যশোরের মনিরামপুরে গর্ভধারণের চিকিৎসা নিতে গিয়ে গৃহবধূ ধর্ষিত, গ্রেফতার-২
যশোর জেলা প্রতিনিধিঃ
যশোরের মণিরামপুরে এক তরুণী গৃহবধূকে (২০) সন্তান না হওয়ায় চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে ডেকে এনে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এক পল্লি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে।
এঅভিযোগে গৃহবধূর ভাই বাদী হয়ে শনিবার (৯ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে মণিরামপুর থানায় দুইজনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করে রোববার (১০ অক্টোবর) দুপুরে আদালতে হাজির করে।
আসামিরা হলেন, উপজেলার কোদলাপাড়া গ্রামের ওয়াদুদ মিয়ার ছেলে পল্লিচিকিৎসক বিল্লাল হোসেন (৫০) ও তার সহযোগী বাগডোব গ্রামের হজরত আলীর ছেলে ইজিবাইক চালক দ্বীন মোহাম্মদ দিলু (৪০)।
স্থানীয় রোহিতা বাজারে ফার্মেসি রয়েছে বিল্লালের। সেখানে তিনি ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি রোগী দেখেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) জিয়াউল হক এজাহারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ৭-৮ মাস আগে যশোর সদর উপজেলার পুলেরহাট এলাকায় বিয়ে হয় ওই তরুণীর। এক সপ্তাহ আগে গত সোমবার (৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে পুলেরহাট থেকে দ্বীন মোহাম্মদ দিলুর ইজিবাইকে ওই তরুণীকে তুলে দেন তার স্বামী। ইজিবাইকে চড়ে কোদলাপাড়া এলাকায় বাপের বাড়িতে আসছিলেন তিনি।একপর্যায়ে দিলু জানতে পারেন ওই তরুণীর সন্তান হয় না। তখন ‘ভালো চিকিৎসার’ কথা বলে রোহিতা বাজারে বিল্লালের কাছে তাকে (গৃহবধূকে) আনেন দিলু। এরপর কৌশলে বিল্লাল ওই নারীকে বাজারের পাশে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে স্ত্রী-সন্তান না থাকায় সেখানে ঘরে দুই-তিন ঘণ্টা আটকে রেখে ওই নারীকে ধর্ষণ করেন চিকিৎসক বিল্লাল। আলামত নষ্ট করতে বাথরুমে নিয়ে জোরপূর্বক ওই নারীকে গোসল করতেও বাধ্য করেন তিনি।
জিয়াউল হক বলেন, ‘ঘটনার সময় ইজিবাইক চালক বাড়ির বাইরে অবস্থান করছিলেন। ওই নারী চিৎকার করেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি বলে আমাদেরকে জানিয়েছেন।’
পুলিশ বলছে, এক সপ্তাহ আগের ঘটনা হলেও লজ্জায় ও সংসার ভাঙার ভয়ে বিষয়টি কাউকে বলতে পারেননি ওই নারী। ইজিবাইক চালক দিলুকে বিল্লাল একাজে চাহিদামতো টাকা না দেওয়ায় তিনি (চালক) ঘটনাটি ফাঁস করে দেন। পরে চাপাচাপির এক পর্যায়ে গতকাল শনিবার ওই তরুণী তার ভাইয়ের কাছে ঘটনা জানান।
এদিকে, স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হলে শনিবার রাতে বিষয়টি চাপা দিতে দুই পক্ষকে নিয়ে রোহিতা বাজারে একটি ভবনের ছাদে সালিশ বসে। খেদাপাড়া ক্যাম্প পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে সালিশ বসান কোদলাপাড়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলামসহ স্থানীয় পর্যায়ের ক্ষমতাধর কয়েকজন। সালিশে পক্ষ-বিপক্ষ হওয়ায় বিষয়টি আরও জানাজানি হয়। এতে সালিশকারীদের উদ্দেশ্য পণ্ড হয়ে যায়। এরপর রাতেই ওই নারীকে নিয়ে থানায় আসেন স্বজনরা। একইসময়ে অভিযুক্ত দুইজনকে পিটিয়ে খেদাপাড়া ক্যাম্প পুলিশের হাতে তুলে দেন ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। রাতেই পুলিশ তাদের মণিরামপুর হাসপাতালে ভর্তি করেন।
জানতে চাইলে রোহিতা ইউনিয়নের কোদলাপাড়া ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম ‘বিষয়টি নিরসনের স্বার্থে’ দুই পক্ষকে নিয়ে বসার কথা স্বীকার করেন।
এ বিষয়ে,খেদাপাড়া ক্যাম্পের ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) গোলাম রসুল বলেন, রোহিতা বাজারে লোকসমাগমের খবর পেয়ে শনিবার সন্ধ্যার পর ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তখন ওই নারীর কাছে ঘটনা শুনেছি। পরে থানায় ওসি মহোদয়কে ঘটনা জানিয়ে ভিকটিমকে থানায় পাঠাই।
মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর-ই-আলম সিদ্দীকি ধর্ষণ মামলা রুজুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওসি বলেন, ‘অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছি। ভিকটিমের জবানবন্দি রেকর্ড ও ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’