যশোরের মণিরামপুরে ধান ক্ষেতে কারেন্ট পোকা ও খোলপচা রোগে দিশেহারা কৃষক

Share Now..

এস আর নিরবঃ

যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় এবার চলতি আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও কারেন্ট পোকা ও খোলপচাঁ রোগের কারণে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে একাধিক সূত্রে জানাগেছে। করোনার ছোবল ও আর্থিক সংকটের সাথে যুদ্ধ করে কৃষক যখন আমন ধান রোপন থেকে ধানের শীষ পর্যন্ত পরিচর্যা করে পাকা ধান কাটার স্বপ্ন দেখচ্ছেন ঠিক তখনই ক্ষেতে কারেন্ট পোকা ও খোলপচাঁ রোগে দেশহারা এ উপজেলার কৃষক। জলাবদ্ধতা ভবদহ এলাকার ছয় ইউনিয়ন ছাড়া নয়টি ইউনিয়নে বিভিন্ন জাতের আমন ধানের চাষ হয়েছে।
কৃষি অফিসসূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে ২২৪৫০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অতিরিক্ত দু’শ হেক্টর জমিতে আমন ধান বেশী চাষ করা হচ্ছে। আমন ধানের ক্ষেতে কারেন্ট পোকা ও খোলপচাঁ রোগে কৃষকদের সচেতন ও পরার্শের লক্ষ্যে উপজেলা কৃষি অফিস নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকদের নিকট থেকে জানাগেছে, আমন ধান রোপনের পর থেকে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ফলন খুবই ভাল হবে বলে মনে হয়েছিল কিন্তু জমিতে ধানের শীষ (থোর) বের হওয়ার পর কারেন্ট পোকার আক্রমণে ধান গাছের রস চুষে ফেলছে, ফলে ধানগাছ শুকনো খড়ের মত হয়ে যাচ্ছে। এসমস্ত ক্ষেতে ধানের তুলনায় চিটাই হবে বেশী। অপরদিকে খোলপচাঁ রোগে ধানের শীষ বের হওয়ার পর শীষ সহ ধানের গোড়া পর্যন্ত পচে যাচ্ছে। ফলে ধানের ফলন ভাল হবেনা বলে আশা করছেন কৃষক।
দেবীদাসপুরের কৃষক সবুজ হোসেন বলেন, চার হেক্টর জমিতে ভারতীয় উফসি গুটিস্বর্ণ এবং ব্রি৭৫, ব্রি ৮৭, ৪৮ উফসি জাতের ধানের চাষ করেছি, কিন্তু কারেন্ট পোকা ও খোলপচাঁ রোগে অর্ধেক জমির ধান শেষ হয়ে গেছে। অনেক কিছু স্প্রে করেছি কিন্তু কোন কিছুতে কাজ হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, বারো থেকে চব্বিশ ঘন্টায় কারেন্ট পোকা ধানের শীষ চুষে নষ্ট করে ফেলেছে। উপজেলার মকমতলা খানপুর গ্রামের কৃষক গোলাম রসুল বলেন, করোনা রোগে একদিকে অভাব তার পরেও খুব কষ্ট করে আমনের চাষ করেছিলাম কিন্তু কারেন্ট পোকার আক্রমণে সব শেষ। এখন ধান ছাড়া বিচালীই হবে। উপজেলার খেদাপাড়া ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের কৃষক নিরঞ্জন দাস জানান, এবার আমন ধানে যে খোলপচা ও কারেন্ট পোকার দাঁপট তাতে কাঁচি নিয়ে মাঠে যাওয়া লাগবেনা।
জানতে চাইলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাসিনা বেগম বলেন, আমনের ক্ষেত পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এমিস্টার টপ, ফলিকুর, এমিস্কোর, নাটিভো, কমবি-টু ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যেতে পারে। কারেন্ট পোকা দমনে প্লেনাম, কসিডর, পাইরাজিন ব্যবহার করা যায়। জমিতে জমা অতিরিক্ত পানি সরিয়ে দিলেও কারেন্ট পোক দমনে সহায়তা হতে পারে। চাষিরা ধানের গাছসহ বিভিন্ন বাজারের কীটনাশক বিক্রেতার নিকট নিয়ে যাচ্ছে প্রকৃত ঔষধ নিরূপনে জন্য।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, আমনের ক্ষেত খোলপচাঁরোগ ও কারেন্ট পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য আলোর ফাঁদ তৈরী সহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদে লিফলেট বিতরণ ও মসজিদে-মসজিদে কৃষকদের সচেতনমূলক পরামর্শের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া, উপজেলায় সাতচল্লিশ জন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও কৃষকদের আমন ধানের ক্ষেত ক্ষতির হাত থেকে রক্ষায় নানা পরামর্শও দিয়ে যাচ্ছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *