ভৈরব নদ দূষণে ‘দোষী’ ১০৬ জন, দ্রুতই আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বললেন জেলা প্রশাসক

Share Now..

এস আর নিরব যশোরঃ
যশোর শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানার বুক চিরে বয়ে যাওয়া ভৈরব নদ দখলের পর এখন যেন দূষণের প্রতিযোগিতা চলছে। নদের বাবলাতলা থেকে নীলগঞ্জ পর্যন্ত দুই ধারের ১০৬ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত দূষণ করে চলেছে। বাসাবাড়ির ময়লা আবর্জনা ও হাসপাতালের সোয়ারেজ লাইন নামিয়ে দেয়া হয়েছে নদে। অনেক স্থানে নদে সংযোগ দেয়া হয়েছে পৌরসভার ড্রেনের লাইন। ফলে শহরের বর্জ্য পড়ছে নদে। এভাবে নদ দূষণকারীদের
একটি তালিকা করেছে প্রশাসন। সেই তালিকা গতকাল জেলার মাসিক উন্নয়ন সভায় উপস্থান করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সূত্র মতে, ভৈরব নদ দখল ও দূষণ চলছে দীর্ঘকাল ধরেই। এ নিয়ে বহু আন্দোলন করেছেন যশোরবাসী। এর ফলে নদের পশ্চিম তীরের ৮৪টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছিল গত তিন বছর আগে। কিন্তু পূর্ব প্রান্তের দেড় শতাধিক অবৈধ দখলদার এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। আর পর্ব-পশ্চিম উভয় পান্তে নদ দূষণকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। তবে এবার ১০৬টি প্রতিষ্ঠানকে দূষণকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদপ্তর। এরমধ্যে পৌরসভার ড্রেনও রয়েছে। এদের কারণে নদের পানি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের একতা হসপিটাল, মডার্ন হসপিটাল, রেঁনেসা হসপিটাল, অসীম ডায়াগনস্টিক সেন্টার, স্ক্যান হাসপাতাল, স্ক্যান ও ইউনিক হাসপাতালের মাঝের ড্রেন, অর্থোপেডিক্স হাসপাতাল, পপুলার হাসপাতাল, লাবজোন, দেশ ক্লিনিক, কিংস হাসপাতাল ও ওই এলাকার স্বপন সরকার ও মুনছুর আহম্মেদ। এসব হাসপাতালের অভ্যন্তরে সেপটিক ট্যাংক নেই। তাদের সোয়ারেজ লাইন সরাসরি নদের পানিতে পতিত হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের বিভিন্ন বর্জ্য সরাসরি নদে ফেলা হচ্ছে।

এদিকে কাঠেরপুলের রওশন আরা’র বাসা, গীরবশাহ মাজার সংলগ্ন পৌরসভার ড্রেন, রাজধানী হোটেল সংলগ্ন পৌরসভার ড্রেন, বাবলাতলা ব্রিজ সংলগ্ন পৌরসভার ড্রেন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে পৌরসভার ড্রেন, লোন অফিস পাড়ার হাবলু, গরুর খামার মালিক মমতাজ উদ্দীন পিন্টু, লোন অফিসপাড়ার পৌরসভার ড্রেন, চার নম্বর ওয়ার্ড লিচুতলা ব্রিজ সংলগ্ন পৌরসভার ড্রেন, লিচুতলা ব্রিজ সংলগ্ন বাসিন্দা জাহাঙ্গীর কাদের, একই এলাকার মো. আসলাম ও মোহাম্মদ আলী, লিচুতলা এলাকার হাসানুর রহমান, নিচুতলা ব্রিজ সংলগ্ন নদীর বাম পাশের বিস্কুট ফ্যাক্টারি, এখানকার পৌরসভার ড্রেন, নীলগঞ্জ সাহাপাড়ার সেলিম, একই এলাকার আনিছুর রহমান, নূর মোহাম্মদ সড়কের মো. নাসিম, আনোয়ার হোসেন, বাবুল হোসেন, জাহাঙ্গীর মোল্যা, বুলু গাজী, হাবীব, পান্নু শেখ, ফজলে আলী বাবু, ইংশুল আলী, রাকিব হোসেন, দাউদ, স্থানীয় পৌরসভার ড্রেন, মহাসিন শেখ, বিকাশ বিশ্বাস, স্থানীয় পৌরসভার ড্রেন থেকে দুষিত পানি যাচ্ছে নদে।

এছাড়া মোল্লাপাড়ার জামাল শেখের স্ত্রী রিনা, ফজলুর করিম টুটুল, এলাকা ভিত্তিক ড্রেন, মোল্লাপাড়ার মাসুম খন্দকার, শফিয়ার রহমান, নীলগঞ্জের শাহেব আলী, মাসুম বিশ্বাস, মফিজ ছলেমান, হাফিজুর রহমান, ছাত্তার, ঝুমঝুমপুর নদীর পাড় এলাকার হাসানুর রহমান, আজবাহার মোল্লা, রাশিদা বেগম, ডা. শরিফুল ইসলাম, রনি সর্দ্দার, নারগিছ সামাদ, ফরিদা বেগম, ফারুখ হোসেন ও স্থানীয় পৌরসভার ড্রেন, ঝুমঝুমপুর নদীর পাড়ের কাজী বুলবুল, বুদ্ধমিয়া হাজী, পৌরসভার আরো একটি ড্রেন, নদের পাড়ের শফি, আলী হোসেন, মাসুদ, পৌরসভার আরেকটি ড্রেন, স্থানীয় হেমায়েত শেখ রপ্তম শেখ ও কাজী আবুল হোসেন নদ দূষণের তালিকায় রয়েছে। আর নদের পাড়ের শ্মশান রোডের মিজানুর রহমান, স্থানীয় পৌরসভার ড্রেন, ঝুমঝুমপুর বলিয়াডাঙ্গার রুহুল আমিন, মনিরুজ্জামান, আকরাম হোসেন, শাহাদত, সুবল’র মাছ ফ্যাক্টারি, স্থানীয় লালন ভূঁইয়া, বদিউর রহমানের স্ত্রী ফরিদা, সাইফুল ইসলাম, মাসুদ রানা, কালাম মিয়া, আব্দুল কাদের, স্থানীয় মসজিদ, রাশিদা বেগম, ইকবালের গরুর খামার, মিলন হোসেন, সাইফুল ইসলাম, স্থানীয় একটি ড্রেন, মান্নান শেখ, পৌরসভার ড্রেন ও কৃষ্ণ বিশ্বাস সমানতালে নদ দূষণ করে চলেছে।

অপরদিকে নীলগঞ্জ তাঁতীপাড়া এলাকার জাহাঙ্গীর খান, শহিদুল, আফিয়া বেগম, আসকার মুন্সি, সৈয়দ রাশেদুল, মুজিবর বেপারী, সোহেল, আমিরুল মোল্লা, শেখ আব্দুর রহিম দুষণের তালিকায় রয়েছে।

যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, গতকাল জেলার মাসিক উন্নয়ন কমিটির সভায় ভৈরব নদ দূষণকারীদের তালিকা তুলে ধরেছি। বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখবে।

এব্যাপারে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, ভৈরব নদ দূষণকারীদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত অনুযায়ী ২০১৬ সালে ২৭২ কোটি টাকার ৯২ কিলোমিটার নদ খনন প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। শুরু হয় পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’। শহর অংশের চার কিলোমিটার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছাড়া খনন কাজ করা সম্ভব ছিল না। ভৈরব নদের গর্ভে ও তার পাড়ে সরকারি জমিতে গড়ে তোলা ২৯৬ অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি উচ্ছেদের চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পরদিনই বেশ কয়েকজন নিজেদের বৈধ মালিক দাবি করে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেন। পরে তারা উচ্ছেদ বন্ধে উচ্চ আদালতের দারস্থ হন। সবশেষ ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ৮৪টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে। অবশিষ্ট দেড় শতাধিক স্থাপনা এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। গত তিন বছরে এই উচ্ছেদ নিয়ে আর টু-শব্দ শোনা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *