মোহাম্মদপুরে সাদেক এগ্রোসহ ৬০টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্রপুর খাল ভরাট করে ও সরকারি জমির উপর গড়ে ওঠা বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। অভিযানে রিকশা গ্যারেজ, রাজনৈতিক দলের স্থানীয় কার্যালয়, বাসাবাড়ি ও আলোচিত খামার সাদেক এগ্রোসহ প্রায় ৬০টি স্থাপনা ভাঙা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী এই অভিযান চলবে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সাত মসজিদ হাউজিং ও নবীনগর হাউজিং এলাকায় এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়। উচ্ছেদ অভিযানের সময় ছাগল কাণ্ডের আলোচিত সেই ১৫ লাখ টাকার ছাগলটিসহ অন্যান্য গবাদিপশু সরিয়ে নেওয়া হয়।
অভিযানকালে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, রামচন্দ্রপুর খালের দুই ধারে যারা অবৈধ দখলদার ছিল এই অভিযান তাদের বিরুদ্ধে। খালের জমি পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সিটি করপোরেশন থেকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আগেও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র এখান থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়েছেন, বহুতল ভবন ভেঙেছেন। এটা আমাদের নিয়মিত অভিযানেরই অংশ। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নয়, আমাদের অভিযান অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে’, যোগ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
তিনি আরো বলেন, ‘সাদেক এগ্রোর মালিককে ঈদের আগেও আমিরা নোটিশ দিয়েছি। অবৈধ স্থাপনা থাকলে সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। আমরা ঈদের আগে উচ্ছেদ অভিযান চালাইনি। কারণ এর ফলে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হতো। আমরা এমনটা চাইনি বলে উচ্ছেদে যাইনি। সেই নোটিশের দখলদাররা কোনো ব্যবস্থা নেননি। এদিকে অভিযানকে স্বাগত জানিয়ে সাদেক এগ্রোর স্বত্বাধিকারী, আলোচিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইমরান দাবি করেন, তিনি শুধু জমিটি ভাড়া নিয়েছেন। মাটি ভরাট করে কোনো স্থাপনা তৈরি করেননি। যার থেকে জমি ভাড়া নিয়েছেন তিনি ভরাট করেছেন। এদিকে অভিযান চলাকালে জমির মালিকের পক্ষে একজন উপস্থিত ছিলেন, তবে সাদেক এগ্রোর পক্ষে কেউ উপস্থিত ছিলেন না।
সাদেক এগ্রো ফার্মের মালিক গবাদিপশুর খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিএফএ) সভাপতি ইমরান হোসেন। রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বেড়িবাঁধ সড়কসংলগ্ন সাতমসজিদ আবাসিক এলাকায় খামারটির অবস্থান।
সরেজমিন দেখা যায়, উচ্ছেদ অভিযানের সংবাদ পেয়ে খাল ভরাট করে বসানো বস্তিঘরের বাসিন্দারা ছাউনির টিন ও বাঁশ-কাঠ খুলে ফেলতে শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১১টার পর ঐ স্থানে সিটি করপোরেশনের ভারী যন্ত্র আনা হয়। কিছুক্ষণ পর আসেন সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহে আলম, ঢাকা উত্তর সিটির অঞ্চল-৫-এর নির্বাহী কর্মকর্তা মোতাকাব্বির আহমেদসহ অন্য কর্মকর্তারা। পরে অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কাজ শুরু হয়।
শুরুতে খামারের পশ্চিম অংশ ভাঙার কাজ শুরু হয়। এর নিচে সাদেক এগ্রোর কার্যালয় ছিল। আর ওপরে টিনের ছাউনির একটি কক্ষে খামারের কর্মচারীদের থাকার কক্ষ ছিল। স্থাপনাটি ভাঙার কাজ চলাকালে দোতলার কক্ষে দুই জন অবস্থান নিয়ে উচ্ছেদে বাধা দেন। পরে পুলিশ সদস্যদের সাহায্যে তাদের সেখান থেকে সরানো হয়। পরে ঐ অংশ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় একই সঙ্গে পেছনের দিকে থাকা অবৈধ স্থাপনাগুলোও ভাঙার কাজ শুরু করেন সিটি করপোরেশনের কর্মীরা। বস্তিঘর ও রিকশার গ্যারেজের টিনগুলো আগেই সরিয়ে নেওয়ার কারণে শুধু বাঁশের কাঠামোগুলো ছিল। সেগুলো ভেঙে ফেলা হয়। এছাড়া আশে পাশের দোকানপাট, রেস্টুরেন্ট, কাঠের মিল, রাজনৈতিক দলের অফিস উচ্ছেদ করা হয়। গাবতলী-সদরঘাট বেড়িবাঁধ সড়কের পাশে মোহাম্মদপুরের নবীনগর হাউজিংয়ের ৭ নম্বর সড়কে সাদেক এগ্রোর আরেকটি খামারও উচ্ছেদ চালায় সিটি করপোরেশন। পাশে থাকা অন্যান্য অবৈধ স্থাপনাও ভেঙেছে সিটি করপোরেশন। উচ্ছেদ শেষে উন্মুক্ত নিলামে আটককৃত মালামাল ৬৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।