মরা খালে পরিণত ঝিনাইদহের ১২টি নদী

Share Now..

\ আসিফ কাজল, ঝিনাইদহ \
ঝিনাইদহের ১২টি নদী এখন অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে। অবৈধ দখল, পরিবেশ দূষণ ও ফারাক্কার ভয়াল প্রভাবে নদীগুলোর মানচিত্র অনকটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। কোন কোন নদী বেদখল হয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। নদী দখল করে প্রভাবশালীরা তৈরী করেছে সুরম্য ভবন। মহেশপুর কপোতাক্ষ নদে বাঁধ দিয়ে করা হচ্ছে মাছ চাষ। কোন কোন নদীর বুকে পুকুর খনন ও ধানের আবাদ করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন খনন না করায় এক সময়ের খর¯্রােত যৌবন হারানো নদীগুলো ধুকছে বহমান ঐতিহ্য নিয়ে। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলায় মোট ১২টি নদী আছে। এ সব নদীর মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদহ-হরিণাকুন্ডু এলাকায় বেগবতি ও নবগঙ্গা, শৈলকুপায় কুমার, গড়াই, কালীগঙ্গা, মহেশপুরে বেতনা, ইছামতি ও কোদালা, কোটচাঁদপুরে কপোতাক্ষ নদ এবং ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জে ফটকি, চিত্রা ও বেগবতি। এসব নদ-নদীর দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০৩ কিলোমিটার। ঝিনাইদহ সদর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া চিত্রা নদীর অবস্থা বড়ই করুণ। নদীর বুকে মানুষ চাষাবাদ শুরু করেছে বহুকাল আগেই। নদীপাড়ের মানুষ ইচ্ছামতো মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। কোটচাঁদপুরের তালসার, ইকড়া গ্রাম, সদর উপজেলার গান্না, জিয়ানগর, কালীগঞ্জ শহরের পুরাতন বাজার, বলিদাপাড়া, হেলাই, নিমতলা ও ফয়লা এলাকায় চিত্রা নদী দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘর তৈরী করা হয়েছে। কাগজে-কলমে চিত্রা নদীর প্রস্থ দেখানো হয়েছে ৮০ মিটার এবং গভীরতা ৫ মিটার। তবে দূষণ, দখল আর ভরাটে এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। চিত্রা নদী দখল মুক্ত করতে ২০২৩ সালে তালিকা তৈরী করা হলেও প্রভাবশালিীদের বাঁধার কারণে হয়নি। শৈলকুপার একসময়ের খর¯্রােতা গড়াই ও কুমার নদে পানির অভাবে শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে একসময় বিশাল নদ-নদী ছিল। নদীর কোথায় হাটুপানি, আবার কোথাও বুকপানি। বেশিরভাগ স্থানে খননের অভাবে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। সেই ভরাট নদীর বুকে চলছে চাষাবাদ। যতদূর চোখ যায় নদ-নদীর বুকে শুধুই ফসলের ক্ষেত আর মাঝ দিয়ে মিনমিনিয়ে বহমান পানিপ্রবাহ। নদীর বুকে বোনা হয়েছে পাট। শৈলকুপার কুমার নদটি চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। ১৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে কুমার নদের পানির প্রধান উৎস ছিল মাথাভাঙ্গা। চুয়াডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া এলাকায় নদের উৎসমুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপরও কুমার নদ কালীগঙ্গা, ডাকুয়া ও সাগরখালী নদীর মাধ্যমে পানি প্রবাহ পেত। কিন্তু জিকে সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নকালে এ দুটি নদীর উৎসমুখও বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঝিনাইদহ শহরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদী এখন কচুরিপনায় পরিপুর্ন। নদীপাড়ে গড়ে উঠেছে দোকান ও বাড়ি। ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রধান ড্রেন পড়েছে নবগঙ্গা নদীতে। ফলে আবর্জনা ও বজ্র পড়ছে নদীতে। প্রবাহ না থাকায় এতে দুর্গন্ধময় হয়ে পড়েছে নদীর পানি। মহেশপুরের কোদালা নদী এখন চেনার উপায় নেই। ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য নদীর বুকে অসংখ্য পুকুর খনন করা হয়েছে। গড়ে উঠেছে বাড়িঘর। প্রায় ৩০ বছর ধরে নদীপাড়ের মানুষ আস্ত একটা নদী গিলে খাচ্ছে, অথচ কারো বাথাব্যাথা নেই। একই ভাবে ফটকী, বেতনা, বেগবতী, ভৈরব ও কালীগঙ্গা নদী মরাখালে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে প্রখভাবশালীদের দখলের কারণে নদীর চিহ্ন বিলীন হতে চলেছে। এদিকে মহেশপুরের কপোতাক্ষ নদ দখল করে মাছ চাষ করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। তারা সমিতি তৈরি করে নদের এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মাছচাষ করছেন। এতে নদে মাছ ধরা তো দুরের কথা গোসল পর্যন্ত করতে পারছেন না সাধারণ মানুষ। কপোতাক্ষ নদ দখল নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য সালাহ উদ্দিন মিয়াজী বলছেন, প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই মাছ চাষ করা হচ্ছে। এতে করে বেকারত্ব ঘুচেছে। কাজের মধ্যে থাকায় অপরাধ প্রবণতা কমে এসেছে এলাকায়। ভবিষ্যতে প্রয়োজনে কপোতাক্ষ নদ ইজারা আকারে নেওয়ার পরিকল্পনা আছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসক এস এম রফিকুল ইসলাম বলছেন নদ বা নদী উন্মুক্ত জলাশয়। সেখানে মাছ চাষ করার কোনো সুযোগ নেই। দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম জানান, খনন না করায় কুমার নদে পানি প্রবাহ থাকছে না। এমন অবস্থা বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। ইতোমধ্যে নদ-নদী খননের ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। বাজেট আসলেই খননকাজ শুরু করা হবে। তিনি আরো জানান, ‘চিত্রা নদীকে খননের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। একনেকে প্রকল্পটি পাস হলে নদী যারা দখল করেছে তাদের উচ্ছেদ করা হবে। তাছাড়া সারা জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড অবৈধ দখলদারদের তালিকা করে উচ্ছেদের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *