বেনাপোল দিয়ে ভারত যেতে নাজেহাল মানুষ

Share Now..

এস আর নিরবঃ
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ভ্রমণপ্রিয় মানুষের ঢল পড়েছে বেনাপোল চেকপোস্টে। হাজার হাজার বাংলাদেশি বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাচ্ছেন। তবে তাদের হয়রানি দেখার যেন কেউ নেই। প্রশাসনের সব দপ্তরের লোকের সেখানে আনাগোনা থাকলেও হয়রানি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার পাসপোর্টযাত্রী দুদেশের মধ্যে চলাচল করেন। ঈদের ছুটিতে বাংলাদেশি যাত্রীদের ভারতে যাওয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অন্যান্য সময়ের তুলনায় এখন দ্বিগুণেরও চেয়ে বেশি যাত্রী ভারতে যাচ্ছেন। তবে চলাচলে বেনাপোল-পেট্রাপোল চেকপোস্টে যাত্রীরা নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোদ-বৃষ্টিতে যাত্রীরা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।

মুনির হোসেন নামে একজন পাসপোর্টযাত্রী জানান, নো-ম্যানস ল্যান্ডে পৌঁছাতে সাত জায়গায় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। যাত্রীদের বেনাপোল ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করতে প্রথমে সোনালী ব্যাংক ও পেসেঞ্জার টার্মিনালে আনসার গেটে লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। ইমিগ্রেশনে কাজ ধীরগতিতে হওয়ায় প্রতিদিন টার্মিনালের সামনে ফাঁকা রাস্তায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে। সারারাত জেগে আসা যাত্রীরা রোদ-বৃষ্টিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছেন চিকিৎসা করতে যাওয়া যাত্রীরা। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু পার হতে মাত্র ৬ মিনিট লাগছে, সেখানে বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল যেতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগছে।

নো-ম্যানস ল্যান্ডে পৌঁছতে সাত জায়গায় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। ফলে এক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন তৈরি হচ্ছে। পদ্মা সেতু পার হতে মাত্র ৬ মিনিট লাগছে, সেখানে বেনাপোল থেকে পেট্রাপোল যেতে ৬-৭ ঘণ্টা সময় লাগছে।
-মুনির হোসেন, পাসপোর্টযাত্রী

ইমিগ্রেশনে প্রবেশের পর সেখানে শুরু হচ্ছে আরেকটি লাইন। বেনাপোল ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর শুরু হয় পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনের কাজ। সেখানে যাত্রী যাওয়ার পর পাসপোর্ট দেখিয়ে ভারতীয় গেট পার হয়ে করোনা পরীক্ষার লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে সবাইকে। যাদের ডাবল ডোজ টিকা দেওয়া আছে তাদের ছেড়ে অন্যদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এখানে একজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে সময় লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। এরপর ইমিগ্রেশনে বায়োমেট্রিক টেস্টসহ পাসপোর্টে সিল করতে আরও এক ঘণ্টা লেগে যাচ্ছে। এভাবে বেনাপোল ও পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে নানা হয়রানির শিকার হয়ে যাত্রীদের ভারত ভ্রমণে যেতে হচ্ছে।

ভারতে চিকিৎসা করতে যাওয়া সুবীর কুমার বলেন, বেনাপোল ও পেট্রাপোলে যে হয়রানির শিকার হয়েছি তা বলে শেষ করা যাবে না। আনসার গেট থেকে শুরু করে ইমিগ্রেশন পর্যন্ত কয়েক জায়গায় টাকা দিতে হয়েছে। চিকিৎসা করতে মাঝে মাঝে ভারতে যাই। তবে এখনকার মতো আগে কখনো এতো হয়রানির শিকার হইনি।

ঢাকা-কলকাতা বাস সার্ভিসের ম্যানেজার বাবলুর রহমান বলেন, আমাদের পরিবহন ব্যবসা হলো সেবামূলক কাজ। কিন্তু সেই সেবাটা এখন আমরা করতে পারছি না। আগে যাত্রীরা বেনাপোল ইমিগ্রেশনে প্রবেশ করার সময় আমাদের প্রতিনিধি সেখানে উপস্থিত থেকে ইমিগ্রেশনের কাজ করিয়ে দিতো। তখন ইমিগ্রেশনের যাত্রীরা কোনো হয়রানির শিকার হতেন না। বর্তমানে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আমাদের কোন প্রতিনিধিকে চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভেতরে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় ভারত ভ্রমণে যাওয়া যাত্রীদের নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর বেনাপোল দিয়ে ভারতে যাতায়াত বেড়েছে। তবে দু’দেশের ইমগ্রেশনের যাত্রীদের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যাওয়ার যাত্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করছে। পদ্মা সেতুর সুফলের কারণে অন্যান্য সময়ের চেয়ে এখন দ্বিগুণ যাত্রী ভারতে যাচ্ছেন। তবে ভারত ভ্রমণে যাওয়া যাত্রীরা যেসব অভিযোগ করেছেন তা সঠিক নয়। যাত্রীদের সুবিধার জন্য বেনাপোল ইমিগ্রেশনে জনবল বাড়ানো হয়েছে। রোগীদের জন্য অতিরিক্ত চারটি ডেস্ক করা আছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *