যশোরের মনিরামপুরে বোরো আবাদের স্বপ্ন ভেঙে দিলো অসময়ের বৃষ্টি

Share Now..

এস আর নিরব যশোরঃ
যশোরের মণিরামপুরে হরিদাসকাটি ইউনিয়নের বিল বোকড়ের জলাবদ্ধ ৬০০ বিঘা জমি থেকে পানি সরিয়ে বোরো রোপণের স্বপ্ন দেখছিলেন ওই অঞ্চলের ২০০-২৫০ জন কৃষক। সে উদ্দেশে গেলো ২৭ দিন কৃষকরা নিজেদের খরচে সেচ পাম্প বসিয়ে পানি সরানোর কাজ করেছেন। ২৭ দিনে তারা যতোটুকু পানি সরিয়েছেন শুক্রবার দিন ও রাতের বৃষ্টিতে বিলে সমপরিমাণ পানি বেড়ে গেছে। বৃষ্টির পর হতাশ হয়ে কৃষকরা পানি সেচা বন্ধ করে দিয়েছেন। ফলে এ বছর বোরো চাষের স্বপ্ন ভেঙেছে হরিদাসকাটি ইউনিয়নের বিল বোকড়ের শত শত ক্ষেত মালিকের। এক সময় বিল বোকড়ে কৃষক সোনা ফলাতেন।

নেবুগাতী, কুচলিয়া, খড়িডাঙ্গা, পাঁচকাটিয়া এলাকার কৃষকদের কর্মতৎপরতায় মেতে থাকতো মাঠ। বর্ষা মৌসুমে এ বিলে জমা পানি ধীরেধীরে মুক্তেশ্বরী হয়ে বেরিয়ে যেতো। ভবদহের জলাবদ্ধতার কারণে গেলো কয়েক বছর বিলে পানি আটকে থাকায় আমন চাষ হয় না। এবারো আমন ফলাতে পারেনি কৃষক। নিজেরের উদ্যোগে পানি সেচে এ বিলের কৃষকরা বোরো আবাদ করছেন। এবারো চাষের উদ্দেশে বিলে জমে থাকা ৩-৬ ফুট পানি সরানোর জন্য দুটি অংশে ভাগ হয়ে ১৬টি সেচ পাম্প বসিয়ে গত ৯ জানুয়ারি থেকে পানি সরানোর কাজ চলছিলো। দিন রাত পানি সেচে মুক্তেশ্বরী নদীর উত্তর ও পূর্ব পাশে ফেলার কাজ চলে। ২৫-২৬ জন কৃষকের সমন্বয়ে গঠিত দুটি কমিটি সেচ কাজের তদারকি করছিলেন।
কিন্তু গেলো শুক্রবারের বৃষ্টি স্বপ্ন ভেঙে দেয় এ বিলের কৃষকদের। একদিনের ২-৩ ঘন্টার বৃষ্টিতে ব্যর্থ হয় কৃষকদের সব প্রচেষ্টা। বিলে অবস্থিত মিহির বালার ঘেরে বাঁধ দিয়ে চলছিলো সেচ কাজ।
বিঘা প্রতি আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার টাকা দিয়ে কৃষক নিজেদের উদ্যোগে পানি সরাচ্ছিলেন। বিলের পানি প্রায় সরানো শেষ পর্যায়ে ছিলো। আর ৫-৭ দিন সেচলে বোরো রোপণের উপযোগী হয়ে যেতো বিল। এরইমধ্যে শুক্রবারের ভারি বৃষ্টিতে ঘেরের বাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়ে যায় বিল। পানি জমে আগের অবস্থা সৃষ্টি হয়।

সেচ কমিটির সভাপতি অরবিন্দু মল্লিক বলেন, পাঁচকাটিয়া ও নেবুগাতী মৌজায় ৬০০ বিঘা জমির পানি সরানোর কাজে আমরা ১৬টি পাম্প বসাই। নেবুগাতী অংশের ৩৫০ বিঘার পানির সরাতে আটটি ও পাঁচকাটিয়া অংশে ২৫০ বিঘার পানি সরাতে আটটি পাম্প বসিয়ে কাজ চলছিলো। ৯ জানুয়ারি থেকে সেচের কাজ শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি রাত পর্যন্ত মেশিন চলে। এরই মধ্যে শুক্রবার সকালে বৃষ্টি নামে।

তিনি বলেন, বৃষ্টির মধ্যে মেশিন চলছিলো। আর ৫-৬ দিন সেচতে পারলে পানি সরে যেতো। শুক্রবারের ভারি বৃষ্টিতে বিকালে মিহিরের ঘেরের বাঁধ ভেঙে বিলে ঢুকে পড়ে। তখন মনের কষ্টে রাত ১১টায় পাম্প বন্ধ করে দিই।
সেচ কমিটির এ নেতা বলেন, আমাদের নেবুগাতী অংশে তেল ও মেশিন ভাড়া বাবদ পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়ে গেছে। কৃষকরা যা দিয়েছেন তারপরও আমাদের এক লাখ ৮০ হাজার টাকা ঘাটতি। এখন কমিটির সদস্যদের সবাইকে ১০ হাজার টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
অরবিন্দু মল্লিক বলেন, আপাতত পানি সেচ বন্ধ আছে। নতুন করে কিছু কৃষক উদ্যোগ নিতে চাচ্ছেন। তারা কতটুকু পারবেন জানি না। তবে এবার বিলে ধান হচ্ছে না।

নেবুগাতী গ্রামের কৃষক স্বপন রায় বলেন, বিল বোকড়ে আমার তিন বিঘা জমি। বিঘা প্রতি তিন হাজার করে খরচ দিয়ে পানি সরানোর কাজ চলছিলো। অর্ধেক টাকা শোধ করিলাম। শুক্রবারের বৃষ্টিতে বিল আবার ভেসে গেছে।গেলো বার পানি সেচে ইরি ধান করিলাম। এবার আর হচ্ছে না। সারা বছর কিনে খেতে হবে।

হরিদাসকাটি ইউপির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রনব বিশ্বাস বলেন, ভবদহের জলাবদ্ধতায় হরিদাসকাটি এলাকায় গত বারের মতো এবারো সিংহভাগ বোরো ধানের ফসল হওয়ার সম্ভবনা কম। যতোটুকু হবে তা কৃষকদের নিজেদের সেচ খরচ করে।

বিল বোকড়ে কৃষকরা কমিটি করে সেচ মেশিন লাগিয়েছেন। মাঠটি প্রায় শুকিয়ে গিছিলো। শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত টানা দুই ঘন্টা বৃষ্টি হওয়ার কারণে অনেকটা জল বেড়ে গিছে।

একজন প্রতিনিধি বলেন- প্রতি বছর সেচ খরচ বাদে সার, চাষ, রোপণ, কীটনাশক আবার সেচ দিয়ে আবাদ ফলানো, ধান কেটে বাড়িতে আনা সব মিলিয়ে যা খরচ হয় তাতে দেখা যায় বিঘা প্রতি ৩-৪ হাজার টাকা লোকসান হয়। তবুও থেমে থাকে না দরিদ্র কৃষকরা। ঘরে সারা বছরের দুমুঠো খাবার জোগাড়ের জন্য তাদের কতো কষ্ট। এবার শেষ মুহূর্তে অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় বোরোর আশা ছেড়ে দিয়েছেন কৃষকরা।

মেম্বার প্রনব বলেন- ভবদহ জলাবদ্ধতা এলাকায় যতোদিন পর্যন্ত নদী খনন, টি আর এম, আমডাঙ্গা খাল সংষ্কারের নিরসন না হবে ততোদিন এ এলাকার কৃষকদের মুখে হাসি ফুঁটবে না।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আবুল হাসান বলেন, হরিদাসকাটি ও কুলটিয়া এলাকায় পানি এবার অনেক বেশি। জলাবদ্ধতার জন্য অন্যবার ৪০০ হেক্টর জমিতে বোরো হতো না। পানি বেশি থাকায় এবার এসব অঞ্চলে বোরোর আবাদ আরো কমবে।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পরেশনের (বিএডিসি) সহকারী পরিচালক ও মনিরামপুর-কেশবপুর অঞ্চলের সেচ কমিটির সদস্য সচিব সোহেল রানা বলেন, পানি নিষ্কাশনে আমরা একটি প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছি। আবেদনটি কৃষি মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। সেটা পাস হলে এ অঞ্চলের কৃষকদের কষ্ট থাকবে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *