মহেশপুরে প্রশাসনের সহযোগিতায় চলছে অবৈধ্য ভাবে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি.হুমকিতে পরিবেশ
মহেশপুর প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের মহেশপুরে প্রশাসনের সহ যোগিতায় অবৈধ ভাবে বিশেষ চুল্লি তৈরী করে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে কয়লা। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন বনজ ও ফলজ গাছ ধংশো করে এখানে কাঠ সরবরাহ করা হয়। উপজেলার যাদবপুর ইউনিয়নের পাথরা গ্রামের স্থানীয় এক প্রভাবশালী আলাউদ্দিন গড়ে তুলেছেন এক কাঁঠ দিয়ে কয়লা তৈরির ৪টি বিশেষ ধরনের চুল্লি। এতে একদিকে, যেমন বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, পাশাপাশি সৃষ্ট হচ্ছে শ্বাসজনিত নানা ব্যাধি। অপরদিকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রেরও মারাত্মক ভাবে ক্ষতি হচ্ছে।
পাথরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাশেই অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা কয়লা তৈরির কারখানায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদফতরের কোনো অনুমোদন ছাড়াই এই কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে এলাকার প্রভাবশালী আলাউদ্দীন। বিধিনিষেধ থাকার পরও জনবসতি এলাকায় ও ফসলি জমি নষ্ট করে কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে শত শত মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে প্রতিদিন।
কয়লা শ্রমিকরা জানান, চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেয়া হয় চুল্লিতে। আগুন দেয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েকদিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়।
প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ১০০ থেকে ১৫০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ দিন। পরে কয়লা ঠান্ডা করে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চটের বস্তায় ভরে ট্রাক, পিকাপসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠানো হয়।
অবৈধ কয়লা ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন জানান,কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি অবৈধকে বলেছে। আমি কতৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কারখানা স্থাপন করেছি, আমার লাইসেন্স আছে। আমি অবৈধ্য কোন কিছুই করিনা।
পাথরা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হাসান ও বিল্লাল জানান, চুল্লির ধোঁয়ায় চোখ জ্বালাপোড়া করে, খুশ খুশে কাশি হয়। সন্ধ্যায় প্রচন্ড গন্ধে লেখাপড়া করাও কঠিন হয়ে যায়।
এলাকাবাসী জানান, কয়লা তৈরির চুল্লির কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। সেই সঙ্গে জীববৈচিত্রও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে অবগত হয়েও কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না কেন?
মহেশপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্রের আর এম ও ডাঃ রাজু আহমেদ বলেন, কয়লা তৈরিতে কাঁচা কাঠ পোড়ানোয় কার্বন ও সিসা নির্গত হয়। যে এলাকায় এসব চুল্লির মাধ্যমে কাঠ পুড়িয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা হয়, সেখানে নিশ্চিতভাবে শিশু জন্মগতভাবেই ফুসফুসের সমস্যা নিয়েই জন্ম নেবে। এ ছাড়া এসব চুল্লির ধোঁয়ায় মানুষের অ্যাজমা সমস্যা, ফুসফুসের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও এলার্জির সমস্যা এবং চোখের সমস্যাসহ নানাবিধ রোগ হতে পারে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, কাঠ পুড়িয়ে অবৈধ্য ভাবে কয়লা তৈরির বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। দ্রতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।