকঠাক মতো পাওয়া যায় না টাইটেল স্পন্সর। টিভি স্বত্ব থেকেও আয় কম। এই নাই, নাই বিপিএলে একমাত্র দল হিসেবে এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরা অবস্থান ধরে রেখেছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। 

সেই সঙ্গে এখন পর্যন্ত বিপিএলের সবচেয়ে সফল দলটার নামও কুমিল্লা। বিপিএলের শিরোপা চারটা ট্রফি এখন কুমিল্লার ঘরে। সেই সঙ্গে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দলের নামও কুমিল্লা। এই ফ্র্যাঞ্চাইজির মালিক নাফিসা কামাল বিপিএল নিয়ে নিজের দলের পরিকল্পনার কথা শোনালেন। সেই সঙ্গে তিনি বিপিএল থেকে লাভের ভাগ দাবি করেছেন বিসিবির কাছে।  

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো মনে করছে, দল গঠন করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। দেশের ক্রিকেটকে সমৃদ্ধ করতে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো অবদান রাখতে এখানে তারা অর্থ বিনিয়োগ করছে। আর আয় নিয়ে যাচ্ছে বিসিবি। অন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি বিপিএল থেকে আয়ের ভাগ না চাইলেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের মালিক নাফিসা কামাল আয় দাবি করেছেন। তার কথায় ক্রিকেটপাড়ায় সরগোল উঠেছে। গুরুত্ব দিয়ে আলোচনায় এসেছে বিষয়টি।  

বিপিএল নিয়ে নানা বিষয়ে কথা বলেন নাফিসা কামাল। তিনি বলেন, ‘আমরা স্পন্সরদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাই। কারণ, আমরা পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করি। আমাদের দলে বিনিয়োগ করে স্পন্সর প্রতিষ্ঠান তাদের মূল্য পাবে। কারণ আমি তাদের সেই প্রতিদান দিয়ে আসছি। সামনে যদি স্পন্সর না পাই, তাহলে বিপিএল করব না।’ নাফিসা কামাল বেশ সাহস নিয়েই বোমা ফাটালেন। কেন থাকতে চান না তারও একটা কারণ তুলে ধরেন এই সংগঠক। নাফিসা বলেন, কারণ পকেট থেকে বিপিএল করার তো মানেই হয় না। বিপিএল থেকে যে টাকা লাভ করে বিসিবি, সেই লাভের একটা অংশ চাই আমরা। এই কথা শুধু আমি আমাদের জন্য বলছি না, এতে করে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি লাভবান হবে। এমনকি এটা বিসিবির জন্যই ভালো হবে।’

বিপিএল থেকে আয় দাবি করে নাফিসা বিসিবির সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাবও দিয়েছেন। এক টেবিলে বসে বিষয়টি সুরাহা করার প্রয়োজন মনে করছেন বিসিবির সাবেক সভাপতি আ হ ম মুস্তাফা কামালের কন্যা নাফিসা কামাল। তিনি বলেন, ‘আমরা যেন এক টেবিলে বসে কথা বলতে পারি। আমাদের মতামত প্রকাশ করতে পারি। সবাই মিলে বিপিএলটাকে আরও সুন্দরভাবে আয়োজন করতে পারি।’

শোনা যায়, বিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের খরচ করা অর্থ সাধারণত উঠে আসে না। তবে এমন কথা মানতে নারাজ নাফিসা। তিনি জানান, বিপিএল থেকে তাদের আয় ও ব্যয়ের হিসাব সমান।

ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট এখন আর শখের কোনো খেলা মনে করেন না। পেশাদারি কাঠামো নিয়ে আয়োজন করতে হয়। এখন হার জিতের মধ্যে অনেক হিসাবনিকাশ করতে হয়। বড় বাজেট রাখতে হয় খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকসহ সব খাতে। নাফিসার সাফ জবাব, ‘শুধু ভালোবাসা থেকে এটা করা সম্ভবই নয়। এটা আপনারা সবসময় বলেন যে, আউট অব লাভ আমরা করছি। ভালোবাসার জায়গা থেকে আমরা কাজটুকু করছি কিন্তু অনেক বেশি পরিশ্রম করছি, সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করছি। যেটা বাকি দলগুলো করছে না। কিন্তু স্পন্সর তো আমাদের পেতে হয়, আর্থিক দিক ঠিক রাখতে হয়। আমাদের টাকাটা তো আনতে হবে। 

নিজেদের পকেট থেকে তো পুরো বিপিএল চালাতে পারব না। এটা খুব মিথ্যা হবে যদি আমি বলি যে, আমাদের পকেট থেকে পুরো বিপিএল চালাচ্ছি। এটা সম্ভবই নয়।’ বিপিএলের লভ্যাংশ ফ্র্যাঞ্চাইজিদের দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন। সেই সঙ্গে বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অনেক ফারাক আছে বলে জানান বিসিবির এই কর্মকর্তা। সুজন বলেন, ‘আমরা যে মডেলে টুর্নামেন্ট আয়োজন করছি, এই মডেলে এটা সম্ভব নয়। আর দল মালিকরা আমাদের সঙ্গে বসলে আমরা পুরো বিষয়টি তাদের বুঝিয়ে বলব এবং আমি নিশ্চিত তারাও বুঝবেন যে, এটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সম্ভব নয়। যদিও পিএসএলের (পাকিস্তানের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট) উদাহরণ দেওয়া হয় এখন। ওখানে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি কত জানেন? স্পর্শকাতর তথ্য বলে দিতে পারছি না। শুধু এটুকুই বলি, অন্য দেশের টুর্নামেন্টের সঙ্গে আমাদের বিস্তর ফারাক আছে। এখন আয় শেয়ার করতে গেলে মডেল বদলাতে হবে। পিএসএলের ফরমুলায় গেলে যে ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি হবে, বাংলাদেশের বাস্তবতায় তা নিতে গেলে বিপিএলটা আর টেকসই হবে না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *