ভারতে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দাপট কবে কমবে?

Share Now..


অ্যাম্বুলেন্স চালকদের অসহযোগিতার জেরে একের পর এক মৃত্যুর অভিযোগ। মুখ্যমন্ত্রী কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কিন্তু সিন্ডিকেটের দাপট কি কমবে? কোথাও মৃত্যুর পর হাসপাতাল থেকে ঘাড়ে চাপিয়ে শব বহন। কখনো মৃত শিশুর বাবা ব্যাগে সন্তানের দেহ পুরে পাড়ি দিচ্ছেন দীর্ঘ পথ। কোনো ক্ষেত্রে বার বার বাধার ফলে বিলম্বের জেরে হাসপাতালের পথে রোগিণীর মৃত্যু। সাম্প্রতিক কালে নানা ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছে মুর্শিদাবাদে। উত্তরবঙ্গের কালিয়াগঞ্জে ব্যাগে ভরা শিশুর দেহ নিয়ে যখন তোলপাড় থামেনি, তার মধ্যেই সামনে এসেছে সালারের এক নারীর মৃত্যুর ঘটনা।সালারের বাসিন্দা চাঁদতারা বিবি কিডনির অসুখে ভুগছিলেন। চিকিৎসক সালার থেকে বর্ধমান মেডিক্যালে পাঠানোর পরামর্শ দিলে পরিচিত অ্যাম্বুলেন্স ডেকে রোগিণীকে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করেন পরিবারের সদস্যরা। অভিযোগ, স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স চালকরা বাধা দেন। সেই বাধা পেরিয়ে রওনা দিলেও কিছু দূরে চাঁদতারার অ্যাম্বুলেন্স আটকে দেয়া হয়। তার পুত্র সাকিব আলি শেখের দাবি, বাইক দাঁড় করিয়ে গাড়ির গতিরোধ করে দুষ্কৃতীরা। এখানে আর এক প্ৰস্থ বাদানুবাদের ফলে মূল্যবান সময় পেরিয়ে যায়। এই বাধা পার হওয়ার কিছু পরে রোগিণী পথেই মারা যান। কলকাতা থেকে জেলায় বিভিন্ন সময় এ ধরনের অভিযোগ ওঠে। প্ৰশাসনের টনক নড়ে যখন কারো প্রাণ যায়।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ, কলকাতার বাইরে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দাপট প্রবল। সরকারি অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা থাকলেও চাহিদা অনেক বেশি। স্থানীয় চালকরা সেই সুযোগ নেন। ইচ্ছে মতো ভাড়া হাঁকান চালকরা। অসুস্থ রোগীর স্বার্থে অনেক বেশি ভাড়ায় অ্যাম্বুল্যান্স নিতে হয়। বাইরে থেকে গাড়ি বা অ্যাম্বুল্যান্স আনার উপায় থাকে না।

সেক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়তে হয় বাইরে থেকে আসা চালককে। রোগীর পরিবারকে হাসপাতাল থেকেই অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া নিতে কার্যত বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ। শহর ও গ্রামের হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি রয়েছে। এক্ষেত্রে তার কী ভূমিকা?

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির সভাপতি, তৃণমূল বিধায়ক ডা. সুদীপ্ত রায় ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশু ও তার মাকে হাসপাতালে আসা-যাওয়ার জন্য বিনা খরচে পরিষেবা দেয় রাজ্য সরকার। এছাড়া সাধারণের জন্যও বিনামূল্যের পরিষেবা আছে। তবে অস্বীকার করা যাবে না, দালালচক্র মানুষকে বিভ্রান্ত করে বাড়তি টাকা নিচ্ছে।’

গত জানুয়ারিতে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দেওয়ায় একজনকে গ্রেফতার হতে হয়। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মৃত এক রোগিণীর ভিডিও ভাইরাল হয়। অভিযোগ, তার মৃত্যুর পর শববাহী গাড়ি মেলেনি। স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্সের দাবি অনুযায়ী টাকা না থাকায় মৃতার দেহ কাঁধে করে রওনা দেন তার পুত্র।

এই ছবি ভাইরাল করার দায়ে অ্যাম্বুলেন্স সংগঠনের অভিযোগের ভিত্তিতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া অঙ্কুর দাসকে পুলিশ গ্রেফতার করে। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্তা অঙ্কুরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খারিজ করে দেন মৃতার ছেলেই। অনেকের মতে, এই ঘটনা দেখিয়ে দিয়েছে রাজ্যে সিন্ডিকেট কতটা প্রভাবশালী।

অঙ্কুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘একের পর এক ঘটনা ঘটে গেলেও অ্যাম্বুলেন্স চালকরা তাদের মনোভাব পাল্টাননি। মানবিকতা বলে কিছু নেই, সবটাই ব্যবসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশ-প্রশাসনের আরও তৎপরতা প্রয়োজন।’ অতিমারির লকডাউন পর্বে সরকার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া বেধে দেয়।

এসি গাড়ির ক্ষেত্রে প্রতি কিলোমিটার ২৫ টাকা ও নন এসি গাড়ির ক্ষেত্রে ২০ টাকা। পশ্চিমবঙ্গ ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনের ২০২০ সালের অক্টোবরের এই বিধি কোনো সময়ই কি মান্য করা হয়? এই সূত্রেই প্রশ্ন উঠছে নজরদারি নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে কড়া বার্তা দিয়েছেন।

সালারের ঘটনায় পুলিশ তিনজন চালককে গ্রেফতার করেছে। পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীও বলেছেন, ‘চালকদের জুলুম বরদাস্ত করা হবে না। দপ্তর নির্ধারিত ভাড়া নিতে হবে। প্রয়োজন হলে কম টাকায় পরিষেবা দিতে হবে।’ এই বার্তায় মানবিক আবেদন আছে। নজরদারি ও পুলিশের তৎপরতা না থাকলে শুধু আবেদনে সাড়া মিলবে কি? না চাঁদতারা বিবির মতো আরও অভিজ্ঞতাই হবে ভবিতব্য!

3 thoughts on “ভারতে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের দাপট কবে কমবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *