যশোরের খোলাডাঙ্গার লাভলু খুনে ছেলেসহ দুইজন আটক ও অস্ত্র উদ্ধার

Share Now..

যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ
যশোরের খোলাডাঙ্গার লাভলু খুনে সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ছেলেসহ দুই আসামিকে আটক করেছে যশোর জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ।এ সময় আসামিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও গুলি। একেক সময় একের রকম তথ্যদিয়ে বিভ্রান্ত করছিলেন লাভলুর ছেলে সাকিল। কিন্তু ডিবি পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে প্রকৃত রহস্য। ঘটনার দুইদিনের মাথায় ক্লুলেস এ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে ডিবি পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে মুলত ছিনতাই করা সোনার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরেই খুন হয়েছে খোলাডাঙ্গার লাভলু। এ হত্যার সাথে খোলাডাঙ্গার কামরুজ্জামান ওরফে খোড়া কামরুল সহ আরও কয়েকজন জড়িত। ডিবি পুলিশ লাভলুর ছেলেসহ দুই আসামিকে আটক করেছে। উদ্ধার করেছে অস্ত্র ও গুলি। রোববার পুলিশের পক্ষথেকে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আটককৃতরা হলেন, লাভলুর ছেলে সাকিল ও খোলাডাঙ্গা রেল কলোনীর আব্দুর রশিদের ছেলে ইসরাইল।
ডিবি পুলিশ জানিয়েছে , কামরুজ্জামান ওরফে খোড়া কামরুল ও তার সহযোগীরা কয়েকমাস আগে সোনা চোরা কারবারীদের কাছ থেকে ৬/৭ কেজি সোনা ছিনতাই করে। খোড়া কামরুলের একান্ত সহযোগী লাভলুর ছেলে সাকিল ও স্বর্নকার কবীর হাওলাদার। তাদের সাথে ছিলেন লাভলু নিজেও। ওই সোনা বিক্রি করে প্রতি বৃহস্পতিবার টাকা ভাগাভাগি করতেন তারা। ঠিক তেমনি করে গত বৃহস্পতিবারও ভাগবাটোয়ারার জন্য খোড়া কামরুল ও কবীরের ডাকে কামরুলের বাড়ীতে যান লাভলু ও তার ছেলে সাকিল । এরমাঝে লাভলুর ছেলে ঘরের বাইরে মোবাইলে গেম খেলতে যায়। এরমাঝে খোড়া কামরুল, কবীর ও রফিকুল লাভলুকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকে। এরমাঝে রাত ১২টায় হঠাৎ গুলির আওয়াজ হয়। সাকিল ঘরের ভেতরে যেয়ে দেখে লাভলু গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। বুকে গুলি লাগায় প্রচন্ড রক্তক্ষরনে ঘটনাস্থলেই লাভলুর মৃত্যু হয়। এসময় কামরুল , তার স্ত্রী, বোন ও ঘটনাস্থলে থাকা কবীর এবং রফিকুল সাকিলকে শান্তনা দেন। সাকিলকে এসময় অর্থের লোভ দেখিয়ে হত্যাটি ভিন্ন খাতে নিতে বলেন। এক পযার্য় কামরুলের স্ত্রী ও বোন লাভলুর মুখে কাপড় গুজে দেয়। এরপর কামরুলের নির্দেশে কবীর ও রফিকুল মটরসাইকেলে লাভলুর লাশ নিয়ে বেলতলা আমবাগানের মধ্যে লাভলুর লাশ গুম করে। এ সময় সাকিলকে অস্ত্র দিয়ে তা লুকিয়ে রাখতে বলে কামরুল।
এদিকে, শুক্রবার সকালে পুলিশ লাভলুর লাশ উদ্ধার করে। ক্লুলেস এ হত্যাকান্ডের বিষয়ে প্রথমেই উঠে আসে ওই এলাকার লাভলুর প্রতিপক্ষের জড়িত থাকার বিষয়টি। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হয় লাভলুর ভাই হত্যা মামলার আসামিরা এ হত্যাকান্ডে জড়িত। এর কয়েক ঘন্টার মাথায় লাভলুর স্ত্রীর পরোকিয়ার সম্পর্কের জেরে হত্যা করা হয়েছে বলে গুঞ্জন উঠে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ডিবি পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায় নিহত লাভলু হোসেনের ছেলে সাকিল হোসেন ও স্ত্রী সালমাকে ডিবি পুলিশের টিম হেফাজতে নিয়ে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। সাকিল হোসেন ঘটনা আড়াল করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য দিয়ে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। শেষমেষ সাকিল হত্যার কথা স্বীকার করে হত্যাকান্ডে জড়িতদের নাম প্রকাশ করে এবং সে হত্যার সময় ও লাশ গুম করার ঘটনাস্থলে হত্যাকারীদের সথে উপস্থিত থাকার বিষয়ে স্বীকার করে হত্যার কারনসহ বিস্তারিত বিবরন দেন। তার স্বীকারোক্তি মতে সাকিলের বাড়ীর পাশের সদু পাগলের পুকুর থেকে একটি বিদেশী পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি ভর্তি অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। একপর্যায়ে সাকিলের তথ্য মোতাবেক খোড়া কামরুলের সহযোগী ইসরাইলকে আটক করে। তার স্বীকার অনুযায়ী আরও একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। এছাড়া ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামী কামরুজ্জামান ওরফে খোড়া কামরুলকে ধরতে অভিযান চালানো হয়। হত্যার ঘটনাস্থল খোড়া কামরুলের বসতবাড়ীতে যেয়ে খোড়া কামরুল ও তার স্ত্রীকে না পেয়ে তালা ভেঙ্গে সাকিলের দেয়া তথ্যের সত্যতা পায় ডিবি পুলিশ।

এ ঘটনায় লাভলুর বাবা আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা ও ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুর রহমান পৃথক দুইটি অস্ত্র আইনে মামলা করেন। রোববার দুপুরে আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হয়।

নিহত লাভলু ওই এলাকার মধ্যেপাড়া কলোনীর আব্দুল মান্নানের ছেলে। তিনি আফিল গ্রুপে চাকরি করতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *