মিয়ানমার সীমান্তে ফের গোলাবর্ষণ: আতঙ্কে এলাকাবাসী
টানা ১০দিন বন্ধ থাকার পর ফের বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ঘুমধুম-উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তের কাছাকাছি গোলাবর্ষণ ও মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। হেলিকপ্টার থেকে নিক্ষেপিত গোলার বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে সীমান্তের এপারও। ফলে আবারও আতঙ্কে আছে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ।সোমবার (১০ অক্টোবর) রাত ৩টা থেকে নাইক্ষংছড়ির ঘুমধুম ও উখিয়ার পালংখালি এলাকার সীমান্তে গোলাবর্ষণ শুরু হয়। একই সময়ে টেকনাফের হোয়াইক্যং ও হ্নীলা ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায়ও হেলিকপ্টার থেকে গোলাবর্ষণের ঘটনা সকাল ৬টা পর্যন্ত চলেছে বলে জানিয়েছেন সীমান্তে থাকা বাসিন্দারা।
এদিকে, সোমবার (১০ অক্টোবর) দুপুরে সীমান্তের রেজুপাড়া বিওপি এলাকা পরিদর্শনে আসছেন বিজিবি মহাপরিচালক। এরই মাঝে মিয়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে ফের গোলাবর্ষণ শুরু হওয়ায় এপারে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তবে, এ নিয়ে কোন মন্তব্য নেই সীমান্তরক্ষী বিজিবির।
হোয়াইক্যং ২ নম্বর ওয়ার্ডের জেলে জবত আলী (৪০) বলেন, মিয়ানমারের ওপারে হোয়াইক্যং সীমান্তের কাছাকাছি হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া ভারি গোলা ও মর্টারশেলের শব্দে ঘুম ভাঙ্গে। ঘুম থেকে ওঠে দেখি প্রচণ্ড শব্দ আর হেলিকপ্টার থেকে ভারি গোলা ফেলার দৃশ্য। ভয় ও আতঙ্কে চিংড়ী ঘেরে মাছ শিকারে যেতে পারিনি। সীমান্ত এলাকার এ অংশে আজই এমন ঘটনা দেখলাম। গোলায় ওপারে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা যাচ্ছে।
হোয়াইক্যং ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাঞ্জরপাড়া এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন (৪৫) বলেন, হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকায় মিয়ানমারের ওপারে চলমান ঘটনা আমাদের নতুন করে শঙ্কিত করেছে। সপ্তাহ দশদিন আগেও ওপারে গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু নতুন করে আজ রাত ৩টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত থেমে থেমে হেলিকপ্টার থেকে বর্ষণ করা গোলার শব্দে জেগে আতঙ্কে সবাই বসে দোয়া-দরুদ পড়ছিলাম। আমার বাড়ি সীমান্তের কাছে হওয়ায় ওপারে থেকে বিকট শব্দের বাড়িঘর পর্যন্ত কেঁপে উঠে। ওপারে দেখা যাচ্ছে আগুনে কিছু যেন জ্বলছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী বলেন, মিয়ানমারের ওপারে সীমান্তের কাছে নতুন করে থেমে থেমে গোলাবর্ষণের ঘটনায় হোয়াইক্যং ইউনিয়নের এপারের সীমান্তবাসীর মাঝে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। তবে ইউনিয়নের সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সর্তক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
উখিয়ার পালংখালি সীমান্ত এলাকার বাসিন্দা নুরুল বশর (৩৫) বলেন, মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও আরকান আর্মির (এএ) মাঝে চলমান সংঘাতের গোলাগুলি ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে বন্ধ থাকায় একটু স্বস্তিতে ছিলাম। কিন্তু সোমবার ভোর থেকে আবারও সীমান্ত ঘেঁষে গোলার শব্দ আতঙ্কগ্রস্ত করেছে।
পালংখালি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমার ইউনিয়নের সাথে মিয়ানমারের স্থলসীমান্ত অনেকদূর। এর আগেও কয়েক অংশের ওপারে গোলাগুলি হয়েছে। আজকেও কয়েক জায়গায় গুলির শব্দ এসেছে বলে সীমান্তের লোকজন জানিয়েছে।
ঘুমধুম জিরো পয়েন্টের রোহিঙ্গা আবুল কালাম (৩৬) বলেন, গত ১০দিন শঙ্কাহীন ঘুমিয়েছিলাম। কিন্তু সোমবার ভোর হতে না হতেই সীমান্তের ওপারে ফের গোলাগুলির আওয়াজে আবারও ঘুম হারাম। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ও আরকান আর্মি সাথে চলমান সংঘাতে মংডুর মোলভীবাজার, পুর্মা, চাকমা পাড়া, বালুখালি, কুমরখালি, চামবনা এলাকায় প্রচণ্ড গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডে মোহাম্মদ আলম বলেন, সোমবার ভোর রাত হতে সকাল ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাবর্ষণের আওয়াজ শোনা গেছে। মাঝখানে সপ্তাহ দশদিন গোলাগুলি বন্ধ ছিল। আবারও গোলাগুলির শব্দে সীমান্তের অধিবাসীরা আবারও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। শুনেছি নাইক্যংছড়ির রেজুপাড়া বিওপি এলাকায় আজ বিজিবি মহাপরিচালক আসছেন। এরই মাঝে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ফের গোলাগুলির ঘটনা আরম্ভ হওয়া দুঃখজনক।
এসব বিষয়ে জানতে পূর্বের মতো নাইক্যংছড়ির ঘুমধুম ও উখিয়া সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়ন অধিনায়ককে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। ফলে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট সেনারা অভিযানের নামে বর্বরতা শুরু করলে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গা ঢল বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। ওই সময় ৭-৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আগে থেকে বাংলাদেশে ছিল আরও ৩-৪ লাখ রোহিঙ্গা। সব মিলিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে ১২ লাখের বেশি।
Your ultimate gaming adventure starts now Lucky Cola