মণিরামপুরের মনোয়ারা ক্লিনিকের মালিক ডাক্তার নাহলেও নিজেই সার্জন
এস আর নিরবঃ
যশোরের সিভিল শেখ আবু শাহিন মনিরামপুরে মনোয়ারা ক্লিনিকের বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি জানান, অভিযান কালে ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে উপজেলার মাছনা গ্রামের এনামুল হকের স্ত্রী সেলিনা খাতুনের সিজারের কাজ চলছিল।তিনি ওটি কক্ষে নিজেই প্রবেশ করে কোন সার্জন, এ্যানেসথেসিষ্ট, ডিপ্লোমা নার্স পাননি।
মঙ্গলবার দুপুরে মুমূর্ষু এক সিজারিয়ান রোগী আসেন তার ক্লিনিকে। তখন আব্দুল হাই নিজেই অপারেশন থিয়েটারে রোগীর সিজার করেন। খবর পেয়ে ওই মুহূর্তে ক্লিনিকে হাজির হন যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন। হাতেনাতে ধরে ফেলেন আব্দুল হাইকে। এসময় অপারেশন থিয়েটার সিলগালা করেন তিনি।
হালনাগাদ অনুমোদন, অজ্ঞান করার চিকিৎসক ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবিকা কিছুই নেই মণিরামপুরের মনোয়ারা ক্লিনিকে। নেই অপারেশনের চিকিৎসকও। আছে শুধু কয়টি বেড আর কয়েকজন স্টাফ। এই দিয়েই ক্লিনিক চালাচ্ছিলেন মালিক আব্দুল হাই।
অবসরপ্রাপ্ত উপ সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হলেও সিজারিয়ান রোগী এলে তিনি নিজেই সার্জন সাজেন। করেন অপারেশনও। দশ বেডের পুরনো অনুমোদন থাকলেও ভেতরে বেড বসিয়েছেন ১৮টি। এভাবেই মণিরামপুর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে দোতলা একটি ভবন ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন ক্লিনিক চালাচ্ছেন আব্দুল হাই।
বেডে অপারেশনের রোগী থাকায় ক্লিনিক খোলা রাখার জন্য সাত দিনের সময় দেন সিভিল সার্জন। সপ্তাহ পার হলে মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসারকে ক্লিনিক সিলগালা করার নির্দেশনা দেন তিনি।
উল্লেখ্য এরআগেও মনোয়ারা ক্লিনিকে সিজারের পর এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় জেল খেটেছেন মালিক আব্দুল হাই। তখনও তিনি নিজেই ওই রোগীর অপারেশন করেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। মামলাটি এখনো চলমান রয়েছে।
অভিযানে অংশ নেওয়া মণিরামপুর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. অনুপ বসু এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শুভ্রা দেবনাথ, সিভিল সার্জন অফিসের চিকিৎসক রেহেনেওয়াজ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
ডা. অনুপ বলেন, মনোয়ারা ক্লিনিকে অজ্ঞান করার চিকিৎসক (অ্যানেসথেসিস্ট)নেই।ভর্তি রোগী দেখভালের জন্যও নেই সর্বক্ষণিক কোনো চিকিৎসক নেই। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্সও নেই। পুরনো কাগজপত্র দিয়ে ক্লিনিক চালানো হচ্ছিল। তাছাড়া মালিক আব্দুল হাই এমবিবিএস ডাক্তার না হয়েও নিজে অপারেশন করেন।
ডা. বসু বলেন, রোকনুজ্জামান নামে একজনকে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক দেখানো হলেও সেই সংক্রান্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি ক্লিনিক মালিক। নিজের স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেবিকা দাবি করেছেন। এই সংক্রান্ত কোনো প্রমাণও দেখাতে পারেননি।
ডা. অনুপ বলেন, এসব কারণে মনোয়ারা ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) সিলগালা করা হয়েছে। ভর্তি রোগী সরানোর জন্য সাত দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। এরপর ক্লিনিক সিলগালা করা হবে।
তবে ক্লিনিক মালিক আব্দুল হাই বলেন, অজ্ঞান করার ডাক্তার বাইরে ছিলেন। এ সময় সিভিল সার্জন অভিযান চালান। তিনি ছয় দিনের জন্য ওটি বন্ধ রাখতে বলেছেন।