ভয়াবহ বন্যা মোকাবিলা করছে পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক সহায়তার আহবান জাতিসংঘের।
আবদুর রহমান খান
(ঢাকাঃ সেপ্টেম্বর ১৮ )
রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটে পর্যুদস্ত পাকিস্তানে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি।
জুলাই আগষ্ট মাসে ব্যাপক বৃষ্টিপাত এবং উত্তরের পাহাড় থেকে বরফ গলে এবারের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করেছে। গত তিন দশকের মধ্যে এ রকম ভয়াবহ বন্যা দেখেনি পাকিস্তান।
ইতিমধ্যে দেশটির এক–তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রাণহানি ঘটেছে দেড় হাজারের মত মানুষের।
সরকারী হিসেব মতে বন্যাকবলিত জেলার সংখ্যা ১১০টিতে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে বেলুচিস্তানের ১১০টি, খাইবার পাখতুনখাওয়ার ৩৩টি, সিন্ধু প্রদেশের ১৬টি আর বাকিগুলো পাঞ্জাব, গিলগিট–বালটিস্তান ও আজাদ কাশ্মীরের। সিন্ধুর কিছু এলাকা ১০ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে নদীগুলি প্লাবিত হয়ে বাঁধ ভেঙ্গে বানের পানি ঢুকে পরেছে লোকালয়ে। বন্যার কারণে কয়েক হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
আগে থেকেই সংকটে রয়েছে পাকিস্তানের অর্থনীতি। সংকট কাটাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে অর্থসহায়তা চেয়ে ধরনা দিতে হচ্ছে ইসলামাবাদকে। তার ওপর এই বন্যা বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। ভয়াবহ এ দুর্যোগের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ভাবিয়ে তুলেছে অনেককেই। বিশেষত দেশটির কৃষকদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।
দেশটির শস্য উৎপাদন এলাকা, ঘরবাড়ি, ব্যবসাকেন্দ্র, রাস্তাঘাট, সেতু—সবই বিধ্বস্ত হয়েছে বন্যায়। বন্যা কবলিত হাজার হাজার পরিবার এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। দুর্গত এলাকায় আটকে পড়া বন্যার পানিতে সৃষ্ট অস্বাস্থকর পরিবেশ , সুপেয় জলের অভাব, সেনিটেশনের সমস্যার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।
পাকিস্তানের চলমান বন্যায় প্রায় ২২ থেকে ২৪ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করছেন দেশটির অর্থনীতিবিদরা। প্রবৃদ্ধি, সম্পদ, পশুসম্পত্তি এবং অন্যান্য সব মিলিয়ে এই ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন দেশটির খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী ড. হাফিজ এ পাশা। তার আশঙ্কা এই ক্ষতির পরিমাণ ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। বাইরে থেকে প্রচুর সাহায্য এলেও তা দিয়ে সামাল দেয়া যাচ্ছে না পরিস্থিতি।
সিন্ধু নদীর আশপাশের এলাকার কৃষি উৎপাদনের জন্য খ্যাতি রয়েছে। এবারের বন্যায় নদীর পানি উপচে পড়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে টানা বৃষ্টি। তাই বন্যার পানি নদীতে গিয়ে সরতে পারছে না। ফসল তোলার আগে গমখেতগুলোর তলিয়ে যাওয়ায় উদবিগ্ন কৃষি অর্থনীতিবিদগন । পাকিস্তান জুড়ে খাবারের সংকট দেখা দিতে পারে আশঙ্কা করা হছে। এমনিতে ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে আন্তর্জাতিক বাজারে গমের সংকট দেখা দিয়েছে। এবার পাকিস্তানের গম উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা যেমন বিশ্বের জন্য বাড়তি সংকট সৃষ্টি করবে, তেমনি পাকিস্তানীদের প্রধান খাদ্য গমের জন্য হাহাকার সৃষ্টি হবে । আগামী এক মাসের মধ্যে বন্যার পানি নেমে না গেলে বা সরিয়ে নেওয়া না হলে পররবর্তী গম বপনের জন্য গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে শীতকালে খাওয়ার জন্য কোনো গম থাকবে না। বাড়তি চাপ পড়তে পারে খাদ্যপণ্যটির আপৎকালীন মজুতেও।
ওদিকে, বিশ্বের অন্যতম তুলা উৎপাদনকারী দেশ পাকিস্তান। বন্যয় তুলার উৎপাদন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারনে বিশ্ব বাজারে এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। বাড়বে সুতা এবং কাপড়ের মুল্য।
বন্যা জনিত অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের কারনে পাকিস্তানের রাজনীতি আর এক দফা অস্থিরতার মাঝে পড়বে বলে আশংকা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকগন।
জাতিসংঘের সাহায্যের আহবান
পাকিস্তানের বন্যা পরিস্তিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গতসপ্তাহে পাকিস্তানের বন্যাকবলিত সিন্ধু প্রদেশ পরিদর্শন করেছেন। ভয়াবহ বন্যায় যখন পাকিস্তান দুর্বিষহ সংকটের মুখে পড়েছে তখন দেশটির কোটি কোটি মানুষের জন্য সাহায্য সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়ে তিনি পাকিস্তান সফর করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব রাজধানী ইসলামবাদে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার পাকিস্তানের দিকে সম্মিলিতভাবে মনোযোগ দেয়া হচ্ছে না; এটি উন্মাদনা এবং সম্মিলিতভাবে আত্মহত্যা করার শামিল। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে শিল্প-উন্নত দেশগুলোর দায়িত্ব অনেক বেশি।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে যে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরিত হয় তার জন্য পাকিস্তানের দায় শতকরা এক ভাগেরও কম কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে সব দেশ বেশি ক্ষতিগ্রস্থ তার তালিকার অষ্টম স্থানে রয়েছে পাকিস্তান।
জাতিসংঘ মহাসচিব পাকিস্তানকে সহায়তা দেওয়ার জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বন্যাকবলিত পাকিস্তান পুনর্গঠনে আন্তর্জাতিক সংস্থা যে সহায়তা দিয়েছে, তা সাগরে একবিন্দু পানির মতো।
বাংলাদেশের সাহায্য প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান।
পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় বেশী ক্ষতিগ্রস্ত বেলুচিস্তানে দুর্গত পরিবারগুলোকে সাহায্যের জন্য ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সাহায্যের জন্য বিস্কুট, ড্রাই কেক, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ওরস্যালাইন, মশারি, কম্বল ও তাঁবু জরুরি ভিত্তিতে কিনে পাকিস্তানে পাঠানোর জন্য এ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
তবে, বিশ্ব পরিমণ্ডলে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে, এমন আশঙ্কায় বাংলাদেশের এক কোটি ৪০ লাখ টাকা মূল্যের মানবিক ত্রাণ সহায়তার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে বন্যাদুর্গত পাকিস্তান। বুধবার ভারতীয় বার্তা সংস্থা ইন্দো-এশিয়ান নিউজ সার্ভিসের (আইএএনএস) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।##
Victory awaits Are you ready to claim it Lucky Cola